॥স্টাফ রিপোর্টার॥ মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার শপথ গ্রহণের মধ্যদিয়ে সদ্য স্বল্পোন্নত দেশের গ্রুপ(এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরের যোগ্যতা অর্জনকারী গর্বিত জাতি আজ ৪৭তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করবে।
এ বছর আমাদের মহান স্বাধীনতার ৪৭বছর পদার্পনের শুভ মুহুর্তে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের গ্রুপ(এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন বিশেষ মাত্রা যোগ হয়েছে। একই সাথে গত বছরের অক্টোবরে একাত্তরের ৭ই মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া সেই কালজয়ী ভাষণও ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্যর স্বীকৃতি লাভ করে।
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন উপলক্ষে এবার জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে।
সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সাভার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধারা, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশী কূটনীতিকগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সাধারণ জনগণ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশু-কিশোর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এবারই প্রথম স্বাধীনতা দিবসের দিন সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জাতীয় শিশু কিশোর সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সারাদেশে ও বিদেশে একযোগে একই সময়ে শুদ্ধসুরে জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হবে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্দ করে দেয়ার ষড়যন্ত্রে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে অপারেশন সার্চ লাইটের নামে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলার মাধ্যমে বাঙালি জাতির জীবনে যে বিভীষিকাময় যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল-দীর্ঘ নয় মাসে মরণপণ লড়াইয়ের মাধ্যমে বাংলার দামাল সন্তনেরা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে সে যুদ্ধে বিজয় লাভ করে স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনে।
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তনি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানি সেনারা বাঙালি বেসামরিক লোকজনের নির্বিচারে গণহত্যা করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল সকল রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা।
সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগে বঙ্গবন্ধু ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যে কোন মূল্যে শত্রƒর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। মুহুর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়।
দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, শিশু একাডেমীসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাক টিকেট প্রকাশ করবে। হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রমসহ এ ধরনের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।
সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং রাতে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ ভবনসমূহ।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। এদিন রাজধানীসহ জেলা ও উপজেলা শহরের সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকাসহ নানা রঙের পতাকা দিয়ে সাজানো হবে।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের অনুষ্ঠানমালা ঃ আজ ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন জাতীয় কর্মসূচীর আলোকে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।
অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে ঃ প্রত্যুষে রাজবাড়ী পুলিশ লাইন্সে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের শুভ সূচনা। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারী, বেসরকারী, আধা-সরকারী ও স্বায়ত্বশাসিত ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আম্রকানন চত্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, শ্রীপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও রেলগেটের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলক, লোকোশেড বধ্যভূমি, লক্ষ্মীকোলের মুক্তিযোদ্ধা শহীদ রফিক, সফিক, সাদিকের কবরস্থান ও নিউ কলোনীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আঃ আজিজ খুশির কবরস্থানে পুষ্পস্তবক অর্পণ। সকাল ৮টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ খুশি রেলওয়ে ময়দানে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ, বিএনসিসি, আনসার ও ভিডিপি, কলেজ ও বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, সরকারী শিশু পরিবার, রোভার স্কাউটস, বয়েজ স্কাউটস, গার্লস গাইড, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ, ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে ডিসপ্লে এবং কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লেতে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ। দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসকের বাসভবনে জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রীতি সম্মিলনী ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। সাড়ে ১২টায় সাধনা সিনেমা হলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। সুবিধামত সময়ে জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং মন্দির, গীর্জা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক রাজবাড়ী জেলা কারাগার, সরকারী শিশু পরিবার ও সরকারী হাসপাতালে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন।
এছাড়াও বিকাল ৩টায় রাজবাড়ী অফিসার্স ক্লাব ও লেডিস ক্লাব প্রাঙ্গণে মহিলাদের অংশগ্রহণে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক আলোচনা সভা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। সাড়ে ৩টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ খুশি রেলওয়ে ময়দানে সরকারী কর্মকর্তা/কর্মচারী বনাম বেসরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের মধ্যে দাঁড়িয়াবাধা প্রতিযোগিতা এবং জেলা প্রশাসন বনাম রাজবাড়ী পৌরসভা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বনাম রাজবাড়ী বাজার ব্যবসায়ী সমিতি, জেলা পুলিশ বনাম শিক্ষক ও রাজবাড়ী প্রেসক্লাব বনাম জেলা বার এসোসিয়েশনের মধ্যে প্রীতি ফুটবল প্রতিযোগিতা। বিকাল ৫টায় ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের তাৎপর্য এবং উন্নয়ন অগ্রগতি’ শীর্ষক আলোচনা সভা এবং সন্ধ্যা ৬টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী। এছাড়াও সন্ধ্যায় শহরের প্রধান প্রধান সড়কসমূহ ও সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহে আলোকসজ্জা এবং জেলা তথ্য অফিস কর্তৃক রাজবাড়ী রেলগেট সংলগ্ন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলক চত্বরে প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে।
অনুষ্ঠানমালার মধ্যে স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী(কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ) আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী,এমপি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও প্রীতিভোজ অনুষ্ঠানে রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ জিল্লুুল হাকিম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে।