॥সুশীল কুমার দাস॥ ‘উন্নয়নের অভিযাত্রায় অদম্য বাংলাদেশ’ শ্লোগানকে সামনে রেখে সারা দেশের ন্যায় রাজবাড়ী শহরের বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ খুশি রেলওয়ে মাঠে জেলা প্রশাসন আয়োজিত ৩দিনব্যাপী ৪র্থ জাতীয় উন্নয়ন মেলা জমে উঠেছে।
সরেজমিনে ঘুরে মেলার স্টলগুলোতে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। আজ ৬ই অক্টোবর মেলার শেষ দিনে মনোজ্ঞ অ্যাক্রোবেটিক ও আতশবাজী প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজন রয়েছে।
গতকাল ৫ই অক্টোবর বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মেলার মাঠ পরিদর্শনকালে দেখা যায়, দর্শনার্থীরা আগ্রহ সহকারে স্টলগুলো ঘুরে দেখছেন। স্টলের কর্মীরা দর্শনার্থীদের উন্নয়ন সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য দেয়ার পাশাপাশি তাদের হাতে স্ব-স্ব দপ্তর/বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত পুস্তিকা, লিফলেট, হ্যান্ডবিল ইত্যাদি তুলে দিচ্ছে। অনেক স্টলে বড় পর্দায় উন্নয়ন নিয়ে নির্মিত ভিডিওচিত্র প্রদর্শনের পাশাপাশি সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করা হচ্ছে।
একই সময়ে দেখা যায়, মেলার মাঠে মঞ্চে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে কুইজ প্রতিযোগিতা চলছে। সেখানেও উপচেপড়া ভীড়। মঞ্চের সামনে রাখা চেয়ারগুলো কানায় কানায় পূর্ণ। পাশাপাশি চারপাশে দাঁড়িয়েও অনেক দর্শনার্থী আকর্ষণীয় কুইজ প্রতিযোগিতাটি উপভোগ করছে। এ ছাড়াও মেলার মাঠজুড়ে রয়েছে চটপটি, ফুসকা, চা-কফি, বাদাম, পাপড়, নিমকি, চিকেন ফ্রাই, স্যান্ডউইচ, কিমা, ঝালমুড়ি, লেবুর শরবত ইত্যাদির ভ্রাম্যমান অনেক দোকান। সেখানেও প্রায় সববয়সী দর্শনার্থীরাই ভীড় জমাচ্ছে। মূল মেলার মাঠের বাইরেও রয়েছে বাচ্চাদের খেলনা ও অন্যান্য জিনিসের আরও কিছু ভ্রাম্যমান দোকান। আর মেলার মাঠের মধ্যখানে রয়েছে জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম। যেখানে কালেক্টরেটের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণসহ অন্যান্য স্টাফরা দায়িত্ব পালন করছেন।
গণপূর্ত বিভাগের দৃষ্টিনন্দন স্টলে কথা হয় সদ্য যোগদানকৃত নির্বাহী প্রকৌশলী শম্ভু রাম পালের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের স্টলে দেশব্যাপী নির্মাণাধীন উপজেলা মডেল মসজিদ কমপ্লেক্সের সুদৃশ্য একটি মডেল ও গণপূর্তের নির্মিত স্থাপনার মডেল প্রদর্শনের জন্য রাখা হচ্ছে। গণপূর্ত বিভাগ যে সব ম্যাটারিয়ালসহ দিয়ে কাজ করে এবং হেলমেট, রশিসহ যেসব নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করে সেগুলো প্রদর্শন করা হচ্ছে। পাশাপাশি গণপূর্ত বিভাগের বাস্তবায়িত ও বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম নিয়ে প্রকাশিত পুস্তিকা, লিফলেট ইত্যাদি বিতরণ এবং ডিজিটাল বড় পর্দায় উন্নয়ন সম্পর্কিত ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হচ্ছে। এ ছাড়াও স্টলের একটি অংশে বজ্রপাতরোধক দন্ড স্থাপন করা হয়েছে, যা দেখে জনগণ সচেতন হচ্ছে। আমরা দর্শনার্থীদের অনেক সাড়া পাচ্ছি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (রাজবাড়ী এলজিইডি)’র স্টলে কথা হয় সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আমিনুর রহমান ও লেফট টেকনিশিয়ান একেএম সিরাজুল হকের সঙ্গে। তারা বলেন, ইউনিয়নের সঙ্গে ইউনিয়ন, ইউনিয়নের সঙ্গে উপজেলা ও উপজেলার সঙ্গে জেলার সংযোগ সড়কসহ এলজিইডির আওতাধীন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডগুলো দর্শনার্থীদের কাছে তুলে ধরাসহ তথ্যপূর্ণ হ্যান্ডবিল-লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি স্টলের সামনে এলজিইডির উন্নয়নমূলক কাজের একটি মডেলও প্রদর্শন করা হচ্ছে। আমরাও মেলার দর্শনার্থীদের ভালো সাড়া পাচ্ছি।
একইভাবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পুলিশ বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস ও বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী দপ্তরের স্টলগুলোতে স্ব-স্ব বিভাগের কার্যক্রম নিয়ে তথ্যচিত্র প্রদর্শন ও পুস্তিকা-লিফলেট বিতরণসহ দর্শনার্থীদের আগ্রহ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে।
স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে মেলায় ঘুরতে আসা জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কার খান বলেন, সব মিলিয়ে মেলার মাঠ ঘুরে খুব ভালো লাগলো। বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী বিভাগের স্টলগুলোতে যেভাবে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডগুলো তুলে ধরা হচ্ছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তিনি মেলার এই সুন্দর আয়োজনের জন্য জেলা প্রশাসনকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান। আবু বক্কার খানের মতো অনেক দর্শনার্থীই তাদের সন্তুষ্টির কথা জানালেন।
উল্লেখ্য, ৩ দিনব্যাপী এই মেলা আজ ৬ই অক্টোবর সমাপ্ত হবে। শেষ দিনের অনুষ্ঠানসূচীর মধ্যে রয়েছে-বিকাল ৩টায় মেলা শুরু, বিকাল সাড়ে ৫টায় ‘বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শন ও আজকের বাংলাদেশ’ বিষয়ক সেমিনার, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাত সাড়ে ৮টায় পুরস্কার বিতরণী, সাড়ে ৯টায় অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী ও ১০টায় বর্ণিল আতশবাজী প্রদর্শনী।