॥রফিকুল ইসলাম॥ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রামের সহযোগিতায় রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শহরের বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ খুশি রেলওয়ে ময়দানে শুরু হয়েছে ৩দিনব্যাপী ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা।
গতকাল ১৯শে জানুয়ারী বিকেলে সাড়ে ৩টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গন থেকে মেলাস্থল পর্যন্ত শোভাযাত্রা শেষে বেলুন উড়িয়ে ও শান্তির প্রতীক কবুতর অবমুক্ত করে মেলার উদ্বোধন করেন রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী।
পরে জেলা প্রশাসক জিনাত আরা’র সভাপতিত্বে আয়োজিত উদ্বোধনী সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, বিশেষ অতিথি হিসেবে সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্স, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ তারিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ মানোয়ার হোসেন মোল্লা, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ এম.এ খালেক এবং সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দা নুর মহল আশরাফী বক্তব্য রাখেন।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত বলেন, পৃথিবী আমাদের হাতের মুঠোয় হাতে চলে এসেছে। অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসেই আমরা বিভিন্ন সেবা নিতে পারছি। আমাদের কর্মকান্ডকে বাড়াতে হবে। এনালগ গতিতে চললে হবে না, ডিজিটাল গতিতে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে যখন আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবো, তখন সবকিছুই ডিজিটালাইজড হবে। সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবায় অনেক গুরুত্ব দিচ্ছে। রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে একযোগে ২৯জন নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। অনলাইনের মাধ্যমে সকল সেবা ও তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। দেশের স্বার্থে কোন রাজনীতি নাই। আমাদের সকলকে মিলেমিশে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকারী সেবাকে দ্রুত, সহজভাবে ও স্বল্পমূল্যে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন বিভাগ যে উদ্ভাবনী উদ্যোগ নিয়েছে তা জনগণের সামনে তুলে ধরাই এই ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলার উদ্দেশ্য।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক জিনাত আরা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের মাধ্যমে সেবা প্রদানকারী ও সেবা গ্রহণকারীরা সকলেই সুবিধা পাবে। ডিজিটাল মেলার মাধ্যমে সকল সেবা সম্পর্কে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ সৃস্টি হয়েছে। ৫টি মৌলিক অধিকার সম্পর্কে মেলার মাধ্যমে জানতে পারবো। মাল্টিমিডিয়া ক্লাস হচ্ছে। শিক্ষা খাতের উন্নয়ন দেশকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। এখন আর থেমে থাকার সুযোগ নাই। মেলায় বিভিন্ন কুইজ প্রতিযোগিতা হবে। বিভিন্ন ধরণের খেলার আয়োজন করা হবে। পরবর্তীতে শিক্ষার মেলাও করা হবে। আমাদের উন্নয়ন বেগবান করতে যা যা করার আমরা সবাই মিলে করবো। দেশকে এগিয়ে নিতে একসাথে কাজ করবো। এখন মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। মানুষ এখন অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হয়েছে, গড় আয়ু বেড়েছে, শিক্ষার হার বেড়েছে, নারী সমাজের উন্নয়ন হয়েছে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ২০২১ সালের মধ্যে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে দেশ এগিয়ে চলেছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্স বলেন, জনগণের স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নে বর্তমান সরকারের আমলে স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক উন্নতি এবং উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে। শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে। টিকাদান কর্মসূচীর কাভারেজ বেড়েছে। ম্যালেরিয়া, যক্ষা, এইচআইভি সংক্রমন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে। গ্রামীণ জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকল্পে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে এবং বিনামূল্যে ঔষধ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। মানুষের জীবন রক্ষার জন্য ব্লাড গ্রুপের ডাটাবেজ তৈরী করা হচ্ছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ তারিকুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা সবাই এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। বিগত ১০বছরে বাংলাদেশ দ্বিগুণ এগিয়েছে। বিশ্বের দরবারে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি। জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমনে আমরা বিশ্বের সর্বোচ্চ স্থানে আছি। প্রযুক্তির ব্যবহার ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ দৃঢ়তার সাথে কাজ করছে।
সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ এম.এ খালেক বলেন, আমাদের বহু কষ্টার্জিত এই বাংলাদেশ। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই দেশ অর্জন হয়েছে তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। আমাদের মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা এগুলো সরকার পূরণ করছে। শিক্ষা খাতে সরকারের ভূমিকা প্রশংসনীয়। পহেলা জানুয়ারী সকল শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে বই দিচ্ছে সরকার। বিনা বেতনে শিক্ষার সুযোগ ও গরীব, মেধাবী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। পোষাক শিল্পে দেশ অনেক এগিয়েছে। প্রতিটি মানুষ যাতে বাসস্থান পায়, সরকার তার ব্যবস্থা করছে। মানুষের ঘরে ঘরে বিদুৎ পৌঁছে যাচ্ছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হচ্ছে। আমরা আশা করি দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় ২য় পদ্মা সেতুও খুব দ্রুত নির্মিত হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ মানোয়ার হোসেন মোল্লা ‘রাজবাড়ী জেলা ব্র্যান্ডিং’ সম্পর্কিত মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, জনসাধারণের মধ্যে রাজবাড়ী সম্পর্কে একটা পজিটিভ ইমেজ তৈরী করাই এই ব্র্যান্ডিং এর উদ্দেশ্য। তিনি মেলায় স্টলসমূহের উদ্ভাবনী সেবা ও পরামর্শ সম্পর্কে অবহিত করেন, বিশেষ করে নির্বাচন অফিসের স্টল থেকে ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ ও বিআরটিএ’র স্টল থেকে লার্নার লাইসেন্স প্রদানের কথা উল্লেখ করেন।
উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর শিল্পীগণসহ স্থানীয় শিল্পীবৃন্দ সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন স্কুল শিক্ষিকা চায়না সাহা ও গুলশান আরা মোস্তফা।
উল্লেখ্য, মেলার মিডিয়া পার্টনার হিসেবে দৈনিক মাতৃকন্ঠ মেলা উপলক্ষে গতকাল ১৯শে জানুয়ারী বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে।
তিন দিনব্যাপী এই মেলায় আজ ২০শে জানুয়ারী সকাল সাড়ে ৯টায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে রচনা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, বিকাল ৩টায় স্টলে সেবাসমূহ উপস্থাপন, তাৎক্ষণিক পরামর্শ ও সেবা প্রদান, সোয়া ৩টায় বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সোয়া ৪টায় সেমিনার ও সন্ধ্যা ৬টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আগামীকাল ২১শে জানুয়ারী সকাল ১০টায় মাদক বিরোধী সাইকেল র্যালী, সকাল ১১টায় স্টলে সেবাসমূহ উপস্থাপন, তাৎক্ষণিক পরামর্শ ও সেবা প্রদান, বিকেল সোয়া ৪টায় সমাপন অনুষ্ঠান, আলোচনা, কুইজ ও পুরস্কার বিতরণ, সন্ধ্যা ৬টায় সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং রাত ৮টায় আতশবাজীর প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে।