॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর ‘মেমোরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টার-এ অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের’ স্বীকৃতি লাভের অসামান্য অর্জন উপলক্ষে সারা দেশের ন্যায় রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ২৫শে নভেম্বর বর্নাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা, পথসভা ও শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হয়।
সকাল ১০টায় রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আম্রকানন চত্বর থেকে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ড. একেএম আজাদুর রহমানের নেতৃত্বে একটি বর্নাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে এসে শেষ হয়।
আনন্দ শোভাযাত্রায় রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য কামরুন নাহার চৌধুরী লাভলী, জেলা ও দায়রা জজ মোঃ আমিনুল হক, পুলিশ সুপার সালমা বেগম পিপিএম-সেবা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্স, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আলমগীর কবির, রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) রেবেকা খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) মোঃ আব্দুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ ছাদেকুর রহমান, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী খান এ শামীম, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(পাংশা সার্কেল) মোঃ ফজলুল করিম, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশানরগণ, রাজবাড়ী সদর খানার ওসি মোঃ তারিক কামাল, বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, জেলা আওয়ামী লীগসহ স্বাধীনতার স্বপক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, এনজিও প্রতিনিধিগণ, বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগণসহ বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
আনন্দ শোভাযাত্রার শেষে সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসকের আম্রকানন চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় সংক্ষিপ্ত পথসভা। ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ড. একেএম আজাদুর রহমানের সভাপতিত্বে পথসভায় বক্তব্য রাখেন রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য কামরুন নাহার চৌধুরী লাভলী, পুলিশ সুপার সালমা বেগম পিপিএম-সেবা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার ও রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) রেবেকা খান।
পথসভায় বক্তাগণ তাদের বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু বাঙালী জাতির নেতা ছিলেন না-তিনি ছিলেন সারা বিশ্বের গণমানুষের মুক্তির একজন নেতা। আজকে তার ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর ‘মেমোরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টার-এ অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের’ স্বীকৃতি লাভ করায় তার প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের স্বাধীনতা বিরোধী চক্র, পাক হানাদার বাহিনীর সহযোগিতাকারী এদেশীয় রাজকার-আলবদর জামাত-শিবির ও তাদের মদদদাতারা আজও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিভিন্ন প্রকার কটুক্তি করে। আজকে এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মাধ্যমে তাদের সেই কটুক্তি ভূল প্রমাণিত হয়েছে। তারা কখনই চিন্তা করে না যে, বঙ্গবন্ধু সেদিন যদি ৭ই মার্চের ভাষণের মাধ্যমে বাঙালীকে ঐক্যবন্ধ না করে স্বাধীনতার ডাক না দিতেন তবে আজকে আমরা স্বাধীন দেশে বাস করতে পারতাম না। শুধু সেখানেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না, তিনি চেয়েছিলেন বাংলাদেশকে একটি সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে। কিন্তু তার সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদানের আগেই পাকিস্তানপন্থী ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে নির্মমভাবে দুই কন্যা ছাড়া পরিবারের অন্যান্য সদস্য সকল সদস্যসহ তাকে প্রাণ দিতে হয়েছিল। আজকে তারই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন নিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের নতুন প্রজন্ম, যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি-তাদেরকে বঙ্গবন্ধু ও আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস সর্ম্পকে জানতে হবে। যাতে এই ইতিহাস জেনে তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে বিশ্ব পরিমন্ডলে বাংলাদেশকে আরো উচ্চে তুলে ধরতে পারে। তারা নতুন প্রজন্মসহ সকলকে বঙ্গবন্ধু ও আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস সম্পর্কে জানার আহ্বান জানান।
সমাবেশে বক্তাগণ আরো বলেন, ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ নতুন প্রজন্মের কাছে যুগে যুগে প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃৃত দেয়ার সরকার এই কর্মসূচী উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই স্বীকৃতি সমগ্র জাতির জন্য এক বিরাট অর্জন।
এরআগে আনন্দ শোভাযাত্রার পূর্বে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য কামরুন নাহার চৌধুরী লাভলী, জেলা ও দায়রা জজ মোঃ আমিনুল হক, পুলিশ সুপার সালমা বেগম পিপিএম-সেবা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্স, রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) রেবেকা খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ আব্দুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ ছাদেকুর রহমান, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আলমগীর কবির, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী খান এ শামীম, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) মোঃ ফজলুল করিম ও সদর খানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ তারিক কামালসহ অন্যান্যরা পুষ্পমাল্য অর্পন করেন। এছাড়াও কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বেলা ১১টায় রাজবাড়ী অফিসার্স ক্লাবে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা এবং বিকেলে জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ও প্রামাণ্য তথ্যচিত্র প্রদর্শন করাসহ বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় ৭ই মার্চের ভাষণের উপর রচনা, কুইজ ও সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।