॥স্টাফ রিপোর্টার॥ পদ্মা নদীর পানি হ্রাস পাওয়ায় নাব্যতা সংকটে রাজবাড়ীর জৌকুড়া ও পাবনার নাজিরগঞ্জ নৌরুটের ফেরী ও লঞ্চ চলাচল ৩দিন ধরে বন্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ বিভাগ(সওজ) ইতিপূর্বে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে ২দিনের জন্য (১৮ ও ১৯শে জানুয়ারী) রুটটি বন্ধ থাকার কথা জানালেও এখন তারা বলছে ২৫শে জানুয়ারী পর্যন্ত ফেরী বন্ধ থাকবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এখনো নৌরুটটি চালু করার জন্য কোন কাজই শুরু করা হয়নি। জৌকুড়া ঘাটের যে পন্টুন থেকে ফেরী ও লঞ্চ চলাচল করতো সেই পন্টুনের নীচে এখন আর পানি নেই, সেটি কাদার উপর দাঁড়িয়ে আছে।
জৌকুড়া ফেরী ঘাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি সোহেল রানা বলেন, এখন পর্যন্ত ঘাটের কোন ধরনের কাজ করা হয়নি। ফেরী ঘাটের অনেক সমস্যা রয়েছে। পন্টুনের নীচে এখন আর পানি নাই। এই পল্টুন অন্য স্থানে নিতেও সমস্যায় পড়তে হবে। এখানে আর ঘাট করা যাবে না। রাস্তা করে অন্য স্থানে এই পল্টুন স্থাপন করতে হবে।
রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ আশিকুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রথমে দু’দিন সময় নিয়েছিলাম ড্রেজিং করার জন্য। সেটা করা হলে আর সমস্যা থাকতো না। যাদের ড্রেজিং করার কথা ছিল, তারা করছে না। গত বছরও ঘাট এখানে ছিল কিন্তু এতটা সমস্যা হয়নি। এ বছর অস্বাভাবিকভাবে পানি হ্রাস পাওয়ায় এই সমস্যা হয়েছে। যে সমস্যাটা হয়েছে সেটা ঠিক করতে আরো ৬দিনের মতো লাগবে। আমরা এখান থেকে পল্টুন অন্য স্থানে নিয়ে বসাবো, সেখান দিয়ে রাস্তা করবো। তাহলে আর সমস্যা থাকবে না।
এদিকে গতকাল ২০শে জানুয়ারী সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় উঠে আসে জৌকুড়া-নাজিরগঞ্জ নৌরুটটির কর্তৃত্ব নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র সাথে সড়ক ও জনপথ বিভাগ(সওজ)’র দ্বন্দ্ব চলছে।
সভায় সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলী কেবিএম সাদ্দাম হোসেন অভিযোগ করে বলেন, বিআইডব্লিউটিএ’র চাহিদা অনুযায়ী রুটটির দায়িত্ব তাদের উপর ছেড়ে না দেওয়ায় তারা নদী খননের জন্য ড্রেজার মেশিন দিচ্ছে না।
জৌকুড়া ঘাট পরিদর্শনকালে দেখা যায়, নদী পারাপারের জন্য যানবাহন এসে এই অবস্থা দেখার পর অন্য রাস্তা দিয়ে চলে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত বোঝাই ট্রলারে করে নদী পার হচ্ছে। ট্রলারে মানুষের পাশাপাশি রিক্সা-ভ্যান, মোটর সাইকেল, অটোরিক্সাসহ ছোট ছোট অন্যান্য যানবাহনও পারাপার করা হচ্ছে। ট্রলারে ভাড়াও অনেক বেশী নিচ্ছে।
গোয়ালন্দ বাজার থেকে আসা মোতালেব ব্যাপারী বলেন, আমি ট্রাক্টর নিয়ে পাবনায় জমি চাষ করতে যাওয়ার জন্য এখানে এসেছিলাম। কিন্তু এসে দেখলাম ফেরী চলাচল বন্ধ আছে। তাই আবার বাড়ী ফিরে যাচ্ছি। আমার এখান দিয়ে আসাটাই বৃথা হলো।
ট্রলার চালক জলিল মুন্সি বলেন, নদীতে আমাদের ট্রলার চালাতেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ট্রলার চরে আটকে যাচ্ছে। নদীতে নেমে ট্রলার ধাক্কা দিয়ে অন্য স্থান দিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। জৌকুড়া থেকে পাবনার নাজিরগঞ্জের দিকে বেশী চর পড়েছে।
ভ্যান চালক করিম বলেন, আমি রাজবাড়ী থেকে মাল নিয়ে পাবনায় যাব। কিন্তু ফেরী বন্ধ থাকায় এখন কি করবো বুঝতে পারছি না। মাল নিয়ে ট্রলারে যেতে পারছি না। দাঁড়িয়ে ভাবছি চলে যাব, না কি করবো।
উল্লেখ্য, জৌকুড়া-নাজিরগঞ্জ নৌরুটে ২টি ইউটিলিটি ফেরী মাধ্যমে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হতো। ফেরীগুলো প্রতিদিন সকাল ৮টা, ৯টা, দুপুর সাড়ে ১২টা, আড়াইটা ও রাত ৯টায় ধাওয়াপাড়া ঘাট থেকে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন নিয়ে নাজিরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেত।