॥শাহ্ ফারুক হোসেন॥ আজ ২০শে এপ্রিল বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফের ৪৮তম শাহাদাৎ বার্ষিকী।
১৯৭১ সালের এই দিনে তিনি রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর থানার বুড়িঘাট নামক স্থানে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। তার শাহাদৎ বার্ষিকী উপলক্ষে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলা প্রশাসন ও পরিবারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
মধুখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মোস্তফা মনোয়ার জানান, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের ৪৮তম শাহাদৎ বার্ষিকী উপলক্ষে ২০শে এপ্রিল উপজেলার রউফনগরের বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরে তার স্মৃতি ফলকে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জাতীয় পতাকা উত্তোলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া ম্ন্সুী আব্দুর রউফ স্মৃতি সংসদ ও পারিবারিক উদ্যোগে পবিত্র কোরআন খানী, আলোচনা সভা এবং বাদ যোহর মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এ জন্য মধুখালী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার বড় বোনকে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।
বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের বড় বোন জাহানারা বেগম জানান, মায়ের(বীর মাতা মুকিদুননেছা) মৃত্যুর পর পরিবারের পক্ষ থেকে মধুখালী উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা আলোচনা সভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকি। এবারও বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের আয়োজন করেছি।
মধুখালী উপজেলার সালামতপুর গ্রামের(বর্তমানে রউফনগর) মুন্সী মেহেদী হাসান ও মকিদুননেছার পুত্র মুন্সী আব্দুর রউফ ১৯৪৩ সালের ১লা নিজ গ্রামের বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ১১বছর বয়সে তার পিতৃ বিয়োগ ঘটে। এরপর আর্থিক অনটনের কারণে লেখাপড়া সম্ভব না হওয়ায় ১৯৬৩ সালের ৮ই মে তিনি তৎকালীন ইপিআর (বর্তমানে বিজিবি)-এ সৈনিক পদে যোগদান করেন। তার সৈনিক নম্বর ছিল ১৩১৮৭। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি তার উইংয়ে কর্মরত অবস্থায় ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং মেশিনগানার হিসেবে ৮ নম্বর সেক্টরের কমান্ডারের অধীনে রাঙ্গামাটির মহালছড়ি নৌপথ অঞ্চলে বুড়িঘাট নামক স্থানে চিংড়িখালের প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২০শে এপ্রিল পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে মুন্সী আব্দুর রউফের মেশিনগানের গুলিতে পাক বাহিনীর ২টি লঞ্চ ও একটি ¯প্রীড বোড ডুবে পাকবাহিনীর দুই প্লাটুন সৈন্যের সলিল সমাধি ঘটে। এ সময় হঠাৎ প্রতিপক্ষের নিক্ষিপ্ত মর্টার সেলের আঘাতে তিনি শহীদ হন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার সরকার সরকার তাকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করে। শহীদ হওয়ার দীর্ঘ ২৫ বছর পর ১৯৯৬ সালে বুড়িঘাট নিবাসী জ্যোতিষ চন্দ্র চাকমা ও দয়াল কৃষ্ণ চাকমার সহায়তায় বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের কবরের স্থান শনাক্ত করা সক্ষম হয়। ১৯৯৭ সালে সরকারীভোবে সেখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। ২০০৮ সালের ২৮শে মে তার নিজ গ্রাম সালামাতপুরের নাম রউফনগর রাখা হয়। ওই বছরেই তার নামে রউফনগরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয় ফরিদপুর জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে ৬৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ স্মৃতি যাদুঘর ও গ্রন্থগার নির্মাণ করে। তার নামে প্রতিষ্ঠিত কামারখালীর বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ ডিগ্রী কলেজকে কিছুদিন পূর্বে সরকারী করা হয়। এছাড়া গন্ধখালী বীরশ্রেষ্ঠ উচ্চ বিদ্যালয়, সাভার ক্যান্টনমেন্টের বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ গেট এবং ঢাকায় বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ রাইফেলস স্কুল এন্ড কলেজসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তার নামে অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে।