॥কোলকাতা থেকে শুভজিৎ দাস গুপ্ত॥ শহীদ বসন্ত বিশ্বাসের ১০৫তম আত্মোৎসর্গ দিবস উপলক্ষে ‘শহীদ বসন্ত বিশ্বাস স্মারক সমিতি’র আয়োজনে গত ১১ই মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কোলকাতার কৃষ্ণপদ ঘোষ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট হলে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
শহীদ বসন্ত বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন প্রবীণ স্বাধীনতা সংগ্রামী পূর্ণেন্দু প্রসাদ ভট্টাচার্য্য, প্রাক্তন অধ্যাপক শান্তিনাথ ঘোষ, সাংবাদিক অপূর্ব দাস ও ডক্টর শিশুতোষ সামন্ত প্রমুখ।
ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে যে ৪১ জন বঙ্গ সন্তানের ফাঁসি হয়েছিল শহীদ বসন্ত বিশ্বাস ছিল তাদের অন্যতম। ১৯১৫ সালের ১১ই মে পাঞ্জাবের অম্বালা জেলে মাত্র ২০ বছর ৩ মাস ৬ দিন বয়সে কৃষক পরিবারের বিপ্লবী সন্তান বসন্ত কুমার বিশ্বাসের ফাঁসি হয়। ১৬ বছর বয়সে বসন্ত বিশ্বাস বিপ্লবের পথে পা বাড়ায়। ১৯১৩ মালের ১৭ই মে’র লাহোরের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় অভিযুক্ত হয়ে যখন সে ধরা পড়ে তখন তার বয়স ছিল ১৯ বছর ২১ দিন। পুলিশের শত অত্যাচার সহ্য করেও বসন্ত মুখ খোলেনি, কোন কিছু স্বীকার করেনি। দিল্লীর আদালতে বসন্তসহ মোট ১১জনের বিরুদ্ধে খুনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়। তাদের মধ্যে বসন্তসহ ৪জনের মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয় এবং বাকীদের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়। বসন্ত বিশ্বাসের জন্মস্থান পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার নাকাশিপাড়া থানার অন্তর্গত মুড়াগাছায়। সেখানে আজও ভগ্ন অবস্তায় রয়েছে বসন্ত বিশ্বাসের বসত বাড়ী। মুড়াগাছা হাইস্কুলের সামনে তার স্মৃতিস্তম্ভ এখনও আছে।
আলোচনা সভায় বক্তাগণ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে বসন্ত বিশ্বাসের অবদানের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি তার বিষয়ে সরকারী অবহেলার দিকটির কথাও তুলে ধরেন। বসন্ত বিশ্বাসের বসত বাড়ীতে ঢোকার মুখে রয়েছে তার একটি আবক্ষ মূর্তি। বসন্ত বিশ্বাসের মুড়াগাছায় স্কুলের সামনে তার স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে, যার উদ্বোধন করেছিলেন বিপ্লবী ডক্টর ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত। এছাড়া কৃষ্ণনগরের রবীন্দ্র ভবনের সামনে একটি শহীদ স্তম্ভ রয়েছে বসন্ত বিশ্বাসের নামে। কিন্তু বসন্ত বিশ্বাসের স্মৃতিতে সরকারীভাবে কোন অনুষ্ঠান হয় না স্বাধীনতার ৭২বছর পরও। তার স্মরণে দিল্লীতে ‘বসন্ত বিশ্বাস রাজকীয় সর্বদয় বিদ্যালয়’ নামে একটি স্কুল স্থাপন করা হয়েছিল, পরে তার নামও পরিবর্তন করা হয়েছে। সরকারী উদ্যোগ না থাকলেও সামাজিক সংগঠনগুলোর মাধ্যমে আরো বেশী করে স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনাকে জাগরিত করার উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন বক্তারা। দাবী ওঠে পাঠ্য তালিকায় ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রকৃত ইতিহাস সংযোজনের।