॥স্টাফ রিপোর্টার॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বছরের আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ‘লাইফটাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন এমপাওয়ামেন্ট এওয়ার্ড’ অর্জনের মাধ্যমে তাঁর আন্তর্জাতিক সম্মাননা’র সংখ্যা বেড়ে ৩৬টিতে দাঁড়িয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জার্মানীতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদ ৭ই মার্চ বার্লিনে ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান উইমেন প্রদত্ত এই এওয়ার্ড গ্রহণ করেন। খবর বাসস।
নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে তাঁর গতিশীল নেতৃত্বের জন্য এই এওয়ার্ড দেয়া হয়।
এরআগে শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র সমুন্নত করা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য বিশ্বের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউশনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে বিভিন্ন ডিগ্রি ও সম্মাননা দেয়া হয়।
সামাজিক কার্যক্রম, শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদানের জন্যও তাঁকে সম্মাননা ও এওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানের দায়িত্বশীল নীতি ও মানবিক সাহায্য প্রদান এবং রোহিঙ্গা ইস্যুত দূরদর্শী নেতৃত্বের জন্য প্রধানমন্ত্রী দু’টি আন্তর্জাতিক এওয়ার্ড আইপিএস ইন্টান্যাশনাল এচিভমেন্ট এওয়ার্ড এবং ২০১৮ স্পেশাল ডিসটিংশন এওয়ার্ড ফর লিডারশীপ অর্জন করেন।
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সংবাদ সংস্থা ইন্টার প্রেস সার্ভিস(আইপিএস) এবং নিউইয়র্ক, জুরিখ ও হংকং ভিত্তিক অলাভজনক তিনটি ফাউন্ডেশনের নেটওয়ার্ক গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশন ২০১৮ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর দু’টি এওয়ার্ড প্রদান করে শেখ হাসিনাকে সম্মাননা জানায়।
বাংলাদেশে নারী শিক্ষা এবং উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে অসামান্য নেতৃত্বের জন্য প্রধানমন্ত্রী গত বছরের ২৭শে এপ্রিল গ্লোবাল উইমেন’স লিডারশিপ এওয়ার্ড গ্রহণ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল সামিট অব উইমেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে সংস্থার এক ভোজ উৎসবে শেখ হাসিনাকে মর্যাদাপূর্ণ এওয়ার্ড প্রদানের মাধ্যমে সম্মাননা জানায়। প্রধানমন্ত্রী ‘গ্লোবাল উইমেন সামিট’-এর প্রেসিডেন্ট আইরিন নাতিভিদাদের কাছ থেকে এই এওয়ার্ড গ্রহণ করেন। সম্মেলনে বিশ্বের প্রায় দেড় হাজার নেতৃস্থানীয় নারী অংশগ্রহণ করেন।
চতুর্থবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর প্রথম মেয়াদে ১৯৯৮ সালে ইউনেস্কো থেকে ‘হুপে-বোয়ানি’ শান্তি পুরস্কার লাভের মাধ্যমে জাতিসংঘের সম্মাননা অর্জনের পর প্রথম আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য এলাকায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিদ্রোহীদের সঙ্গে শান্তি আলোচনার মাধ্যমে প্রায় দুই দশকের বেশি পুরানো সংঘাত অবসানের একবছর পরে তিনি এই সম্মাননা অর্জন করেন।
১৯৯৯ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর এওয়ার্ড হস্তান্তরকালে ইউনেস্কো মহাপরিচালক ফেদেরিকো মেয়র প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, জাতি গঠনে অবিচল ভূমিকা পালনকারী আপনার পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আপনি দেশকে শান্তি ও ক্ষমার পথে নিয়ে গেছেন। আপনার দেশের সীমান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় আপনার নিষ্ঠা বৈশ্বিক শান্তির সংস্কৃতির সঙ্গে সংগতি স্থাপন করেছে।
বিশ্ব শান্তি, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি, মেয়েদের শিক্ষা এবং আইসিটি ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা তাঁর অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে নতুন করে পরিচিত করেছেন এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে উচ্চাসনে আসনে বসিয়েছেন ।
আন্তর্জাতিক একাডেমিক কমিউনিটি তাঁর অবদান সম্পর্কে অবহিত রয়েছেন পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম ও ভারতের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ আইন, সাহিত্য, লিবারেল আর্টস ও হিউম্যান লেটার্স বিষয়ে ৯টি সম্মাননাসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে।
২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস(এমডিজি) বিশেষ করে শিশু মৃত্যুহার হ্রাসের জন্য জাতিসংঘ থেকে এমডিজি এওয়ার্ড লাভ করেন।
দেশের উন্নয়নে তাঁর অব্যাহত স্বীকৃতি হিসেবে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ(এসডিজি) অর্জনে আইসিটি ব্যবহারের জন্য ২০১৫ সালে জাতিসংঘের ‘আইসিটি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট এওয়ার্ড’ লাভ করেন।
রাজনীতিতে নারী ও পুরুষের বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালনের জন্য ওই বছরের উইমেন ইন পার্লামেন্ট (ডব্লিউআইপি) এবং ইউনেস্কো তাঁকে ‘ডব্লিউআইপি গ্লোবাল ফোরাম এওয়ার্ড’ প্রদান করে। নারীদের শিক্ষার উন্নয়নে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি ‘ট্রি অব পিস’ এওয়ার্ড অর্জন করেন।
ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই, স্বাস্থ্যখাতে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে নারী ও শিশু মৃত্যুহার কমিয়ে আনার জন্য দুইবার ২০১১ ও ২০১৩ সালে শেখ হাসিনা ‘সাউথ সাউথ এওয়ার্ডে’ ভূষিত হন।
তিনি ১৯৯৯ সালে পার্ল এস বার্ক এওয়ার্ড ও এফএও সিইআরইএস মেডেল, ২০০৯ সালে মাদার তেরেসা এওয়ার্ড, ইন্দিরা গান্ধী পিস এওয়ার্ড, ২০১১, ২০১২ সালে ইন্দিরা গান্ধী গোল্ড প্লেক, হেড অব স্টেট মেডেল, ডাইভারসিটি এওয়ার্ড এবং ১৯৯৭ সালে নেতাজী মেমোরিয়াল এওয়ার্ডে ভূষিত হন।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ও আইসিটি উন্নয়নের জন্য ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে শেখ হাসিনাকে সনদ প্রদান করে।
এর পাশাপাশি শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টা ডান্ডি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিবারাল আর্ট, যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় ও জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি লাভ করেন।
ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশিকোত্তমা(ডক্টর অব লিটারেচার) এবং অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি লাভ করেন।
পিপলস ফ্রেন্ডশীপ ইউনিভার্সিটি অব রাশিয়া ২০০৫ সালে শান্তি, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টর ডিগ্রি প্রদান করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯৯ সালে তাঁকে ডক্টর অব লজ এবং ২০০০ সালে ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব ব্রাসেলস একই সম্মানে ভূষিত করে।
তিনি বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় তাঁর দূরদর্শী পদক্ষেপের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৫ সালে পরিবেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ অর্জন করেন।
শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নে অবদানের জন্য ২০১৬ সালে ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ এওয়ার্ড এবং ‘প্লানেট-৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ সম্মানের ভূষিত হন। ওই বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে এক সংবর্ধনায় দ্য ইউএন উইমেন প্রধানমন্ত্রীকে প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন এবং গ্লোবাল পাটনারশীপ ফোরাম এজেন্ট অব চেঞ্জ এওয়ার্ড প্রদান করেন।