ফারহানা মিনি বাংলার আকাশে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার আশীর্বাদ বঞ্চিত সব শিক্ষিত নারীদের কথা বলতে গেলেই যার নামটি অগ্রগণ্যতা পায় তিনি হলেন সুফিয়া কামাল। যিনি গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল নারী মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম অগ্রদূত এবং আলোকিত নারী সমাজ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে গেছেন।
সুফিয়া কামালের জন্ম বরিশালের শায়েস্তাবাদের নবাব পরিবারে ১৯১১ সালের ২০শে জুন। বাবা সৈয়দ আব্দুল বারী এবং মা সৈয়দা সাবেরা খাতুন। সেটি ছিল অত্যন্ত রক্ষণশীল পরিবার, যেখানে ভাষা ছিল উর্দু। মায়ের সহযোগিতায় বাংলা শেখা সুফিয়া কামাল তার লেখনীর দ্বারা নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যান সামনের কাতারে। অসমতার প্রতি বিদ্বেষ তার ছোটবেলাতেই। তাই তিনি নিজেকে যেমন আলোকিত করেছেন স্বীয় বুদ্ধিমত্তা দ্বারা তেমনি সমগ্র নারীকেও দিয়েছিলেন একটি আলোকিত সমাজ এবং শক্তিশালী নারী সংগঠন মহিলা পরিষদ। যে সংগঠনের তিনি প্রতিষ্ঠাতা এবং আজীবন সভাপতি। সংসার জীবনের বিভিন্ন চড়াই উৎরাই এর মধ্যেও তিনি নারী আন্দোলন থেকে কখনো পিছপা হননি। ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করার পর নারী নেত্রী হিসেবে তার স্থান পায় সবার উপরে। ওয়ারী মহিলা সমিতির সভানেত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি পরবর্তীতে গণঅভ্যুত্থানে, সামরিক শাসনের গণবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে, রাজবন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি, পূর্ব পাকিস্তান মহিলা প্রতিষ্ঠান ও নারী আন্দোলনে মহিলা সংগ্রাম পরিষদ পরিচালনার নেতৃত্ব দেন। শত ব্যস্ততার মধ্যেও বিভিন্ন সময়ে নারী সমাজের বৃহত্তর আন্দোলনের অব্যাহত ধারায় সক্রিয় ছিলেন সুফিয়া কামাল।
বাংলাদেশের সমাজে নারীর বিরুদ্ধে রক্ষণশীলতা, যৌতুক, নির্যাতন, বহুবিবাহ, যথেচ্ছা তালাক, ফতোয়া, নির্যাতন, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, পারিবারিক নির্যাতন, নিষ্ঠুরতা, পাশবিকতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও অন্যান্য নারী সংগঠন সম্মিলিতভাবে এসব নির্যাতন থেকে নারী সমাজকে মুক্তির আন্দোলনে একাত্ম হতে সুফিয়া কামাল নেতৃত্ব দেন। বিশ শতকের নব্বই এর দশকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সাধারণ নির্বাচনে নারী সমাজকে সক্রিয় হওয়ার আন্দোলনেও নেতৃত্ব দেন তিনি। পরবর্তীতে সমঅধিকারের দাবীতেও তিনি নারীদের পাশে থেকে সোচ্চার মিছিলে অতন্দ্র প্রহরীর মত নেতৃত্ব দেন।
মানুষ নিয়েই তো সমাজ, আমরা নারীরা শুধু নারী নই সমাজের একজন মানুষ। সুতরাং আলোকিত সমাজের অর্থই হলো আলোকিত মানুষের সমাজ। যে সমাজে এখনো নারীকে মানুষ হিসেবে কোণঠাসা করে সেই সমাজের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য দরকার কিছু যথার্থ আলোকিত মানুষ তেমনি একজন মানুষ ছিলেন কবি সুফিয়া কামাল। তার নেতৃেত্ব নারী দেখেছে বিভিন্ন সফলতা, যিনি উপেক্ষিত নারী সমাজকে মানুষ হিসেবে বৈষম্য ও অসাম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে এগিয়ে নিয়ে এসেছেন। পরিশেষে বলা যায়, সুফিয়া কামালের মত বাতিঘরগুলো সামনে রেখে সারা দেশে অসংখ্য ছোট বড় প্রদীপ জ্বেলে আলোকিত সমাজ গড়াই হবে আমাদের তার জন্মদিনের অন্যতম অঙ্গীকার। লেখিকা ঃ প্রশিক্ষণ সম্পাদক, রাজবাড়ী জেলা মহিলা পরিষদ।