॥দেবাশীষ বিশ্বাস॥ তামাক একটি ক্ষতিকর পণ্য। সিগারেট, জর্দা, গুল এসব নেশা জাতীয় দ্রব্য তৈরীতে তামাক ব্যবহৃত হয়। তামাকে থাকে প্রচুর পরিমাণে নিকোটিন। এই নিকোটিন সিগারেটের ধোঁয়ার মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে। তামাক জাতীয় দ্রব্য সেবন করে মানুষ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এর ফলে ফুসফুস, লিভার ও বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের মতো রোগ-ব্যাধি হয়ে থাকে তামাক সেবনকারীদের।
রাজবাড়ীর ৫টি উপজেলার (সদর, বালিয়াকান্দি, কালুখালী, গোয়ালন্দ ও পাংশা) বিভিন্ন এলাকায় তামাকের চাষ হচ্ছে। বিভিন্ন কোম্পানী কৃষকদের প্রলোভন দেখিয়ে তামাক চাষে আগ্রহী করে তুলছে, চাষীদের দিচ্ছে তামাক চাষের বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা। অধিক লাভের লোভে কৃষকরা তামাক চাষ করছে। তামাকের ক্ষতিকারক নিকোটিন তামাক শুকানোর সময় মানুষের শরীরে ঢুকে ক্ষতি করে, হয় নানা ধরনের রোগ-ব্যাধি।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের চরনারায়ণপুর ও কালিতলা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চাষীরা ক্ষেত থেকে তামাক তুলে বাড়ীর আঙ্গিনা ও আশেপাশে শুকাচ্ছে। যারা এই তামাক পরিচর্যা করছে তারা মারাত্মকভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। এরপরও অধিক লাভের আশায় তারা তামাক চাষ করছে। অনেকে জানেই না তামাকের কারণে তাদের স্বাস্থ্যের কী ক্ষতি হচ্ছে।
চন্দনী ইউনিয়নের ধাওয়াপাড়া গ্রামের মুক্তার সরদার এ বছর তার ৪ বিঘা ফসলী জমিতে তামাকের চাষ করেছেন। অধিক লাভের আশায় এবং তামাক কোম্পানীর প্রলোভনে পরে তিনি এই তামাকের চাষ করেছেন।
তিনি জানান, এই তামাক চাষের জন্য তিনি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানীর কাছ থেকে অগ্রিম মোটা অংকের টাকা, সার-বীজসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তা পেয়েছেন। যার জন্য অধিক লাভের কারণে তিনি তার ফসলী জমিতে এই তামাকের চাষ করেছেন। অন্যান্য ফসলের চাইতে তামাক চাষে কয়েকগুণ বেশী লাভ পাওয়ায় তিনি দিন দিন তামাকের চাষ বাড়াচ্ছেন। মুক্তার সরদারের মতোই অনেক চাষী বলেন, অন্যান্য ফসলের চেয়ে তামাক চাষে তাদের বেশী লাভ হচ্ছে। এ জন্যই তারা অধিক লাভের জন্য তামাকের চাষ করছেন।
স্থানীয়রা জানান, আগে যেসব জমিতে খাদ্যশস্য জাতীয় ফসল উৎপাদন হতো, এখন সেসব জমিতে তামাকের চাষ করা হচ্ছে। তামাক কোম্পানীর প্রলোভনে পরে কৃষকরা তাদের জমিতে খাদ্যশস্যের চাষ না করে তামাক চাষে ঝুঁকে পড়ছে।
এ বিষয়ে রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ ফজলুর রহমান বলেন, তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে পরামর্শ প্রদান করে যাচ্ছে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর। তারপরও চাষীরা অধিক লাভের আশায় ক্ষতি স্বত্ত্বেও তামাকের আবাদ করছে। তারা তামাক কোম্পানীগুলোর কাছ থেকে সহায়তা পাওয়ার কারণেই তামাকের আবাদ বেশী করছেন। যারা তামাক চাষাবাদ ও পরিচর্যা করছে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারপরও তারা কৃষকদের তামাক চাষ পরিহার করে অন্যান্য ফসল চাষের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। তামাক আবাদের কারণে ফসলী জমি তার উর্বরা শক্তি হারাচ্ছে। এ বছর রাজবাড়ী জেলায় ৩১ হেক্টরের কিছু বেশী জমিতে তামাকের চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ২ হেক্টর কম।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, তিনি বিভিন্ন স্থানে তামাক চাষ দেখেছেন। এই ক্ষতিকর তামাক চাষ কমাতে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালককে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। আমাদের প্রচেষ্টায় এ বছর রাজবাড়ী জেলাতে তামাকের চাষ কমেছে। এই তামাক চাষ আরও কমানোর জন্য কৃষি বিভাগকে সাথে নিয়ে জেলা প্রশাসন কাজ করে যাবে।