॥স্টাফ রিপোর্টার॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য আগামী ২৪শে ডিসেম্বর থেকে ২রা জানুয়ারী পর্যন্ত সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে। তারা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন।
নির্বাচন কমিশন(ইসি) সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ আজ ১৪ই ডিসেম্বর সন্ধ্যায় নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের একথা বলেন। খবর বাসস।
সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী মাঠে বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগে তিন ধরনের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন ৬৫২ জন, যুগ্ম জেলা জজ থাকবেন ২৪৪জন। আর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন ৬৪০ জন। তারা নির্বাচনের ২দিন আগে থেকে নির্বাচনের পরদিন পর্যন্ত মোট ৪দিন দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া ১হাজারের মতো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা বিজিবি, র্যাব, পুলিশ সদস্যদের নিয়ে দায়িত্ব পালন করবেন। এরাই মূলত ভোটের মাঠে বিচারিক দায়িত্ব পালন করবেন। ফলে আলাদা কোনো বাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
সচিব বলেন, কমিশন নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এখন বাকি শুধু নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ের প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া। অন্য সকল ধরনের প্রশিক্ষণ ও কার্যক্রম ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ব্যালট পেপার ছাপানোর কাজ এখনো শেষ হয়নি। তবে ৩০শে ডিসেম্বর নির্বাচনের ৭দিন আগেই দেশের সকল এলাকায় ব্যালট পেপার পৌছানো সম্ভব হবে। উচ্চ আদালত থেকে বিভিন্ন এলাকার প্রার্থিতা বিষয়ে এখনো নির্দেশনা আসছে। এসব নির্দেশনাগুলো সমন্বয় করে এরপর ব্যালট পেপার তৈরি করা হবে। যেসব এলাকায় সমস্যা নেই, ওইসব এলাকার ব্যালট পেপার তৈরি ইতোমধ্যে শুরু করে দেয়া হয়েছে। যেসব এলাকায় সমস্যা আছে এগুলো একটু সময় নিয়ে করা হচ্ছে। তবে আশা করা যাচ্ছে নির্বাচনের ৭দিন আগেই সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে ব্যালট পেপারগুলো পৌছানো সম্ভব হবে।’
হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনাররা দেশের ৮টি বিভাগে যাবেন এবং সেখানে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে মতবিনিময় করবেন এবং তিন পার্বত্য এলাকায় নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা জেলার কর্মকর্তাদের নিয়ে আগামী ১৮ই ডিসেম্বর ইসি সমন্বয় সভা করবে। একই দিন বিকেলে চট্টগ্রামেও একই ধরনের সমন্বয় সভা হবে।
প্রার্থীরা এলাকায় যেতে পারছেন না। প্রার্থীদের পক্ষ থেকে কমিশনে দেয়া এমন অভিযোগ সম্পর্কে সচিব বলেন, ‘প্রার্থীদের প্রতিটি অভিযোগই কমিশন গুরুত্ব সহকারে দেখছে এবং আমলে নিচ্ছে। এগুলো সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার ও ইলেকট্রোরাল ইনকোয়ারি কমিটির কাছে পাঠাচ্ছে। তারা এ সব বিষয় তদন্ত করে দেখছে। বেশ কয়েকটি তদন্ত রিপোর্ট আমাদের হাতেও এসেছে। তাতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচেছ, অভিযোগগুলোর সত্যতা নেই। আর যে অভিযোগগুলোর সত্যতা পাওয়া গেছে সেগুলোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, আইন-শৃংখলা বিষয়ক সমন্বয় সভায় পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ অন্যান্য বাহিনীর প্রধানদের কমিশনাররা অহেতুক কাউকে কোন হয়রানি যেন করা না হয় এবং ওয়ারেন্ট ছাড়া কাউকে যেন গ্রেফতার না করা হয়।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে যে, যদি কোন পেন্ডিং ওয়ারেন্ট থাকে এবং তা তামিলে আদালতের কোন তাগিদ থাকে তাহলে তাদের গ্রেফতার করা যাবে। আসলে ওয়ারেন্টভুক্তরা অনেকেই আত্মগোপনে ছিলেন। এখন ভোটের মাঠে তারা দৃশ্যমান হয়েছেন। এ কারণে হয়তো পুলিশ তাদের ধরছে বা ধরার চেষ্টা করছে।
সাংবাদিকদের ভোট কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত পর্যবেক্ষকদের জন্য(স্থানীয় ও বিদেশি) আলাদা আলাদা নীতিমালা রয়েছে। তবে সাংবাদিকদের জন্য এ ধরনের কোন নীতিমালা ইসির নেই। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে সভা থেকে সাংবাদিকদের জন্যও একটা নীতিমালা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে কমিশনাররা বলেছেন, সাংবাদিকরা ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবেন, ছবি তুলতে পারবেন। এমনকি ভোটারদের মতামতও নিতে পারবেন। এসব ব্যাপরে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে সরাসরি সম্প্রচারের ক্ষেত্রে কিছুটা বাধ্যবাধকতা রাখার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। আমরা এ ব্যাপারে পরে বিস্তারিত জানাবো।’
ড. কামাল হোসেনের উপর হামলার বিষয়ে সচিব বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে কমিশনে কেউ অভিযোগ করেনি। করলে ইসি বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।
ভোটের দিনে সাংবাদিকরা ভোট কেন্দ্রে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন নির্দেশনা দিয়েছে যে, ভোট কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসারদের কাছে ফোন থাকবে এবং পুলিশ ইনচার্জ ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। অন্যান্যদের কাছে ফোন থাকতে পারে, তবে তারা ভোট কক্ষে তা ব্যবহার করতে পারবেন না। সাংবাদিকরা মোবাইল ফোন নিয়ে যেতে পারবেন। তবে তা কেন্দ্রের ভেতরে ব্যবহার না করে বাইরে ব্যবহার করতে পারবেন।