॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ আগামী ২৪শে মার্চ অনুষ্ঠিতব্য রাজবাড়ী সদর, বালিয়াকান্দি, পাংশা ও গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ১১ই মার্চ সকাল সাড়ে ১০টায় কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে সভায় পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি, বিপিএম, পিপিএম-সেবা, রাজবাড়ী সদর ও বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোহাম্মদ আশেক হাসান, গোয়ালন্দ ও পাংশা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ হাবিবুর রহমান, সদর উপজেলার স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী এডঃ ইমদাদুল হক বিশ্বাস ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম নওয়াব আলী, বালিয়াকান্দি উপজেলার আওয়ামী লীগ মানোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান প্রার্থী আশরাফ আলী মোল্লা, পাংশা উপজেলার স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ফরিদ হাসান ওদদ, রাজবাড়ী সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী এডঃ সফিকুল হোসেন সফিক ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মীর মাহফুজা খাতুন মলি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) আলমগীর হুসাইন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আমিনুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সদর উপজেলার সহকারী রিটার্নিং অফিসার মোঃ সাঈদুজ্জামান খান, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ, নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তাগণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, আগামী ২৪শে মার্চ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৩য় ধাপে রাজবাড়ী জেলার ৫টি উপজেলার মধ্যে সদর, বালিয়াকান্দি, গোয়ালন্দ ও পাংশা এই ৪টি উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে প্রার্থীতা চূড়ান্তসহ প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ সম্পন্ন হয়েছে। প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। আগামী ২২শে মার্চ রাত ১২টা পর্যন্ত তারা নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আইন অনুযায়ী প্রার্থীরা নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী কি কি করতে পারবেন আর কি কি করতে পাবেন না সে বিষয়গুলো জানানোসহ কিভাবে এবারের নির্বাচন হবে সেটি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা প্রদানের জন্য আজকের এই মতবিনিময় সভা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে সকল প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের অনেকেই এই গুরুত্বপূর্ণ সভায় উপস্থিত নেই। যারা উপস্থিত আছেন আর যারা উপস্থিত নাই তাদের সকলকেই নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে তাদের প্রচার কাজ চালানোসহ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন, সরকার ও প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন এই উপজেলা নির্বাচন যাতে শতভাগ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়। নির্বাচন কমিশন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারাসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল সরকারী কর্মকর্তার নির্বাচন সংক্রান্ত গতিবিধি নির্বাচন কমিশন ও সরকারের নজরে থাকবে। যদি কোন কর্মকর্তা নির্বাচনে পক্ষপাতিত্ব করেন বা নির্বাচন সংক্রান্ত কোন বিষয়ে গাফিলতি করেন আর সেটা যদি প্রমাণিত হয় তবে সেই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাসহ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। যার নমুনা আপনারা ১ম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দেখেছেন। ১ম ধাপের নির্বাচনে একজন প্রিজাইডিং অফিসারের কাজে গাফিলতির জন্য তাকে চাকুরী থেকে বরখাস্তসহ জেলে পাঠানো হয়েছে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কোন কর্মকর্তাই জেলে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়ে কোন পক্ষপাতিত্বমূলক বা গাফিলতির কাজ করবে না। আমরা সকল প্রার্থী ও ভোটারদের আশ^স্ত করতে চাই নির্বাচন শতভাগ নিরপেক্ষ হবে। যদি কোন ভোটকেন্দ্রে কোন ধরনের জাল ভোট বা পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ পাওয়া