॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ১৮ই ফেব্রুয়ারী সকাল ১০টায় জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্স, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম, রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী, পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ, কালুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী সাইফুল ইসলাম, বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালাম আজাদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) রেবেকা খান, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী খান এ শামীম, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জহিরুল ইসলাম, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকাশ কৃষ্ণ সরকার, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ হাফিজুল ইসলাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মোঃ আব্দুল হামিদ খান, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক গোলাম মোঃ আজম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(ক্রাইম) মোঃ আছাদুজ্জামান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ, বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের উপ-পরিচালক ও কর্মকর্তাগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী তার বক্তব্যে বলেন, ফেব্রুয়ারী মাস ভাষা আন্দোলনের মাস। এই মাসটি আমাদের জন্য একদিকে যেমন দুঃখের, অন্যদিকে তেমনি আনন্দের। দুঃখের এই কারণে যে, ১৯৫২ সালে এই মাসের ২১ তারিখে ভাষার জন্য আমাদের দেশের দামাল ছেলেরা বুকের তাজা রক্ত দিয়েছিলেন। আর আনন্দের কারণ হচ্ছে, ইউনেস্কো দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
তিনি বলেন, রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের টেন্ডার কার্যক্রম ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। যার কাজ কিছু দিনের মধ্যেই শুরু হবে। সিভিল সার্জনের তথ্য মতে, রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দে একটি চক্ষু হাসপাতাল, বালিয়াকান্দিতে বাংলাদেশের একমাত্র গর্ভবতী মায়েদের রিসার্স ইনস্টিটিউট ও পাংশায় মেডিকেল অ্যাসিস্টেন্টদের ট্রেনিং ইনস্টিটিউট তৈরীর পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। আগামী ৩মাসের মধ্যে সরকার সারা দেশে ৫হাজার ডাক্তার ও এই বছরের মধ্যে আরও ৫ হাজার সর্বমোট ১০হাজার ডাক্তার নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা করেছে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ডাক্তারের যে সংকট রয়েছে তা নিরসন হবে বলে আশা করা যায়।
রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের উন্নয়ন কাজের ৩টি অংশের মধ্যে গোয়ালন্দ মোড় থেকে শ্রীপুর বাস টার্মিনাল পর্যন্ত কাজ শুরু হলেও বাস টার্মিনাল থেকে জেলখানা পর্যন্ত এবং জেলখানা থেকে রাজবাড়ী জেলার শেষ সীমানা পর্যন্ত কাজ এখনও শুরু হয়নি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে সড়ক বিভাগ থেকে বারবার তাগিদ দেয়া হলেও তারা আজকাল করে সময়ক্ষেপণ করছে ও তারা নিজেরা কাজটি না করে সাব-কন্ট্রাক্টারকে দিয়ে করাচ্ছে। যার ফলে সাব-কন্ট্রাক্টারের বিভিন্ন সমস্যার কারণে কাজ শুরু করতে দেরী হচ্ছে। এই দেরীর কারণে ভাঙ্গাচোরা রাস্তা ও ধুলা-মাটির কারণে জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, বিষয়টির জনগুরুত্ব বিবেচনা করে এবং আগামী নির্বাচন ও বর্ষা মওসুমের কথা মাথায় রেখে জেলা সড়ক বিভাগ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে স্বল্প সময়ে কাজ শুরু করে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করবে। যাতে আগামী বর্ষায় এই রাস্তার কাদামাটির কারণে জনদুর্ভোগ আরো চরমে না উঠে।
তিনি বলেন, কালুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের তথ্য মতে, রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের মুরগীর ফার্ম থেকে পাংশায় রাজবাড়ীর সীমানার শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় সড়ক বিভাগ ও বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে যোগসাজশে কোন টেন্ডার ছাড়াই রাস্তার দু’পাশের গাছ কেটে লোপাট করা হয়েছে। এ বিষয়ে সড়ক বিভাগ ও বন বিভাগ জেলা প্রশাসনকে কোন তথ্য প্রদান করেনি। এভাবে সরকারী সম্পদ লুটপাটের দায়ে সড়ক বিভাগ ও বন বিভাগ আইন অনুযায়ী কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আমি আশা করি।
তিনি আরো বলেন, দুর্নীতি বা নিম্নমানের কাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে আমাকে যদি এই জেলা ছাড়তে হয় তাতেও আমার কোন আপত্তি নাই। রাজবাড়ী জেলার সকল সরকারী বিভাগকে অবশ্যই সঠিক মান বজায় রেখে কাজ করতে হবে। এ ছাড়াও সভায় দুগ্ধ খামারীদের দুধ বিক্রির জন্য মিল্কভিটার একটি প্রসেসিং প্লান্ট স্থাপন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ কাজের অগ্রগতি, জেলা পাসপোর্ট অফিস ভবন নির্মাণ, রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের মর্গের উন্নয়ন কাজ, এলজিইডি’র বিভিন্ন ইউনিয়ন ভূমি অফিস ভবন নির্মাণ, জেলা পরিষদের মাধ্যমে গোদার বাজার এলাকায় পদ্মা পাড়ের সৌন্দর্য বর্ধন ও স্কুল উন্নয়ন, অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজের অগ্রগতিসহ জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
সভায় আগামী ২১ ও ২২শে মার্চ সরকারী সিদ্ধান্ত মোতাবেক রাজবাড়ীতে পরিবার পরিকল্পা মেলা অনুষ্ঠিত হবে বলে জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ থেকে জানানো হয়।