॥স্টাফ রিপোর্টার॥ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ৮ই ডিসেম্বর সকালে কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক ও কমিটির সভাপতি দিলসাদ বেগমের সভাপতিত্বে সভায় কমিটির উপদেষ্টা রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন ও অপরাধ) মোঃ সালাহ উদ্দিন, রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মহাম্মদ আলী চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ ইমদাদুল হক বিশ্বাস, গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান চৌধুরী আসাদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান, গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই’র উপ-পরিচালক মোঃ শরিফুল ইসলাম, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী(চঃ দাঃ) কে.বি.এম সাদ্দাম হোসেন, জেলা জাসদের(ইনু) সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ নিজাম মন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হেদায়েত আলী সোহ্রাব, জেলা জাসদের(আম্বিয়া) সভাপতি স্বপন কুমার দাস, জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের(বাস মালিক সমিতি) সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হাসান, রাজবাড়ী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছমির উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মাহফুজার রহমান সরকার, রাজবাড়ী সরকারী আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর দিলীপ কুমার কর, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ এবং কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় কমিটির উপদেষ্টা রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী বলেন, ডিসেম্বর মাস আমাদের বিজয়ের মাস। এ মাসে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম বলেই আজকে আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। আজকে জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক মিটিংয়ে জেলার আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনার রয়েছে। আমি মনে করি এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আমাদের সকলের জানা প্রয়োজন। আমার যাতায়াতের পথে অনেক সময় দেখেছি দৌলতদিয়া ফেরী ঘাট অনেক সময় ফাঁকা থাকলেও রাজবাড়ী-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় আহলাদীপুর হাইওয়ে থানার সামনে সারি সারি ট্রাক দাঁড় করিয়ে পুলিশের লোকজন চাঁদা নিচ্ছে। সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে হাইওয়ে দিয়ে চলাচলকারী পরিবহন থেকে শ্রমিক সংগঠনের নামে চাঁদা আদায় না করার জন্য বারবার আহ্বান জানানো হলেও চাঁদা তোলা হচ্ছে, যা খুবই দুঃখজনক। সড়ক থেকে এসব চাঁদাবাজী বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, আপনারা অনেকই রাজবাড়ীর পৌরসভার মেয়র ও গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্যে জানতে পেরেছেন গতকাল আমরা শহরের পান্না চত্বর এলাকার পালকি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে আমাদের দলীয় একটি প্রেস কনফারেন্স করেছি। যখন আমরা ওই সাংবাদিক সম্মেলন করতে যাই তখন কিছু সংখ্যক সন্ত্রাসী আমাদের সাথে খারাপ আচরণসহ দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের সাথেও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটায়। আমি দীর্ঘদিন সংসদ সদস্য থাকাকালে এমন উচ্ছৃঙ্খল ঘটনা দেখি নাই। বিষয়টি আমি পুলিশ সুপারকে জানানোর পর তিনি আমাকে বলেছেন উপরের সিদ্ধান্তের পর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবেন। আমার কথা যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, সে যদি আমার দলের লোকও হয় তাহলেও যেন তাকে কোন প্রকার ছাড় দেওয়া না হয়। তাদের অনেকে রাজবাড়ীর চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং তাদের নামে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। আমি মনে করি রাজবাড়ী জেলার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিবে।
সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী আরো বলেন, বর্তমানে রাজবাড়ী সদরের বরাট ও দাদশী ইউনিয়নে সর্বহারাদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় ওই এলাকার সাধারণ মানুষ আতংকে রয়েছে। জেলার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে তাদের(সর্বহারা) বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, রাজবাড়ী সদর উপজেলায় ধাওয়াপাড়া ঘাটে সিলেটের টিলার মতো বিশাল বিশাল বালুর চাতাল রয়েছে, যেগুলো শহর রক্ষা বেড়িবাঁধের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির। আমি জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করবো ওই সকল চাতাল মালিকদের লিস্ট করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। রাজবাড়ী জেলা পুলিশ মাদকসহ জেলার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অনেক ভালো কাজ করে। এই ভালো কাজের জন্য আমি পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ জানাই।
তিনি আরো বলেন, শহরের মাইছ্যাঘাটা এলাকায় কিছু সন্ত্রাসী রয়েছে, যারা অনেকগুলো করে মামলার আসামী। এলাকার শান্তির স্বার্থে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বন্ধ করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা বলে আশা করি। এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে জেলার আইন-শৃঙ্খলা ও উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।
সভায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন ও অপরাধ) মোঃ সালাহ উদ্দিন তার বক্তব্যে বলেন, রাজবাড়ী জেলা পুলিশ জেলার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাসহ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে কোন সন্ত্রাসীর সাথে কোন আপোষ নাই। সন্ত্রাসী যেই হোক জেলা পুলিশ তাকে আইনের আওতায় আনতে বদ্ধপরিকর। রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য মহোদয় হাইওয়ে পুলিশের মহাসড়কে টাকা নেওয়ার যে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন আমি ব্যক্তিগতভাবে এ বিষয়টি নিয়ে ফরিদপুরের হাইওয়ে পুলিশ সুপারের সাথে কথা বলবো। গতকাল রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্যের সাংবাদিক সম্মেলনে যে ঘটনা ঘটেছে সেখানে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতির কারণে অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে। যারা ওই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদেরকে আমি সঙ্গে সঙ্গে ফোনে বলে দিয়েছিলাম তারা যদি এই ধরনের কাজ থেকে বিরত না হয় তবে সংসদ সদস্যের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ যে কোন অ্যাকশনে যেতে বাধ্য হবে। এছাড়াও আমি সঙ্গে সঙ্গে ডিবিসহ পুলিশের আরো সদস্যদের ঘটনাস্থলে পাঠাই এবং যারা ওই ধরনের কর্মকান্ড করছিল তারা চলে যায়। ওই ঘটনায় পুলিশের কোন সদস্য অ্যাসল্ট (লাঞ্ছিত) হয় নাই। তবে যারা ওই কর্মকান্ডে জড়িত ছিল তাদের সাথে পুলিশের ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। এ ব্যাপারে যদি কোন লিখিত অভিযোগ বা আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসে তবে পুলিশ এক মিনিটও দেরী করবে না যারা ওই ঘটনার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। ওই ঘাটনার বিষয়টি সম্পর্কে পুলিশ সুপার অবগত আছেন এবং তিনি রাজবাড়ীতে এসে ব্যবস্থা নিবেন। এছাড়াও রাজবাড়ীর বরাট ও দাদশী ইউনিয়নে সর্বহারা পার্টির আনোগোনাসহ যে সমস্ত বিষয় আজকে আলোচনায় এসেছে সে সমস্ত বিষয়ে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, আজকে যে মাসে আমরা জেলা আইন-শৃঙ্খলার কমিটির সভায় মিলিত হয়েছি সেই মাসটি আমাদের মহান বিজয়ের মাস। এই মাসে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের মহান স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। এই মাসের তাৎপর্য আমাদের কাছে অনেক বেশী। বর্তমানে জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা ভালো আছে। আমি আশা করি আমাদের বিজয়ের মাসেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার সাথে নিয়োজিত জেলা পুলিশসহ সকলের সহযোগিতায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো রাখতে পারবো। এই বিজয়ের মাসে মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠান রয়েছে। পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বেশী নজর দিতে হবে।
জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম আরো বলেন, টিসিবির ডিলারদের নিয়ে অভিযোগসহ সভায় যে সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সভায় যে সমস্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় সেই সকল বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
এছাড়াও সভায় রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের বর্তমান অবস্থা, মাদক, সন্ত্রাস, ইভটিজিং, বাল্য বিবাহ, পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধিসহ আইন-শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
সভায় বিআরটিএ’র এক প্রজ্ঞাপন উল্লেখ করে জানানো হয়, এখন থেকে সারা দেশের বিআরটিএ’র যে কোন সার্কেলের রেজিস্ট্রেশন যে কোন সার্কেল থেকে করা যাবে। এতে মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে।