॥এম.এইচ আক্কাছ॥ ঘুম-গোসল, খাওয়া-দাওয়ার ঠিক নেই। মানসিক ভারসাম্যহীন একজন বিকারগ্রস্থ ব্যক্তি। বেশ-ভুষা, চাল-চলনে তাকে একজন পাগল মনে হলেও তিনি তা নন। কথা-বার্তা তেমন একটা বলেন না। সুন্দর হাতের লেখা ও অসাধারণ চিত্রকর্মগুণের এই মানুষটি দীর্ঘদিন ধরে ভবঘুরে হয়ে বেড়াচ্ছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, গত ৮ই মে দুপুরের দিকে গোয়ালন্দ উপজেলা কমপ্লেক্স এলাকার ডরমেটরি ভবনের পাশের পুকুর পাড়ে টয়লেটের স্লাবের উপর আপন মনে আলপনা এঁকে চলেছেন তিনি। লিখছেন সুন্দর সুন্দর বাণী। তিনি ছবি আঁকতে ব্যবহার করেন, কয়লা, মাটি, সাদা চক, ইটের খোয়া, গাছের পাতা প্রভৃতি।
পাগল বেশে থাকা এই ভবঘুরে আঃ কাদেরের চিত্রকর্ম সবাইকে মুগ্ধ করছে। তার চারদিকে উৎসুক ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ মানুষের ভীড়। অনেকেই তার ছবি তোলার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ করছেন নানা প্রশ্ন। কিন্তু তিনি কারো কোন কথার জবাব দিচ্ছেন না। কাপড়ে মুখ ঢেকে ছবি তুলতে নিষেধ করছেন। তিনি ফুল, পাখি, নানা রকম ফুলের গাছ এঁকে চলেছেন আপন মনে। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় তার আলপনায় তিনি লেখেছেন, শত ব্যথার মাঝেও যে হাসি, সে হাসি অনেক দামী, জগতের সব মানুষ সমান না, সব মানুষও মানুষ না, কঠিন মানুষের কাছে এ প্রতিভার কোন মর্যাদা নেই, এমন জীবন তুমি করিবে গঠন, মরণে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভূবন, ছন্ন ছাড়া মন আর কোথাও থাকে না প্রভৃতি। তেমন একটা কথাবার্তা না বললেও অনেক অনুরোধের পর লিখে জানান, তার নাম আঃ কাদের। তার বাড়ী ভোলা জেলায়। ১৯৯০ সালে এইচএসসি পাশের পর আর্টের কাজ করতেন। বিয়ে করেছিলেন কিন্তু স্ত্রী তার সঙ্গে থাকেননি। তবে কেন ও কতদিন ধরে তার এ ভবঘুরে অবস্থা সে সম্পর্কে তিনি কিছুই জানাননি।
স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর মোঃ নিজাম উদ্দিন শেখ, শিক্ষক লিয়াকত হোসেন, অজয় বিশ্বাসসহ অনেকেই দেখেশুনে মন্তব্য করেন, মনে হয় লোকটি অনেক মেধাবী ও শিক্ষিত। হয়ত কোন প্রচন্ড মানসিক আঘাতে তার আজকের এ অবস্থা হয়েছে। তাকে ভালো কোন পরিবেশে রেখে চিকিৎসা করালে হয়তো সে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে পারে।
গোয়ালন্দ উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোঃ জহিরুল ইসলাম বলেন, এই মানুষগুলো সাধারণত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান না। তবে আমি তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করব এবং তার জন্য কিছু করার থাকলে করতে চেষ্টা করব।