যায় তবে সেই কেন্দ্র্রের নির্বাচন তৎক্ষণাৎ বাতিল করা হবে। ক্ষেত্র বিশেষে নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে তাহলে ঐ উপজেলার পুরো নির্বাচন বাতিল করে দিবে। এ ব্যাপারে নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল কর্মকর্তাকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছে। আবার নির্বাচনের প্রত্যেক প্রার্থীরও দায়িত্ব রয়েছে। একজন প্রার্থী অন্য প্রার্থীকে ভয়-ভীতি বা তার নির্বাচনী কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি করলে বা তাকে হুমকি-ধমকি দিলে তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে প্রার্থী যতই প্রভাবশালী হোক না কেন। আপনাদের সবাইকে আবারও স্মরণ করিয়ে দেই, এই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমাদের কাছে সকল প্রার্থী সমান। সুতরাং কোন প্রার্থীর আচরণবিধি ভঙ্গের কোন অভিযোগ থাকলে আমাদের জানাবেন, আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আর সেই জন্য জেলা প্রশাসন থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মোবাইল নম্বর আপনাদের সরবরাহ করা হয়েছে। প্রয়োজনে আপনারা তাদেরকে ফোন দেবেন। তারা আপনাদের অভিযোগের ভিত্তিতে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। কোন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী বা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী দলীয় প্রার্থী হিসেবে ভোটারদের কাছে ভোট চাইতে পারবেন না। নির্বাচন প্রভাবিত করার এই রকম অভিযোগ পাওয়া গেলে প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাই সব দিক বিবেচনা করে প্রার্থীরা নির্বাচনে সফলতা পেতে চাইলে অন্য চিন্তা বাদ দিয়ে ভোটারদের কাছে যান। ভোটারদের ভোটেই চূূড়ান্ত হবে কে জিতবেন আর কে হারবেন। জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, পক্ষপাতহীন ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বদ্ধপরিকর। সুতরাং ভয়-ভীতি, হুমকি-ধমকি দিয়ে বা অন্য কোনভাবে নির্বাচন প্রভাবিত করার কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি সকলকে সতর্ক করে দেন। এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে নির্বাচনের আচরণবিধি ও উপজেলা নির্বাচন আইনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি, বিপিএম, পিপিএম-সেবা বলেন, এই নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয় এমন কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা আজ পর্যন্ত রাজবাড়ীতে ঘটেনি। সাবিকভাবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো রয়েছে। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ ঐক্যবদ্ধভাবে সবসময় আপনাদের পাশে থাকবে। নির্বাচনে আচরণবিধি ভঙ্গ হয় এমন কোন বিষয়ে জেলা পুলিশ কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেবে না। আপনার মনে রাখবেন কারো প্রতি আমাদের কোন পক্ষপাতিত্ব নাই। যদি কোন প্রার্থী মনে করে আমরা কারো প্রতি দুর্বল তাহলে সে মারাত্মক ভুল করবে। এবারের নির্বাচনে জনপ্রতিনিধি হতে হলে প্রার্থীকে নিজের যোগ্যতায় জনগণের ভোটে জয়ী হতে হবে। আমার কাছে খবর এসেছে অনেক প্রার্থীকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। হুমকির ধরণটাও লজ্জাজনক। সকলকে মনে রাখতে হবে খুন-খারাবির দিন শেষ। ভালো মানুষ হলে ভোটাররা ভোট দিয়ে আপনাদেরকে জনপ্রতিনিধি বানাবে।
তিনি বলেন, আজকের এই মতবিনিময় সভায় প্রত্যেক প্রার্থীর উপস্থিত থাকা উচিত ছিল। কিন্তু কোন কারণে অনেকে উপস্থিত হননি সেটা আমার কাছে বোধগম্য নয়। বিষয়টি ভালো লাগেনি। এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন ও প্রধানমন্ত্রী শতভাগ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছেন। তাই নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও অবাধ করতে জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের যা যা করা দরকার করা হবে। কোন অবস্থাতেই হুমকি-ধমকিকে আপনারা ভয় পাবেন না। কেউ আপনাদের কোন হুমকি-ধমকি প্রদান করলে জেলা প্রশাসককে, না হয় আমাকে জানাবেন। তৎক্ষণাৎ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এর কোন ব্যত্যয় হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে সকল ভোটারকে নির্বিঘেœ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের আহ্বান জানান।