॥গোয়ালন্দ প্রতিনিধি॥ ১৯৭১ সালের ২১শে এপ্রিল রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দে সম্মুখযুদ্ধ, প্রতিরোধ ও গণহত্যা সংঘটিত হয়। এতে উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের প্রায় ২৪জন ও বাহাদুরপুর এলাকায় সম্মুখযুদ্ধে বেশ কয়েকজন শহীদ হন।
গোয়ালন্দ প্রতিরোধ ও গণহত্যা দিবস উপলক্ষে গতকাল ২১শে এপ্রিল বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে শহীদ পরিবার, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা প্রশাসন দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা ও শহীদদের স্মরণে গঠিত নামফলকে পুষ্পমাল্য প্রদান করে।
এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে এই প্রথম স্বাধীনতার ৪৭বছর পর গতকাল সকালে বাহাদুরপুর(কালুর মোড়) এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের আয়োজনে দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা ও পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠিত হয়।
শহীদ পরিবার ও সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, ১৯৭১ সালের ২১শে এপ্রিল ভোরে দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার গুরুত্বপূর্ণ গোয়ালন্দ ঘাট দখল নিতে পাকিস্তানের সুসজ্জিত বাহিনী আরিচা ঘাট থেকে একটি ছোট ফেরী, কয়েকটি গানবোট ওই সময়কার গোয়ালন্দের কামারডাঙ্গী এলাকায় আসে। পাক বাহিনীর ঘাটে অবস্থানের খবর পেয়ে মুক্তিকামী সাধারণ মানুষ, ইপিআর, আনসার ও মুক্তিবাহিনীর একটি দল তাদের প্রতিহত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে লাঠিসোঠা, ধারালো অস্ত্রসহ যে যেভাবে পারে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। কিন্তু আধুনিক পাক বাহিনীর সামনে বেশিক্ষণ টিকতে না পেরে সবাই পিছু হঠতে বাধ্য হয়। এই প্রতিরোধ যুদ্ধে শহীদ হন আনসার কমান্ডার ফকির মহিউদ্দিন। পাক বাহিনী ঘাট থেকে এগিয়ে বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে আক্রমণ চালিয়ে ২৪জন নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করে এবং গ্রামটি জ্বালিয়ে দেয়।
গোয়ালন্দের উজানচর বাহাদুরপুর(কালুর মোড়) ও পৌরসভার বদিউজ্জামান বেপারী পাড়া সংযোগস্থলে ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাক হানাদার বাহিনীর মধ্যে সম্মুখযুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। এখানে স্থানীয় ছবেদ মন্ডলসহ কয়েকজন শহীদ হন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের ব্যানারে স্বাধীনতার ৪৭বছর পর প্রথম প্রতিরোধ ও সম্মুখযুদ্ধ দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
স্থানীয় আব্দুল খালেক ওরফে কালু শেখের সভাপতিত্বে সভায় প্রকৌশলী জুয়েল বাহাদুরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার।
বিশেষ অতিথি হিসেবে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবু নাসার উদ্দিন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আমিনুল ইসলাম শফি উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন।
এছাড়াও শহীদ পরিবারের সন্তান উজানচর ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মৃধা, অধ্যাপক ফকির নুরুজ্জামান, আব্দুল খালেক সরদার, জহুরুল হক লাভলু, সাংবাদিক রাশেদ রায়হান বক্তব্য রাখেন।
এ সময় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহৃ হিসেবে এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের ঘোষণা দেন। উপস্থিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতার ঘোষণা দেন। পরে সম্মুখযুদ্ধের তিনটি ঘটনাস্থলে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।