॥হেলাল মাহমুদ॥ রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন স্থানে অর্ধ ১শতাধিক অবৈধ রেল ক্রসিং রয়েছে। অননুমোদিত এসব রেল ক্রসিং-এ অহরহ দুর্ঘটনা ঘটলেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না।
স্থানীয়দের দাবীর পাশাপাশি বিভিন্ন সময় এ বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পত্র দিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হলেও কোন কাজ হয়নি।
চলমান রেলওয়ে সেবা সপ্তাহ-২০১৯ উপলক্ষে রেলওয়ের দক্ষিণাঞ্চলের(পাকশী) উর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা গত ৪ঠা ডিসেম্বর দুপুরে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট রেলস্টেশন পরিদর্শনে আসেন।
পরিদর্শন কার্যক্রম শেষে গতকাল ৫ই ডিসেম্বর বিকালে তারা ট্রলিতে(রেল লাইনের উপর দিয়ে চলাচলকারী মোটর চালিত ছোট গাড়ী) করে ফুরফুরে মেজাজে রাজশাহীতে ফিরে যাচ্ছিলেন। বিকাল ৪টার দিকে দ্রুতগতির ট্রলিটি রাজবাড়ী সদর উপজেলার বেলগাছী এলাকার অননুমোদিত একটি রেল ক্রসিং এলাকায় পৌঁছালে বেপরোয়া একটি মোটর সাইকেল রেল লাইন পার হওয়ার সময় আড়াআড়িভাবে ট্রলিটির সাথে সংঘর্ষ হয়। এতে ট্রলিতে থাকা পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ডিভিশনাল কমার্শিয়াল অফিসার আনোয়ার হোসেন(৪৫), অ্যাডিশনাল সিএসটি মিজানুর রহমান(৪২) এবং সিনিয়র সাব-অ্যাসিসটেন্ট ইঞ্জিনিয়ার (ইলেকট্রিক্যাল) সরোয়ার হোসেন(৪০) গুরুতর আহত হন। দুর্ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন তাদেরকে উদ্ধার করে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে মিজানুর রহমান ও সরোয়ার হোসেনকে ভর্তি করা হয় এবং অবস্থা খারাপ হওয়ায় আনোয়ার হোসেনকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
আহত মিজানুর রহমান বলেন, আমরা দৌলতদিয়া ঘাট রেলস্টেশন পরিদর্শন শেষে রাজশাহীতে ফিরছিলাম। রাজবাড়ী সদরের বেলগাছী এলাকায় পৌঁছালে অননুমোদিত একটি রেলগেটে বেপরোয়াভাবে একটি মোটর সাইকেল আমাদের ট্রলিকে আঘাত করলে ট্রলি উল্টে আমরা আহত হই। পরে স্থানীয় লোকজন আমাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক আবুল কালাম আজাদ জানান, আহত সরোয়ার হোসেনের পায়ের অবস্থা খুব খারাপ হওয়ায় তাকে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে(পঙ্গু হাসপাতাল) রেফার করা হয়েছে। সেখানে না পাঠালে তার পা কেটে ফেলার মতো অবস্থা ও জীবন বিপন্ন হতো। অন্য দু’জনকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে রেলওয়ের রাজবাড়ী কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী(পথ) জিহাদ হোসেন বলেন, দুর্ঘটনা ঘটানো মোটর সাইকেল চালকের নাম-ঠিকানা সংগ্রহের চেষ্টা ও তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
তিনি আরও বলেন, রেলওয়ের কুষ্টিয়া অঞ্চলের মধ্যে ২৮টি বৈধ রেল ক্রসিং রয়েছে। এর বাইরে কর্তৃপক্ষের অননুমোদিত অসংখ্য অবৈধ রেল ক্রসিং রয়েছে, যেগুলো অরক্ষিত ও ঝুঁকিপূর্ণ।
উল্লেখ্য, রাজবাড়ী জেলায় তিনটি রেলপথে ৮৮টি রেল ক্রসিংয়ের মধ্যে বেশিরভাগ গেটে ব্যারিয়ার ও গেটম্যান নেই। যে কারণে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয় যানবাহন ও পথচারীরা। মাঝে মধ্যে ঘটে দুর্ঘটনাও।
রাজবাড়ী রেলওয়ে একটি সূত্র জানায়, রাজবাড়ীতে মোট রেলপথ ৯০ কিলোমিটার। এর মধ্যে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট থেকে মাছপাড়া পর্যন্ত ৫৩ কিঃ মিঃ, পাঁচুরিয়া থেকে বসন্তপুর পর্যন্ত ১২ কিঃ মিঃ এবং কালুখালী থেকে নলিয়া গ্রাম পর্যন্ত ২৫ ঃি মিঃ রেলপথ রয়েছে। এসব রেলপথে তিন ধরনের ক্রসিং রয়েছে। কিছু ক্রসিংয়ে ব্যারিয়ার ও গেটম্যান রয়েছে, কোনো টায় ব্যারিয়ার নেই, কিন্তু গেটম্যান রয়েছে এবং কিছু ক্রসিংয়ে ব্যারিয়ার বা গেটম্যান কোনোটি নেই। যেসব গেটে ব্যারিয়ার ও গেটম্যান কোনোটি নেই সেখানে পথচারীরা নিজ দায়িত্বে রাস্তায় রেলক্রসিং পারাপার হয়।