রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৫ অপরাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

চুরির টাকায় ভোগ-বিলাসে জীবন কাটানো সরকার সহ্য করবে না — প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

  • আপডেট সময় রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৯

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ অবৈধ পথে অর্থ উপার্জনকে একটি রোগ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, চুরির টাকা দিয়ে ভোগ-বিলাসে জীবন কাটানো সরকার সহ্য করবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে ভোগ-বিলাসি জীবন-যাপন করবেন, আর কেউ সৎ ভাবে, সাদাসিধে জীবন-যাপন করতে গিয়ে তাঁর জীবনটাকে নিয়ে কষ্ট পাবেন, এটা হতে পারে না।’
শেখ হাসিনা গতকাল ৩০শে নভেম্বর দুুপুরে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে বিরানী-পোলাও খাওয়া আর ব্রান্ডের জিনিস পরার চেয়ে সাদাসিধে জীবন যাপন করা অনেক সম্মানের। অন্তত, এটা অবৈধ, চোরা টাকা এই কথাটা সারাক্ষণ মনে আসবে না। শান্তিতে ঘুমানোও যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আসলে এই টাকা বানানোটা একটা রোগ, এটাও একটা অসুস্থতা। একবার টাকা বানাতে থাকলে তার শুধু বানাতেই ইচ্ছে করে। কিন্তু, ঐ টাকার ফলে তার ছেলে-মেয়ে বিপথে যাবে, পড়াশোনা নষ্ট হবে, তারা মাদকাসক্ত হবে, সেটা দেখারও সময় নাই। টাকার পেছনে ছুটছেতো ছুটছেই। আর নিজের পরিবার ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে।’
‘এই ধরনের একটা সামাজিক অবস্থা আমরা চাই না,’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই সৎ পথে কামাই করে সম্মানের সাথে চলবে। আর চোরা টাকা, দুর্নীতির টাকা, অবৈধ পথে অর্জিত টাকার বিলাসিতাকারিকে নিয়ে মানুষ মুখে যাই বলুক পেছনে একটা গালি দেবে। এই গালিটা শোনা না গেলেও গালিটা কিন্তু খেতে হয় সেকথাটা মনে রাখতে হবে।’
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে সম্মেলনে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম রহমতউল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শাহে আলম মুরাদ বক্তৃতা করেন।
সম্মেলনে মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের দপ্তর সম্পাদক এম সাইফুল্লাহ সাইফুল এবং গোলাম রব্বানী বাবলু শোক প্রস্তাব পাঠ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চারনেতা, মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবসহ ’৭৫ এর ১৫ই আগস্টের সকল শহীদ, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার শহীদ, দেশ মাতৃকার সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আত্মাহুতি দানকারী এবং আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের মৃত্যুবরণকারীদের স্মরণে সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিটি নীরবতা পালন করেন।
এরআগে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পাশাপাশি পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং রাজধানীর বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড এবং ইউনিটের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ কাউন্সিলর ও ডেলিগেটসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালের ২৭শে ডিসেম্বর। তবে, ২০১৫ সালে ঢাকা মহানগর দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ার পর ২০১৬ সালের ১০ই এপ্রিল কমিটি ঘোষিত হয় ।
বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে(কাউন্সিল) ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্বের নাম ঘোষণা হয়।
সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্ব শুরুর আগেই আগতদের ভীড়ে ভেন্যু সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাপিয়ে রমনা পার্ক, হাইকোর্ট, টিএসসিসহ সমগ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। বিভিন্ন রংয়ের পোষাক, মাথায় রিবন, হাতে ব্যানার- প্লাকার্ড নিয়ে খন্ড খন্ড মিছিলে আসা নেতা-কর্মীরা মুহুর্মুহু শ্লোগানে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে তোলে।
আগামী ২০ ও ২১শে ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলটির সব শাখার সম্মেলন করে কমিটি হালনাগাদ করার পরই কেন্দ্রের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর অংশ হিসেবে দলটির সহযোগী সংগঠন যুবলীগের সম্মেলন ২৩শে নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের ১৬ই নভেম্বর, ৬ই নভেম্বর কৃষক লীগের এবং ৯ই নভেম্বর শ্রমিক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমরা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছি। এটা অব্যাহত থাকবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধেও অভিযান চলছে, এটা অব্যাহত থাকবে। কারণ, জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ জনগণের কল্যাণে ব্যয় হবে, কারো ভোগ বিলাসের জন্য নয়।
