॥কাজী তানভীর মাহমুদ॥ অন্যান্য ফসলের চেয়ে চাষ পদ্ধতি সহজ ও মূল্য বেশী হওয়ায় রাজবাড়ীতে হলুদের চাষ বেড়েছে। তবে চলতি মৌসুমে অতি বৃষ্টি ও পচন রোগে আক্রান্ত হওয়ায় রাজবাড়ীর হলুদ চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আশানুরূপ ফলন না পাওয়ার পাশাপাশি দামও পাচ্ছে কম। এতে তারা লোকসানের মুখে পড়েছে।
রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর রাজবাড়ী জেলায় ১ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে হলুদ চাষ হয়েছিল। এ বছর হয়েছে ১ হাজার ৩৩৫ হেক্টর জমিতে। যা গত বছরের তুলনা ১৫ হেক্টর বেশী। এর মধ্যে রাজবাড়ী সদর উপজেলায় ২৯৫ হেক্টর, বালিয়াকান্দিতে ৬৮০ হেক্টর, পাংশায় ২২০ হেক্টর, কালুখালীতে ১২০ হেক্টর ও গোয়ালন্দ উপজেলায় ২০ হেক্টর জমিতে হলুদের চাষ হয়।
হলুদ চাষীরা জানান, মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় হতে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত হলুদের কন্দ(বীজ) লাগানোর উত্তম সময়। দেরীতে হলুদ লাগালে শুধু গাছের দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে, মোথা বা হলুদ কম হয়। হলুদকে কন্দপঁচা রোগ থেকে রক্ষার জন্য বীজ রোপণের পূর্বে কন্দ শোধন করে নিতে হয়। এরপর বীজগুলো পানি থেকে উঠিয়ে বাঁশের চাটির উপরে রেখে ছায়ায় শুকিয়ে নিয়ে চাষকৃত জমিতে লাইন ধরে রোপণ করতে হয়। হলুদের বীজ হিসেবে কন্দ, মোথা, কুশি ব্যবহার করা যায়। বীজ হিসেবে কন্দকে কেটে টুকরা করা হয়। কিন্তু মোথা ও কুশি আস্ত লাগাতে হয়। প্রতিটি কন্দের ওজন ৩০-৪০ গ্রাম হওয়া বাঞ্চনীয়।
বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের খালকুলা গ্রামের কৃষক সফিক মুন্সি বলেন, ২২ শতাংশ (১ পাখি) জমিতে হলুদ চাষ করতে ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয়। এর মধ্যে বীজ কেনা, জমি চাষ করা, সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করা, পরিচর্যা (নিড়ানী ও আগাছা পরিষ্কার) করা, ক্ষেত থেকে হলুদ তোলা পর্যন্ত অনেক টাকা খরচ করতে হয়। এ বছর চাষের খরচ উঠাতে পারবো কিনা সন্দেহ।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের কৃষক তারেক আলী মন্ডল বলেন, এমনিতেই এ বছর হলুদের ফলন কম হয়েছে। তার উপর কাঁচা হলুদের বাজার মূল্য কম ও শ্রমিকের মজুরী বেশী হওয়াতে লোকসানের মুখে পড়েছি।
বহরপুর ইউনিয়নের বাড়াদী গ্রামের হলুদ চাষী বাবু মোল্লা বলেন, হলুদে এবার পচন রোগ ধরেছিল। এ কারণে ক্ষেত থেকে আগাম হলুদ তুলে ফেলতে হয়েছে। ফলন ভালো হয় নাই। প্রথম দিকে দাম খুবই কম ছিল। প্রতি মণ হলুদ বিক্রি হয়েছে মাত্র সাড়ে তিনশ টাকায়।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ ফজলুর রহমান বলেন, রাজবাড়ীতে এ বছর ১ হাজার ৩৩৫ হেক্টর জমিতে হলুদের চাষ হয়েছে যা থেকে ৮০০ মেট্রিন টন হলুদ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। হলুদ চাষে পোকার চেয়ে রোগের আক্রমণ বেশী হয়। রোগের মধ্যে কন্দপঁচা রোগ প্রধান। পোকার মধ্যে হলুদ গাছের ডগা ছিদ্রকারী পোকা অন্যতম। আমরা চাষীদের বিভিন্ন ধরনের সেবা ও পরামর্শ প্রদান করে থাকি। ইউনিয়ন পর্যায়েও এসব সেবা দেওয়া হয়। তবে এ বছর অতিবৃষ্টিতে কৃষক কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।