॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ জাতীয় পাট দিবস উপলক্ষে ‘সোনালী আঁশের সোনার দেশ, পাট পণ্যের বাংলাদেশ’-এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন ও পাট অধিদপ্তরের আয়োজনে গতকাল ৬ই মার্চ সকালে বর্নাঢ্য র্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসক জিনাত আরা’র নেতৃত্বে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আম্রকানন চত্ত্বর থেকে বর্নাঢ্য র্যালী বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে এসে শেষ হয়।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) মোঃ আজাদ রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) রেবেকা খান, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শ্রী নিবাস দেবনাথসহ বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ, এনজিও প্রতিনিধিগণ, জেলার পাট শিল্প কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ, পাট চাষী ও ব্যবসায়ীগণ র্যালীতে অংশগ্রহণ করেন।
র্যালী শেষে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। জেলা প্রশাসক জিনাত আরা’র সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) মোঃ আজাদ রহমান।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) রেবেকা খানের সঞ্চালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পাট বিপনন কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান, জেলা ব্র্যাক প্রতিনিধি নেফাজ উদ্দিন, পাট ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক, শরিফুল ইসলাম ও মাকছুদুল আলম প্রমুখ। এ সময় জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নূরে সফুরা ফেরদৌস, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মাজিনুর রহমানসহ বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ, বাজার ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, এনজিও প্রতিনিধিগণ, জেলার পাট শিল্প কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ, পাট চাষী ও ব্যবসায়ীগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক জিনাত আরা বলেন, মার্চ মাস আমাদের মহান স্বাধীনতার মাস। এই মাসে আমাদের আমাদের জাতির জনক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণসহ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই কারণেই আজ আমরা স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের নাগরিক। আজকের এই ৭ই মার্চের আগ মূহুর্তে আমি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ স্বাধীনতা যুদ্ধে যে সমস্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন ও যে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত ও দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমহানীর বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি তাদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। আজকে সারা দেশে প্রথম বারের মতো পাট দিবস পালন করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী পাটের ব্যাপক চাহিদা স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময় থেকেই ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পূর্বে তৎকালীন শোষক গোষ্ঠী আমাদের সোনালী আঁশের অর্থ তাদের উন্নয়নের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু এই সোনালী আঁশকে সঠিক বিপনন ব্যবস্থার মাধ্যমে যাতে আরো অধিক হারে রপ্তানী করা যায় সেই জন্য ১৯৭৪ সাথে পৃথক একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী সময়ে পাটের পরিবর্তে প্লাস্টিক ও অন্যান্য বস্তু সেই পাটের জায়গা দখল করায় এর চাহিদা ও বাজার কমে আসে। কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশ বান্ধব দেশীয় পাটজাত পণ্যের ব্যবহার নিশ্চিত করাসহ দেশীয় পণ্যের ব্যবহারের বিষয়টি উপলদ্ধি করতে পেরে ১৭টি পণ্যে প্লাস্টিক ব্যাগের পরিবর্তে পাটজাত বস্তার ব্যবহার ও এই পাট থেকে আরো কিভাবে অন্যান্য পণ্য তৈরীর মাধ্যমে বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায় সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
এছাড়াও আলোচনা সভায় পাট চাষীদের সময়মতো পাটের মূল্য পরিশোধ করা, পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবহার নিশ্চিত করাসহ জনসাধারণকে উৎসাহী করা এবং পাটের বিভিন্ন বিষয়ের সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।