॥হেলাল মাহমুদ॥ ‘পদ্মা কন্যা’ হিসেবে খ্যাত রাজবাড়ী জেলায় নদী ভাঙ্গন তীব্র হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। সারা বছরই এ জেলার বিভিন্ন উপজেলার পদ্মা নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকা কম-বেশী ভাঙ্গনের শিকার হলেও চলতি বর্ষা মৌসুমে তা ব্যাপক আকার ধারণ করার আশংকা বিরাজ করছে।
এ অবস্থায় জরুরী ভিত্তিতে প্রতিরোধের ব্যবস্থা না নিলে বিপুল পরিমাণ ফসলী জমি, বসতভিটা, স্কুল-মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
নদী ভাঙ্গনের কারণে জেলার আয়তন দিন দিন কমছে। ইতিমধ্যে আয়তনের বড় একটা অংশ মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। অস্তিত্ব নেই অনেক গ্রামের, মৌজার, ওয়ার্ডের। এর মধ্যে রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে ভাঙ্গনের তীব্রতা বেশী।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারী বৃষ্টি ও পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে ভাঙ্গনের মাত্রা বাড়ছে। গত এক মাসে বিভিন্ন এলাকার অন্তত শতাধিক একর কৃষি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। শত শত পরিবার নদী ভাঙ্গনের ঝুঁকির মুখে রয়েছে। ভাঙ্গনের কারণে নদীর পাড় নদী থেকে খাড়া হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় বেড়ীবাঁধের পাকা কার্পেটিংয়ের রাস্তার মাথাও ভাঙ্গতে শুরু করেছে। ভাঙ্গন প্রতিরোধে সেসব জায়গায় পানি উন্নয়ন বোর্ড পাথরের ব্লক ফেলছে।
মোনছের খান নামে পদ্মা নদীর তীরবর্তী একজন বাসিন্দা বলেন, বর্ষা মৌসুমে ঘন ঘন ঝড়-বৃষ্টির কারণে নদী উত্তাল হয়ে ওঠে। এ সময় নদীর ঢেউ পাড়ে গিয়ে আঘাত হানে। আর তখনই নদীর পাড় ভাঙ্গতে থাকে। এখনই ভাঙ্গন প্রতিরোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে অনেক ক্ষতি হওয়ার আশংকা রয়েছে।
গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট ভাকলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বলেন, আমার ইউনিয়নের চরবরাট, ছোটজলো, গোড়ামারা, কাওয়ালজানি মৌজা ভাঙ্গনের শিকার হয়ে ইতিমধ্যে প্রায় দেড়শ’ একর কৃষি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আরিফ সরকার বলেন, ভাঙ্গন রোধে বিভিন্ন এলাকায় ব্লক ফেলা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, এ জেলায় নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা বেশী। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাগণ আমাকে জানিয়েছেন, এখানকার নদী পাড়ের প্রায় ২৫কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙ্গন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তার মধ্যে ৮কিলোমিটার এলাকায় ভাঙ্গন প্রতিরোধের কাজ চলছে। অবশিষ্ট ১৭কিলোমিটার কাজও শীঘ্রই শুরু হবে। আমি সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত হয়ে তাদেরকে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিয়েছি। নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো।