॥স্টাফ রিপোর্টার॥ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজবাড়ী-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এস.এম নওয়াব আলী।
সম্প্রতি দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে সস্ত্রীক গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারতের পর তিনি সাংবাদিকদের নিকট এ কথা বলেন। এ সময় তিনি তার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের ত্যাগ ও শ্রমের কথা বিবেচনা করে আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারী বোর্ড তার ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন বলে প্রত্যাশা করেন।
বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এস.এম নওয়াব আলী ১৯৫৪ সালের ২০শে মে রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের আলাদিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম সাদেক আলী শেখ। আলাদিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করার পর ভর্তি হন রাজবাড়ী শহরের ইয়াছিন উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ১৯৭০ সালে এসএসসি পাশ করেন। ইয়াছিন উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সময়ে জেনারেল ক্যাপ্টেন্সীর মাধ্যমে তার রাজনীতির হাতে খড়ি। ১৯৬৮ সাল থেকে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত হন। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর আহবানে ও নির্দেশে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধ শেষে আবারও ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত হন এবং ১৯৭৩ সালে রাজবাড়ী সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং রাজবাড়ী সদর থানা আওয়ামী লীগের প্রথম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৬ সাল থেকে একটানা ২০১৫ সাল পর্যন্ত পরপর ৩বার সাধারণ সম্পাদক ও ৩বার সভাপতি হিসেবে একটানা ৪২ বছর সফলভাবে সদর থানা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেন। এরপর ২০১৫ সালে দলীয় কাউন্সিলে জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকা ও আন্দোলন-সংগ্রামে প্রথম সারিতে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর ও ১৯৮৮ সালে ২দফায় কারাবরণ করেন। ২০০৩ সালে অপারেশন ক্লিনহার্টের সময় যৌথবাহিনী তার বাড়ী-ঘর ঘেরাও করে দিনব্যাপী তল্লাশী এবং তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত সরকার ক্ষমতায় আসার পর অস্ত্র ও হত্যা চেষ্টার ২টি মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে ব্যাপকভাবে হয়রানী করে। ওই সময়ে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী কেরামত আলীর মাধ্যমে আইনজীবীর মাধ্যমে হাইকোর্ট থেকে তার জামিনের যাবতীয় ব্যবস্থা করে দেন। ওই সময় দীর্ঘদিন পলাতক থাকাকালে তিনি শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হন। ১৯৭৯ সালে রাজবাড়ী রেলস্টেশন চত্বরে সমাবেশ শেষে মিছিলের প্রাক্কালে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি মোসলেম উদ্দিন মৃধার উপস্থিতিতে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র হামলা চালিয়ে ফকীর আব্দুল জব্বার, তৎকালীন সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহীদুন্নবী আলম, ডাঃ এস.এ সোবহান, মাখনসহ আরও অনেকের সাথে তাকে ভীষণভাবে মারপিট ও নির্যাতন করে। ওই সময় তিনি সদর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। যার দুঃসহ স্মৃতি তিনি এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারীর বিতর্কিত নির্বাচন প্রতিহত করার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখায় আলীপুর কেন্দ্রে তার উপর গুলিবর্ষণের চেষ্টা করা হয়। সেখানকার দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসারসহ এলাকাবাসীর হস্তক্ষেপে তিনি রক্ষা পান। তা স্বত্ত্বেও দীর্ঘদিন তাকে বাড়ী-ঘর ছেড়ে আত্মগোপনে থাকতে হয়। ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে আন্দোলনকালে রাজবাড়ীর গুরুত্বপূর্ণ গোয়ালন্দ মোড়ের দায়িত্ব তার উপর ছিল। ওই সময় তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে গোয়ালন্দ মোড়ে অবস্থান করে আন্দোলনে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আন্দোলন-সংগ্রাম করাকালে তিনি এভাবে বহুবার নির্যাতিত হন। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর মাগুরার মহম্মদপুর-শালিখা আসনে আওয়ামী লীগের তৎকালীন এমপি এডঃ আসাদুজ্জামানের মৃত্যুর পর অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে তার ছেলে সাইদুজ্জামান বাচ্চুকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হলে রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী কেরামত আলীর সঙ্গে এস.এম নওয়াব আলী সেখানে গিয়ে তার ক্যাম্পেইনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং নৌকা প্রতীকের পক্ষে জোরালোভাবে কাজ করেন। ওই উপ-নির্বাচনে তৎকালীন বিএনপি সরকারের ব্যাপক কারচুপি ও ভোট ডাকাতির ঘটনাটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তুমুল আলোচিত হয়। একইভাবে মাদারীপুরের শিবচর আসনে আওয়ামী লীগের তৎকালীন এমপি মৃত্যুবরণ করলে উপ-নির্বাচনে তার ছেলে লিটন চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। এস.এম নওয়াব আলী সেখানেও কাজী কেরামত আলীর সঙ্গে নৌকা প্রতীকের পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে রাজবাড়ী-১ আসনের এমপি প্রার্থী কাজী কেরামত আলীর প্রধান সমন্বয়কারী সাবেক যুগ্ম-সচিব আব্দুল মালেক মিয়ার রাজবাড়ী পৌরসভা মিলনায়তনে আয়োজিত প্রথম মিটিংয়ে নিজ বাড়ী আলাদিপুর থেকে টেম্পুযোগে আসার পথে পাবলিক হেলথ মোড় এলাকায় দুর্ঘটনায় পতিত হন। এতে তার ডান হাত ভেঙ্গে যায়। সেই অবস্থায় মাত্র ৩দিন হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের পর প্লাস্টার করা ভাঙ্গা হাত নিয়েই গায়ে চাদর জড়িয়ে তিনি কাজী কেরামত আলীর নির্বাচনী জনসভাসহ প্রচার-প্রচারণামূলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করেন। দলের প্রতি তার আনুগত্য ও বিশ্বস্ততা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
এস.এম নওয়াব আলী বর্তমানে রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের রাজবাড়ী জেলা শাখার সভাপতি, সদর থানা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সভাপতি ও আলাদিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি ‘নওয়াব গ্রামার স্কুল’ নামে একটি সুনামধন্য কিন্ডার গার্টেনের প্রতিষ্ঠাতা।
ব্যক্তিগত জীবনে এস.এম নওয়াব আলী ২ সন্তানের (১ ছেলে ও ১ মেয়ে) জনক। ছেলে এস.এম মেহেদী হাসান সুমন ময়মনসিংহ কর অঞ্চলের সহকারী কর কমিশনার এবং মেয়ে নাজমীন জাহান সীমা’র স্বামী ইকবাল হুসাইন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব। স্ত্রী মিসেস শাহানা বেগম রাজবাড়ী সদর থানা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী এবং জেলা পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচিত সদস্য।
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে এস.এম নওয়াব আলী বলেন, ১৯৬৮ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কখনো কোন নির্বাচন বা অন্য কোন ক্ষেত্রে দলের বিপক্ষে কোন কাজ কিংবা বিরোধিতা করিনি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সবসময় হৃদয়ে ধারণ করে এসেছি। আশা করি আমার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের ত্যাগ ও শ্রমের কথা বিবেচনা করে আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারী বোর্ড আমার ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন। সারা জীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক এবং সৎ ও ত্যাগী নেতা হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনা তার বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে তিনি আশা করেন। তিনি সকলের দোয়া ও সমর্থন কামনা করেন।