॥স্টাফ রিপোর্টার॥ সাবেক রাষ্ট্রপতি, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও একাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ইন্তেকাল করেছেন(ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে(সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি গতকাল ১৪ই জুলাই সকাল পৌনে ৮টায় ইন্তেকাল করেন। তিনি বিগত ৯দিন যাবৎ সিএমএইচ-এ লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।
আন্তঃ বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর(আইএসপিআর) এরশাদের মৃত্যু সংবাদটি নিশ্চিত করে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯বছর। দীর্ঘদিন তিনি বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
ভাইয়ের শারীরিক অবস্থার কথা জানাতে গিয়ে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের গত শনিবার বলেছিলেন, ‘এরশাদের কোনো অঙ্গ আর স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে না। প্রতিদিন ডাকলে চোখে মেলে তাকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আজ তা করেননি।’
জাতীয় পার্টি সূত্র জানায়, গতকাল রবিবার বাদ জোহর সেনা কেন্দ্রীয় মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযা শেষে তার মরদেহ সিএমএইচ-এর হিমঘরে রাখা হবে।
আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তার দ্বিতীয় জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। জানাযা শেষে তার মরদেহ কাকরাইলস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের দেখার জন্য রাখা হবে। এরপর বাদ আছর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে তার তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাযা শেষে তার মরদেহ পুনরায় সিএমএইচ-এর হিমঘরে রাখা হবে।
তৃতীয় দিন ১৬ই জুলাই সকালে হেলিকপ্টার যোগে তাকে রংপুরে নিয়ে যাওয়া হবে। সকাল সাড়ে ১০টায় রংপুর ঈদগাহ মাঠে তার শেষ জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। জানাযা শেষে তার মরদেহ আবার হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় নিয়ে এসে বাদ জোহর সেনা কবরস্থানে দাফন করা হবে।
গতকাল ১৪ই জুলাই থেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের জন্য শোক বই খোলা থাকবে।
এদিকে সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, গতকাল রবিবার বিকেল ৫টায় চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানে এরশাদের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
সাবেক সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৩০ সালের ১লা ফেব্রুয়ারী জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮২ সালে এক রক্তপাতহীন সামরিক অভূত্থানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হন এবং টানা ৮বছর দেশ শাসন করেন। ১৯৯০ সালে গণতন্ত্রকামী মানুষের গণঅভ্যুত্থানে তিনি ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। পরে বেশ কিছু অভিযোগে তিনি কারাবরণও করেন। কারাগারে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুরের ৫টি আসনে নির্বাচিত হন। পরবর্তী প্রতিটি নির্বাচনে তিনি রংপুর থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
তিনি প্রথমে জাতীয় ফ্রন্ট ও পরে ফ্রন্ট নাম পরিবর্তন করে জাতীয় পার্টি নামে রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তীতে বেশ কিছু উপদলে বিভক্ত হয়ে নানাভাবে জাতীয় পার্টি নামেই রয়েছে। তবে, এরশাদের জাতীয় পার্টিই তাদের মূল দলীয় প্রতীক লাঙ্গল নিয়ে সব নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর তিনি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫২ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। ১৯৭৫ সালের ২৪শে আগস্ট ভারতে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় তিনি মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান ও উপসেনা প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান।
এরশাদের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার মোঃ ফজলে রাব্বি মিয়া, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, তথ্যমন্ত্রী ড. মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ, পরিকল্পনা মন্ত্রী এম.এ মান্নান ও পরিবেশ বন ও জলবায়ু মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন পৃথক শোক জানিয়েছেন।
তারা মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।