॥দেবাশীষ বিশ্বাস॥ সোনালী ধানে ভরে আছে ক্ষেত আর সেই সাথে চলছে ধান কাটার কাজ। রাজবাড়ী জেলার সব উপজেলাতেই চোখে পড়ছে একই দৃশ্য। তবে জেলায় এ বছর গতবারের তুলনায় বোরো ধানের আবাদ ও উৎপাদন দুটি’ই কম হয়েছে। উপরন্তু ধান কাটার কৃষি শ্রমিকের অতিরিক্ত মজুরীর পাশাপাশি উৎপাদিত ধানের দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে কৃষকরা।
উৎপাদন খরচ অনুযায়ী ধানের দাম না পাওয়ার কৃষকরা বিপাকে পড়েছে। অনেক জায়গায় আবার এক মণ ধানের দামের চেয়ে একজন শ্রমিকের মজুরী বেশী।
কৃষকরা জানিয়েছেন, অব্যাহতভাবে নানা ক্ষতির কারণে ধানের উৎপাদন কমেছে। টাকার প্রয়োজন হওয়ায় তারা ধান সংরক্ষণও করতে পারছেন না।
এ বছর রাজবাড়ী জেলার কৃষকরা বোরো হাইব্রিড, বোরো উফশী ও বোরো স্থানীয় জাতের ধান চাষ করেছেন। এ বছর রাজবাড়ী জেলায় মোট ১৩ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। তার মধ্যে রাজবাড়ী সদর উপজেলায় ৬ হাজার ৫১০ হেক্টর, পাংশা উপজেলায় ১ হাজার ৮৫ হেক্টর, কালুখালী উপজেলায় ১ হাজার ৯১০ হেক্টর, বালিয়াকান্দি উপজেলায় ৮০০ হেক্টর এবং গোয়ালন্দ উপজেলায় ২ হাজার ৯৫৩ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ হয়েছে। গত বছর রাজবাড়ী জেলায় মোট ১৪ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে অর্থাৎ এ বছরের চেয়ে ৫১০ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ বেশী হয়েছিল।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার বানীবহ ইউনিয়নের কৈডাঙ্গা গ্রামের কৃষক প্রদ্যুৎ কুমার বালা বলেন, এ বছর ধানের উৎপাদন ভালো হয় নাই। প্রতি পাখি (২২ শতাংশ) জমিতে ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৭হাজার টাকা। সর্বোচ্চ উৎপাদন ১২ মণ, যার বর্তমান বাজার মূল্যও ৭ হাজার টাকা। এভাবে দাম পেলে আগামীতে কৃষি চাষ করাই কষ্টকর হয়ে পড়বে।
বালিয়াকান্দি উপজেলার কৃষক আক্কাস শেখ বলেন, শ্রমিকের মজুরী অত্যধিক হওয়ার কারণে আমাদেরকে বেশী বিপাকে পড়তে হয়েছে। ধানের দাম কম হওয়ার জন্য সরকারের নজরদারীর অভাবও রয়েছে। এছাড়া কৃষি বিভাগের অসহযোগিতার কথাও বলেন তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফজলুর রহমান অবশ্য বললেন, এ বছর রাজবাড়ীতে ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তবে ‘ধানের দাম কম পাওয়ায় কৃষকরা বিপাকের মধ্যে রয়েছে’ সেটি স্বীকার করে পুষিয়ে নিতে কৃষকদের ধান সংরক্ষণের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আগামীতে ধানের দাম বৃদ্ধি পাবে। তখন কৃষকেরা লাভবান হবে। ধানের উৎপাদন কমার বিষয়ে তিনি বলেন, কৃষকরা অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকে পড়ায় ধানের আবাদ কমেছে।