॥আশিকুর রহমান॥ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর রাজবাড়ী জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ইব্রাহিম মোঃ তৈমুরসহ একই কার্যালয়ের আরও কয়েকজন কর্মকর্তার মোবাইল নম্বরে ফোন করে সর্বহারা লাল পতাকা বাহিনীর নেতা পরিচয় দিয়ে চাঁদা দাবি করা হয়েছে।
এর আগে ওই কার্যালয়ে ফোন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব পরিচয় দিয়ে কর্মকর্তাদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করা হয়।
গতকাল ১৩ই মার্চ দুপুরের দিকে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিকেলে রাজবাড়ী সদর থানায় একটি সাধারণ জিডি করা হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর রাজবাড়ীর নির্বাহী প্রকৌশলী ইব্রাহিম মোঃ তৈমুর বলেন, ‘বেলা ১২টার দিকে আমার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে। তখন আমি অফিসের বাইরে ছিলাম। ফোনটি রিসিভ করার পর অপর প্রান্ত থেকে একজন নিজেকে আজিজ নামে পরিচয় দিয়ে জানান তিনি সর্বহারা লাল পাতাকা বাহিনীর সদস্য। এরপর তিনি অপর একজন ব্যক্তিকে তাদের নেতা পরিচয় দিয়ে ফোনটি ধরিয়ে দেন। ওই ব্যক্তি আমাকে জানান তাদের দলের কয়েকজন সদস্য ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার পথে বিজিবির গুলিতে আহত হয়ে হাসপতালে রয়েছে। তাদের চিকিৎসার জন্য টাকার প্রয়োজন। আমার কাছে একটি বিকাশ নম্বর দিয়ে তিনি ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। এ সময় তিনি আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন আমি যদি টাকা না দিই বা পুলিশকে জানাই তাহলে আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের মেরে ফেলা হবে।’
ইব্রাহিম মোঃ তৈমুর আরো বলেন, ‘এর কিছুক্ষণ পর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর রাজবাড়ী সদর উপজেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিলন ফকির আমাকে ফোন করে জানান তার মোবাইল নম্বরে কল করেও একই কায়দায় টাকা চাওয়া হয়েছে। এরপর আমি অফিসে গিয়ে জানতে পারি সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আমার অফিসের টেলিফোন নম্বরে একটি ফোন আসে। ওই সময় আমি অফিসে না থাকায় ফোনটি রিসিভ করেন অফিসের কম্পিউটার অপারেটর শাওন। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি নিজেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব পরিচয় দিয়ে শাওনের কাছে আমার নম্বর চান। শাওন আমার নম্বর না দিয়ে ফোনটি অফিসের ক্যাশিয়ার মাসুদ লস্করের কাছে ধরিয়ে দেন। মাসুদ লস্কর ফোনটি অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(প্রাক্কলনিক) প্রকৌশলী মেহেদী মিল্লাতকে ধরিয়ে দেন। মেহেদী মিল্লাতের কাছ থেকে ওই ব্যক্তি আমার মোবাইল নম্বরসহ সংশ্লিষ্ট অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার নম্বর নেন। এরপর থেকেই নম্বরগুলোতে ফোন আসা শুরু হয়।’
এ ঘটনায় রাজবাড়ী সদর থানায় একটি সাধারণ জিডি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর রাজবাড়ী সদর উপজেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিলন ফকির বলেন, ‘আমার মোবাইল নম্বরে বেলা ১২.২১ মিনিটে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন দিয়ে সর্বহারা লাল পতাকা বাহিনীর নেতা পরিচয় দিয়ে চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা না দিলে আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের মেরে ফেলার হুমিকও দেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে আমি বিষয়টি নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারকে জানাই।’
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর রাজবাড়ীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(প্রাক্কলনিক) প্রকৌশলী মেহেদী মিল্লাত বলেন, ‘অফিসের ক্যাশিয়ার মাসুদ লস্কর আমাকে বলেন সচিব স্যার ফোন করেছেন আমার সঙ্গে নাকি কথা বলবেন। এরপর আমি টেলিফোন ধরে স্যার সম্মোধন করে সালাম দিই। টেলিফোনের অপর প্রান্ত থেকে আমার নিজের ব্যক্তিগত নম্বরসহ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর রাজবাড়ীর নির্বাহী প্রকৌশলী স্যার ও রাজবাড়ীর সকল উপজেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের নম্বর চাওয়া হয়। এছাড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, সাতক্ষীরা ও মাগুরা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীদের নম্বরও চাওয়া হয়। আমি সত্যি সত্যি সচিব স্যার নম্বর চাইছেন মনে করে সরল মনে তার কাছে সকলের নম্বরগুলো দিয়ে দিই। এর আধাঘন্টা পর আমার নম্বরে ফোন করে সর্বহারা পরিচয় দিয়ে চাঁদা চাওয়া হয়।’
এ বিষয়ে রাজবাড়ী সদর থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর রাজবাড়ীর নির্বাহী প্রকৌশলী ইব্রাহিম মোঃ তৈমুর মহোদয় থানায় একটি জিডি করেছেন। অপরাধীদের সনাক্তপূর্বক গ্রেফতার করতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’