॥কাজী তানভীর মাহমুদ॥ রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার মাটি উর্বর, উঁচু ভূমি, চাষে ঝুঁকি কম ও বিক্রির সুবিধা থাকায় দিন দিন বাড়ছে কলা চাষীর সংখ্যা। এ উপজেলায় শত শত হেক্টর জমিতে এখন চলছে কলার আবাদ। তবে কলা চাষীরা স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করেছেন।
চলতি মৌসুমে বালিয়াকান্দির কলা চাষীরা প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে সবরি, কাঁচা, মদনা, বিচি প্রভৃতি প্রজাতীর কলার চাষ করেছেন। ধান, পাট, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচের পাশাপাশি অন্যান্য ফসলের তুলনায় কলা চাষে কম ঝুঁকি, অধিক লাভ ও বিক্রয়ের নিশ্চয়তার কারণে দিন দিন কলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। এ উপজেলার কলা স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে। কলার ফুল বের হবার সাথে সাথে পাইকারী বিক্রেতারা বাগান ক্রয় করে থাকে। এই উপজেলা থেকে সপ্তাহে ১০ থেকে ১৫ ট্রাক কলা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়।
অভিযোগ রয়েছে, কলা চাষের পরামর্শের জন্য কৃষকরা অনেক বার যোগাযোগ করেও দেখা পাননা স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের। এর ফলে চাষীরা কলা চাষের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
কৃষকরা জানান, চারা রোপনের ৯ থেকে ১১ মাসের মধ্যে কলা বিক্রির উপযোগী হয়। প্রতি একরে ১২শ চারা রোপন করা যায়। পরিচর্যাসহ এতে খরচ হয় প্রায় ১লক্ষ টাকা। কলা বিক্রি হয় প্রায় ৩লক্ষ টাকার মত। জমিতে একবার কলা চাষ শুরু করলে ৫বার পর্যন্ত কলা পাওয়া যায়। এ উপজেলায় কাঁচা কলা, সবরি কলা এবং মদনা কলা এই তিন জাতের কলাই বেশী চাষ করেন কৃষকরা। তবে কাঁচা কলার চাষাবাদ ও উৎপাদন তুলনামূলক বেশী। ২৫ শতাংশ জমিতে ২৫০ থেকে ৩০০টি গাছ রোপন করা করা যায়। শুধুমাত্র দুইবার জৈব সার এবং একবার সেচ দিতে হয়।
ইসলামপুর ইউনিয়নের রামদিয়া গ্রামের সফল কলা চাষী মকু বিশ্বাস বলেন, বালিয়াকান্দি উপজেলার মাটি কলা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এখানকার কৃষকরা সবরি, কাঁচা(আনাজ), মদনা ও সাগর প্রভৃতি জাতের কলা চাষ করছেন। কলা চাষ সাধারণত উঁচু জমিতে করতে হয়। এই অঞ্চলে জমি উঁচু হওয়ায় ব্যাপক কলা চাষ হচ্ছে। আমার প্রায় ৪০ পাখি জমিতে সবরি ও ১০ পাখি জমিতে কাঁচা কলার চাষ করছি। তবে কলা চাষে বিভিন্ন সময়ে পোকা লাগে। পোকা লাগলে আমরা অসহায় হয়ে পড়ি। কৃষি অফিস থেকে কোন প্রাকার পরামর্শ বা সহযোগিতা পাই না। ইসলামপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আঃ রব কোন দিন আমাদের এলাকায় কলা বাগান দেখতে আসের না। কোন পরামর্শও প্রদান করেন না। কলা চাষ প্রকৃতপক্ষে অনেক ব্যয়বহুল। সরকারীভাবে অনুদান বা সহযোগিতা পেলে আমরা প্রান্তিক কৃষকরা উপকৃত হবো। তিনি আরও বলেন, কলা চাষ করে আজ আমি সফলতা পেয়েছি। বাড়ী-ঘর তৈরী করে পরিবার নিয়ে আগের চেয়ে ভালো আছি।
আরেক কলা চাষী মিলন খলিফা বলেন, কলা চাষ অনেক লাভজনক। কিন্তু রোগ-বালাই হলে একেবারে শেষ। অন্যান্য ফসলের চেয়ে কলা চাষ করে অধিক লাভবান হওয়া যায়। কিন্তু কৃষি অফিস থেকে আমরা কোন প্রকার সহযোগিতা পাই না। সরকারীভাবে সহযোগিতা ও কৃষি অফিসারদের পরামর্শ পেলে আমাদের কলা চাষ আরও ভালো হবে।
কৃষাণী তামান্না আক্তার বিউটি বলেন, আমরা মেয়েরা পরিবারের পুরুষ সদস্যদের পাশাপাশি নিজেরাও কলা চাষে পরিশ্রম করে সফলতা পেয়েছি। প্রায় ৪০ পাখি জমিতে আমাদের কলা চাষ হচ্ছে। কলা চাষ করে যে আয় হয় তা দিয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াসহ সকল খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছে। এ অঞ্চলে কলা চাষের মাধ্যমে অনেক দরিদ্র কৃষক স্বাবলম্বী হয়েছেন। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কলা চাষে অবদান রাখছেন।
কলা ব্যবসায়ী জামাল হোসেন বলেন, বালিয়াকান্দিতে কলার ভালো আবাদ হয়। এ অঞ্চল থেকে প্রতি সপ্তাহে ২ট্রিপ কলা ট্রাক বোঝাই করে ঢাকায় নিয়ে যাই। ঢাকার কোনাবাড়ী, টঙ্গী, বাইপাইল, কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে এসব কলা বিক্রি হয়। বালিয়াকান্দির কলা দেখতে সুন্দর ও খেতে মিষ্টি হওয়ায় এ কলার চাহিদা বেশী।
কৃষকদের অভিযোগ অস্বীকার করে ইসলামপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কাজী আঃ রব বলেন, আমার এরিয়ায় কৃষকদের সাথে সব সময় যোগাযোগ রক্ষা করার চেষ্টা করে থাকি। বিভিন্ন সমস্যায় কৃষকদেরকে পরামর্শ দেই। কয়েকজন কৃষকের সাথে যোগাযোগ হয়তো কম হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক(শস্য) ড. মোঃ মোশাররফ হোসেন জানান, গত ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে জেলায় ৬৫০ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়েছিল। যার মধ্যে বালিয়াকান্দিতেই ১৫০ হেক্টর জমিতে কৃষকেরা কলার চাষাবাদ করে সফলতা পেয়েছে। পাশাপাশি জেলার সদরে ২৯৫, পাংশায় ১৮৫, কালুখালীতে ১০ ও গোয়ালন্দে ১০ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে কলা চাষের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি ইসলামপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আঃ রবের বিরুদ্ধে কৃষকদের অভিযোগ তদন্ত করে গাফিলতি থাকলে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দেন।