॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন/হেলাল মাহমুদ॥ রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার গান্ধিমারা দুর্গাপুর এলাকায় বেপরোয়া গতির দুইটি যাত্রীবাহি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৫জন নিহত এবং কমপক্ষে ৫০জন বাসযাত্রী আহত হয়েছেন।
গতকাল ১৮ই ডিসেম্বর বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে ২জন ঘটনাস্থলেই মারা যায়। ২জন রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এবং অপরজন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায়।
জানা গেছে, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা লালন পরিবহনের একটি এসি বাস(ঢাকা-মেট্রো-স-১১-০২৪১) দৌলতদিয়া ঘাট হয়ে কুষ্টিয়ার দিকে যাওয়ার সময় গান্ধিমারা এলাকায় পৌঁছালে কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা দৌলতদিয়াগামী আরিফ এক্সক্লুসিভ নামের একটি লোকাল বাসের (ঢাকা-মেট্রো-ব-১৪-০৪৭৬) সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। তখন স্থানীয়দের পাশাপাশি রাজবাড়ী ফায়ার সার্ভিস ও কালুখালী থানার পুলিশ হতাহতদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে আহত ২০জনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশংকাজনক। আহত অন্যরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আলম সরদার(৪৫) বলেন, আমি ও আমার শ্বশুর ফরমান মন্ডল লালন পরিবহনের বাসে পাশাপাশি সিটে বসে কুষ্টিয়া যাচ্ছিলাম। গান্ধিমারা এলাকায় বিপরীত দিকের আরেকটি বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে আমার শ্বশুর ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আমিও গুরুতর আহত হই। পরে স্থানীয় লোকজন আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে এনে ভর্তি করে।
হাসপাতালের জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক মানি মন্ডল বলেন, নিহত ৫জনের লাশই বর্তমানে হাসপাতালে রয়েছে। তাদের ৪জনের পরিচয় পাওয়া গেছে ও ১জনকে এখনো শনাক্ত করা যায়নি। আহতদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
নিহত ৫জনের মধ্যে ৪জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলো ঃ কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার মাঝগ্রামের ফরমান মন্ডল(৬০), ফরিদপুরের গোপালপুর এলাকার মিন্টু(২৭), রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার মেঘনা গ্রামের জামান শেখের ছেলে মিজান শেখ(২৫) এবং কুষ্টিয়ার বশিগ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে মিলন(২৭)।
খবর পেয়ে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসকের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোহাম্মদ আশেক হাসান, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক মোঃ বাকাহীদ হোসেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান এবং এনডিসি মোঃ রফিকুল ইসলাম সদর হাসপাতালে গিয়ে আহতদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোহাম্মদ আশেক হাসান জানান, সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের জন্য সরকারী সাপ্লাইয়ের বাইরের ওষুধ প্রয়োজন হলে তাদেরকে হাসপাতালের সমাজসেবা অফিস থেকে ওষুধ দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়াও হাসপাতালে থাকা আহতদের জন্য ৫০টি কম্বল দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি নিহতদের দাফন-কাফন, লাশ পরিবহন এবং আহতদের কোন প্রকার আর্থিক সহযোগিতা বা অন্য কোন সহযোগিতার প্রয়োজন হলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
এ খবর লেখা পর্যন্ত দুর্ঘটনা কবলিত বাস দুটির চালক গ্রেফতার হয়নি। তবে পাংশা হাইওয়ে থানার পুলিশ বাস দুইটি জব্দ করেছে। এ খবর লেখা পর্যন্ত কালুখালী থানায় মামলা দায়ের হয়নি।