॥স্টাফ রিপোর্টার॥ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা গতকাল ২০শে জানুয়ারী সকাল ১০টায় কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক ও কমিটির সভাপতি মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে সভায় কমিটির উপদেষ্টা রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্স, পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ, বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাইদুজ্জামান খান, বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাসুম রেজা, পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী খান এ শামীম, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শন্তু রাম পাল, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম শেখ, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (চঃ দাঃ) কে.বি.এম সাদ্দাম হোসেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার কামরুল ইসলাম গোলদার, ওজোপাডিকো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আমিনুল ইসলাম, জেলা শিক্ষা অফিসার(ভারপ্রাপ্ত) সামছুন্নাহার বেগম, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে ইয়াসমিন করিমী, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নূরে সফুরা ফেরদৌস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোহাম্মদ আশেক হাসান, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ এম.এ খালেক, গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম নুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) মোঃ রেজাউল করিম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার, বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তা ও কমিটির অন্যান্য সদস্যগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় কমিটির উপদেষ্টা রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে দেশের সার্বিক উন্নয়নকে তরান্বিত করা। আমাদের সকলকে সেই কথাটি মাথায় রেখে যে কোন উন্নয়নমূলক কাজ স্বল্প সময়ে শেষ করতে হবে। কিন্তু সেই তুলনায় রাজবাড়ী জেলা পরিষদের যে কোন কাজ অত্যন্ত মন্থর গতিতে চলছে। বিভিন্ন মাধ্যমে আমি জানতে পেরেছি জেলার সার্বিক উন্নয়নের জন্য জেলা পরিষদে বাজেট এসেছে। সেই বাজেটে সংসদ সদস্যদের এলাকার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করার জন্য একটি বারদ্দ থাকে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে আজ পর্যন্ত আমাকে জেলা পরিষদ থেকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে অবগত করা হয়নি।
তিনি বলেন, পল্লী জনপদের বিভিন্ন রাস্তার উন্নয়নে এলজিইডি কাজ করে। কিন্তু রাস্তার পাশে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খননের কারণে অনেক রাস্তার পাশে মাটি সরে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমি আশা করব জেলা প্রশাসনের সহায়তায় এলজিইডি রাস্তার পাশে যেসব পুকুর রয়েছে সেসব পুকুর মালিকদের দ্বারা পুকুরচালা নির্মাণ করার মাধ্যমে রাস্তার ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কে ১ম পর্যায়ে গোয়ালন্দ মোড় থেকে রাজবাড়ী বাস টার্মিনাল পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি হলেও বাকী কাজের অগ্রগতি হচ্ছে না। এ বিষয়ে অবশ্যই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যাতে আগামী বর্ষার বৃষ্টিপাতের আগেই রাস্তার কাজ শেষ করা সম্ভব হয়। সেটি করা না হলে ওই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারীরা চরম ভোগান্তির শিকার হবে। তাতে সরকারের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জেলা সড়ক বিভাগকে এ বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠাকে কড়া পত্র প্রদান করতে হবে। বিআইডব্লিউটিএ পদ্মা নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য আমাদের সাথে আলোচনা না করে ইচ্ছামতো ড্রেজিংয়ের কাজ করছে, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এর কারণে বেড়িবাঁধের কোন ক্ষতি হলে তাদেরকে সেই দায়িত্ব নিতে হবে। রাজবাড়ীর পদ্মা পাড়ের মানুষের সবচেয়ে বড় দাবী পদ্মার ভাঙ্গন যাতে স্থায়ীভাবে রোধ করা হয়। আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে উড়াকান্দার যেখানে স্থায়ী ভাঙ্গন প্রতিরোধের ব্লক বসানোর কাজ শেষ হচ্ছে তারপর থেকে অন্তারমোড় পর্যন্ত এবং গোদার বাজার থেকে ধাওয়াপাড়া পর্যন্ত দুইটি ডিপিপি তৈরী করে আমার কাছ থেকে ডিও লেটার নিয়ে মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে। যাতে ওই এলাকাকে ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। এভাবে পর্যাক্রমে আমরা দৌলতদিয়া পর্যন্ত স্থায়ী ভাঙ্গন প্রতিরোধের কাজ করব। এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে রাজবাড়ীর বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের বিষয় তুলে ধরেন।