বঙ্গবন্ধু মন্ত্রীত্ব ত্যাগ করে দল গোছানোর জন্য দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ গ্রহণ করেছিলেন উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘দেশের মানুষের জন্য সবধরণের আত্মত্যাগের জন্য তিনি সব সময় প্রস্তুত ছিলেন। কাজেই, তাঁরই আদর্শেও সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে সেই আদর্শ বুকে ধারণ করে জনগণের জন্য কতটুকু আমরা করতে পারলাম, জনগণকে কি দিতে পারলাম, কিসে জনগণের কল্যাণ হবে সেই চিন্তা করতে হবে।’
মানুষ কিভাবে বিএনপি’র অত্যাচার-নির্যাতনের কথা ভুলে যায় সে প্রসঙ্গ উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় তারেক রহমান সাজাপ্রাপ্ত, এতিমের টাকা আত্মসাতের জন্য খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে আর সেই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে সে এখন কারাগারে। এটা কোন রাজনৈতিক মামলা নয়, সরাসরি দুর্নীতির মামলা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ তার বিরুদ্ধে (খালেদা জিয়া) কোন মামলা করেনি। যদিও এটাকে অনেকে রাজনৈতিক রঙ দিতে চান। অথচ ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়া আমার বিরুদ্ধে ১২টি মামলা দিয়েছিল।’
তিনি বলেন, আহসান উল্লাহ মাষ্টার এবং শাহ এএমএস কিবরিয়াকে হত্যাসহ আমাদের বহু নেতাকর্মীর ওপর হামলা, মামলা নির্যাতন করেছে, অনেককে হত্যা করেছে। একই সময়ে ৬৩ জেলার ৫শ’ জায়গায় বোমা হামলা করেছে। উত্তর জনপদে বাংলাভাই সৃষ্টি করে সমগ্র দেশটাতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তাদের অত্যাচারের স্টিম রোলার সর্বক্ষেত্রে চলেছে।
বিএনপি’র সময় সরকারের মধ্যে আরেকটি সরকার হিসেবে হাওয়া ভবন প্রতিষ্ঠা করে সবকিছু থেকে চাঁদা খাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, সে সময় বাংলাদেশ বিশ্বে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের দেশ এবং দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিংয়ের দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি অভিযোগ করেন, তাঁর দলের নেতা-কর্মীরা সে সময় ঘরে থাকতে পারেনি, কারো হাত কেটে নিয়েছে, কারো চোখ তুলে নিয়েছে, হাজার হাজার মেয়েকে পাকিন্তানী হানাদার বাহিনীর কায়দায় ধর্ষণ করেছে, কারো কারো ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে সেখানে পুকুর কেটেছে, কলাগাছের চারা রোপন করে দিয়েছে, যেন বাড়ি-ঘরের কোন চিহ্নই না থাকে।
এসব অত্যাচার নির্যাতন খালেদা জিয়া এবং তার ছেলে তারেক রহমানের নির্দেশেই বিএনপি’র ক্যাডাররা করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সে সময় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এবং ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ অফিস হাসপাতাল হয়ে গিয়েছিল, সবাইকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাটুকু সে সময় দেওয়া যায়নি।’
আমেরিকার এফবিআই’র এজেন্টকে কিনে নিয়ে সজিব ওয়াজেদকে হত্যা প্রচেষ্টা এবং সেই এফবিআই’র তদন্তেই জিয়া পরিবারের মানি লন্ডারিং এর তথ্য উঠে আসার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি এ সময় বিগত নির্বাচন নিয়ে বিএনপি’র সমর্থকদের কঠোর সমালোচনা করে জিয়াউর রহমানের হ্যাঁ, না ভোট থেকে শুরু করে খালেদা জিয়ার ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারী নির্বাচন এবং তাদের সময়কার বিভিন্ন নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার হরণের চিত্র তুলে ধরেন।
খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালীন ঢাকা শহরে বিদ্যুৎ ও পানির জন্য জনগণের হাহাকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তখন বিদ্যুৎ ও পানি দিতে না পারার কারণে বিএনপি’র অনেক নেতা কর্মী জনগণের ধাওয়া খেয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৯৬ সালে সরকার গঠনের সময় দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১৬শ’ মেগাাওয়াট থেকে বাড়িয়ে ২০০১ সালে ক্ষমতা ছাড়ার সময় ৪ হাজার ৩শ মেগাওয়াটে উন্নীত করে রেখে গেলেও পরবর্তীতে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময় সে বিদ্যুৎ ৩২শ’ মেগাওয়াটে নেমে এসেছিল। তাঁর সরকারের সময়ে রাজধানীর সম্প্রসারণ এবং নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরের সঙ্গে সংযুক্ত ১৭টি ইউনিয়নকে তাঁর সরকার ওয়ার্ডে রূপান্তরিত করেছে। নতুন করে ৩৬টি ওয়ার্ড সিটি কর্পোরেশনের আওতাভূক্ত করা হয়েছে এবং আরো পানি শোধনাগার সৃষ্টি করে সুপেয় পানি সরবরাহের পরিমানও বাড়ানো হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা শহরে এখন যে উন্নয়নের ছোঁয়াটা বিদ্যমান তা অতীতে কোন সরকারই করেনি এবং জনগণও তা দেখেনি। একইসঙ্গে রাজধানীর পরিধি বেড়ে গেলেও সকলের সেবা পাওয়া নিশ্চিত করার জন্যই সরকার একে উত্তর এবং দক্ষিণ দু’টি অংশে ভাগ করেছে।
এ সময় তিনি জনগণকে পানি এবং বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান পুণর্ব্যক্ত করে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতিও মনযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!