সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০০ অপরাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

গোয়ালন্দে পদ্মায় ডুবে নিহত দুই গৃহবধূসহ ৫টি অসহায় পরিবারের ঈদের বাজার করে দিল প্রথম আলো বন্ধুসভা

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৪ জুন, ২০১৯

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ার পদ্মা নদী থেকে দুই শিশু সন্তানকে বাঁচাতে গিয়ে দুই গৃহবধূর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় অসহায় দুই পরিবার ও সম্প্রতি নৌকা ডুবিতে নিহত দুই ভাইয়ের পরিবারসহ অসহায় ৫টি পরিবারের ঈদের সমস্ত বাজার ও নগদ অর্থ দিয়েছে গোয়ালন্দ প্রথম আলো বন্ধুসভা।
গতকাল সোমবার এসব ৫টি পরিবারের বাড়িতে গিয়ে বন্ধুসভার সদস্যরা ঈদের একদিন আগে বাজার-সদাই করে দিয়ে আসল।
গতকাল সোমবার তখন বেলা এগারটা। গোয়ালন্দ শহর থেকে প্রায় ৬কিলোমিটার দূরে দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাট। লঞ্চ ঘাট পাড়ি দিয়ে পশ্চিমে অবস্থিত নতুন পাড়ায় কয়েক বছর আগে নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে বসতি গড়েছে সুজাত সরদার ও চাঁদ আলী মন্ডল। দুই বাড়িতে ছোট্র পরিসরে রীতি অনুযায়ী চলছিল কুলখানীর আয়োজন। পাশাপাশি দুই বাড়ি মিলে একত্রিত হয়ে কুলখানীর আয়োজন চলছিল। অথচ তখনও বাড়ির উঠানে বসে কাঁদছিলেন গত শুক্রবার পদ্মায় ডুবে নিহত রেবেকা বেগমের স্বামী সুজাদ সরদার। তিনি আমাদের দেখে আরো বেশি করে হাউ মাউ করে কাঁদছিলেন আর বলছিলেন, ‘আপনারা আইছেন। আমি অহন কি করবো? আমার এই অসহায় এতিম দুটি শিশু বাচ্চাদের কে দেখবে? আমি যদি ফিরে কাজ করি(বিয়ে) তাহলেও সে কি ওদের মায়ের মতো ভালোবাসবে?’ এভাবেই বিলাপ করছিলেন আর কাঁদছিলেন। এসময় প্রতিবেশী আরেক নিহত গৃহবধূ স্বপ্নার স্বামী চাঁদ আলী মন্ডল থাকার ছাপড়া টিনের ঘরের চালা ঠিক করছিলেন। বৃষ্টি নামলেও ঘরে পানি চুইয়ে পড়ে। তাই কোনরকম মেরামত করছিলেন।
গত শুক্রবার বিকেলে বাড়ির কাছে পদ্মা নদীতে গোসল করতে যায় সুজাদের স্ত্রী রেবেকা বেগম ও প্রতিবেশি চাঁদ আলী মন্ডলের স্ত্রী স্বপ্না বেগম। এ সময় তাদের সাথে রেবেকার দুই শিশু ছেলে নিরব সরদার ও সৌরব সরদার এবং স্বপ্নার দুই শিশু কন্যা চাঁদনী আক্তার ও লামিয়া পিছু নেয়। দুই গৃহবধু নদীতে নেমে গোসল শুরু করলে তাদের অজান্তে রেবেকার দুই ছেলে নিরব ও সৌরব পদ্মায় নেমে পড়ে। চোখের সামনে হঠাৎ ভেসে যেতে দেখে দুই গৃহবধূ একত্রে শিশু সন্তান দুটি উদ্ধারের চেষ্টা করে। দূর থেকে পদ্মা নদীতে মাছ ধরা অবস্থায় কয়েকজন জেলে দ্রুত এগিয়ে এসে শিশু সন্তানদের উদ্ধার করে। তাদের অজান্তে গৃহবধূকে স্রোতের টানে পানির নিচের দিকে টেনে নিয়ে যায়। পরে অনেক খোঁজ করার পর গত শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে দুর্ঘটনাস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ১ ও ২ নম্বর ফেরী ঘাটের মাঝামাঝি স্থানে স্থানীয় লোকজন স্বপ্নাকে ভাসতে দেখে উদ্ধার করে সন্ধ্যায় গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরদিন শনিবার সকালে দুর্ঘটনাস্থলের কাছেই পায় নিখোঁজ আরেক গৃহবধূ রেবেকার লাশ। দরিদ্র পরিবারের দুই গৃহবধুর চার শিশু সন্তানকে অনাথ করে রেখে যাওয়ায় আরো বেশি অসহায় হয়ে পড়ে পরিবার দুটি।
গতকাল ৩রা জুন গোয়ালন্দ বন্ধুসভার সদস্যরা প্রায় ১৫০০ টাকার ঈদের সমগ্র বাজার-সদাই এবং নগদ এক হাজার করে টাকা তুলে দেয় সুজাত সরদার ও চাঁদ আলী মন্ডলের হাতে। ঈদের এক দিন আগে হঠাৎ করে এমন ঈদের বাজার সদাই পাওয়ার পর আরো বেশি আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন তারা।
এরপর বন্ধুসভার সদস্যরা গত ৩১শে মার্চ ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকা ডুবিতে নিহত উপজেলার দেবগ্রামের কাওয়ালজানি এলাকার হাতেম আলী সরদারের ছেলে বাবলু সরদার ও জীবন সরদার। পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি বাবলু সরদার স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান রেখে যান। আর ছোট ভাই জীবন সরদার বৃদ্ধা মা ও বাবাকে নিয়ে আলাদা থাকতো। তাদের পেশা ছিল নদীতে মাছ শিকার করা। একই পরিবারের দুই ভাইয়ের মৃত্যুতে খুবই অসহায় হয়ে পড়ে পরিবারটি। গতকাল সোমবার দুপুরে গোয়ালন্দ বন্ধুসভার সদস্যরা নিজেদের অর্থায়নে ক্রয় করা প্রায় ১৫০০ টাকার ঈদের সম্পূর্ণ বাজার-সদাই ও নগদ ১ হাজার করে টাকা তুলে দেয়। এ সময় বাবলু সরদারের স্ত্রী আছিয়া বেগম এবং জীবন সরদারের চাচী জেলেখা বেগম সহ পরিবারের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
ঈদের একদিন আগে ব্যাগ ভর্তি এমন ঈদের বাজার-সদাই পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন বাবলুর স্ত্রী আছিয়া বেগম। তিনি বলেন, উনি(স্বামী) যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে আইজ পোলাপানগো সাথে নিয়ে ঈদের বাজার করতেন। পোলাপান দুইডা খালি বাবা, বাবা করে। আমি আর সহ্য করতে পারছিনা। আপনারা সবাই আমাগোর দিকে খেয়াল রাইখেন’। তখন উপস্থিত বন্ধুসভার সদস্যসহ সকলের চোখে পানি চলে আসে।
এছাড়া গত পয়লা রমজান কাতার গিয়ে ষ্ট্রোক করে অসুস্থ্য অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন গোয়ালন্দ পৌরসভার কুমড়াকান্দি এলাকার জিয়া খান। এলাকায় থাকতে রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পরিবারের অভাব দূর করতে তিনি ধার দেনা হয়ে কাতার যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে তেমন কিছুই করতে পারেননি। পরিবারে জিয়া খানের স্ত্রী ও তিন শিশু কন্যা রয়েছে। অসহায় এই পরিবারটির জন্যও বন্ধুসভার সদস্যরা গতকাল ঈদের সম্পূর্ণ বাজার ও নগদ অর্থ তুলে দেয়।
এ সময় প্রথম আলো প্রতিনিধি এম রাশেদুল হক, বন্ধুসভার সভাপতি মুহাম্মদ বাবর আলী, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মইনুল হক মৃধা, সাংগঠনিক সম্পাদক জীবন চক্রবর্তী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সফিক মন্ডল, সদস্য শামসুল হক ও আকাশ সাহা প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!