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাপসুল খাওয়ানোর জাতীয় ক্যাম্পেইন সরকার স্থগিত করায় গত ১৯শে জানুয়ারী তা খাওয়ানো হয়নি। পরবর্তীতে সরকার কর্তৃক পুনঃনির্ধারিত তারিখে খাওয়ানো হবে। রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। স্বাস্থ্য সেবা যেহেতু একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সুতরাং সে বিষয়টি খেয়াল রেখে স্বল্প সময়ের মধ্যে এই সমস্যার সমাধনে স্বাস্থ্য বিভাগকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, রাজবাড়ী জেলা পরিষদে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করার জন্য বরাদ্দ এসেছে। কিন্তু এতো বরাদ্দ আসলেও গোদার বাজারের বিনোদন কেন্দ্রসহ উন্নয়নমূলক যেসব কাজ অনেক দিন আগে করার কথা ছিল সেগুলো কিছুই করা হয়নি। এ সকল উন্নয়নের বিষয়ে জেলা পরিষদ ধীর গতিতে চলার নীতি অনুসরণ করছে। জেলা পরিষদের কর্মকর্তার তথ্য মতে, আগের বছরে যে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে তার ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, কিছুদিন আগে পাংশা উপজেলা পরিষদের টাকা কোন অনুমোদন না নিয়ে ব্যয় করা হয়েছে। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার বিষয়টি তদন্ত করে গেছেন।
রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স এবং এলজিইডি সদর, গোয়ালন্দ, পাংশা ও বালিয়াকান্দি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের কাজ শেষ করেছে। যা কিছুদিনের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। কালুখালী মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের কাজ বাকী আছে। জমি নিয়ে প্রতিবন্ধকতা দূর হওয়ায় আশা করা যায় সেটিও স্বল্প সময়ের মধ্যে শেষ হবে।
তিনি আরো বলেন, রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের গোয়ালন্দ মোড় থেকে পাংশার শিয়ালডাঙ্গী পর্যন্ত যে প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হয়েছে সেই কাজের চারটি ফেজের মধ্যে গোয়ালন্দ মোড় থেকে শ্রীপুর বাস টার্মিনাল পর্যন্ত কাজের অধিকাংশ শেষ হয়েছে। কিন্তু অন্য তিনটি ফেজের মধ্যে পৌরসভার মধ্যে বাস টার্মিনাল থেকে মুরগীর ফার্ম পর্যন্ত ফোর লেন রাস্তার কাজ জোরেশোরে শুরু হলেও বাকী দুইটি ফেজের কাজ খুবই ধীর গতিতে চলছে। এ অবস্থায় জনসাধারণের চলাচলে খুবই অসুবিধা হচ্ছে। বিষয়টির দিকে নজর দিয়ে সড়ক বিভাগ থেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত কাজ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হচ্ছে।
নাব্যতা সংকটের কারণে জৌকড়রা-নাজিরগঞ্জ রুটে সড়ক বিভাগের ফেরী চলাচল বন্ধ রয়েছে। আমি আশা করি সড়ক বিভাগ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএর সহায়তা নিয়ে ড্রেজিং করে নাব্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ফেরী চলাচল শুরু করবে।
তিনি বলেন, রাজবাড়ীতে দুই ছাত্রীকে যৌন হয়রানী করার দায়ে দুই শিক্ষকের মধ্যে একজনকে জেলার সবচেয়ে দূরবর্তী স্থানে বদলী, অপরজনকে বিভাগের মধ্যে জেলা থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী স্থানে বদলী করার জন্য অধিদপ্তর থেকে নির্দেশনা প্রদান করা হলেও দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও তাদেরকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এখনও বদলী করেনি। কেন তাদেরকে বদলী করা হলো না বিষয়টি আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস স্বল্প সময়ের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। পাশাপাশি জেলার মধ্যে যারা ভালো শিক্ষক তাদের যাথযথ মূল্যায়ন করতে হবে।
এছাড়াও সভায় সদর হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার প্রকল্প, এলজিইডির বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ও নতুন প্রকল্প গ্রহণ, সড়ক বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্প, জেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন করার লক্ষ্যে কাজের অগ্রগতি, রাজবাড়ী বাজার মনিটরিং এর বিভিন্ন বিষয়, এলপিজি গ্যাসের ক্রয়মূল্য কত সে বিষয়ে সম্পর্কে কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের তদন্ত সংক্রান্ত বিষয়, মিল্ক ভিটার দুধ ক্রয় স্টেশন স্থাপন সংক্রান্ত বিষয়সহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
সভা শেষে প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিকীর অবসরপূর্ব ছুটিজনিত কারণে তাকে ফুল ও উপহার দিয়ে বিদায় জানানো হয়।