॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ৯ই নভেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে ৪৬তম মহান বিজয় দিবস উদযাপনে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে সভায় পুলিশ সুপার সালমা বেগম পিপিএম-সেবা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) রেবেকা খান, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ তৌহিদুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মহসীন উদ্দিন বতু, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার পাল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রাশসক(রাজস্ব) মোঃ আব্দুর রহমান, গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই’র উপ-পরিচালক মোঃ জিল্লুর রহমান, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী খান এ শামীম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা নুরমহল আশরাফী, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(ক্রাইম) মোঃ আছাদুজ্জামান, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমান, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রুবাইয়াত মোহাম্মদ ফেরদৌস, বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী বিভাগের কর্মকর্তাগণ, রাজবাড়ী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথায় দীর্ঘ ৯মাসের যুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত আর ২লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে ১৬ই ডিসেম্বর আমরা বিজয় অর্জন করেছিলাম। এই মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তার ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষনের মাধ্যমে বাঙালী জাতিকে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ও তার পরে কিভাবে আমাদের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হবে তার দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন। সেই ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষনের তাৎপর্য অনুধাবন করতে পেরে মহান স্বাধীনতার ৪৭বছর পরে হলেও বিশ্ব সংস্থা জাতিসংঘের সহ-প্রতিষ্ঠান ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষনের স্বীকৃতি প্রদান করেছে। আমাদের সকলের উচিত বঙ্গবন্ধুর সেই চেতনাকে বুকে ধারণ করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা। ১৯৭১ সাল আর ২০১৭ সাল এক সময় নয়। ১৯৭১ সালে যখন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছিল তখন দেশ ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত। আর ২০১৭ সালে এসে আমরা নিজেদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার মাধ্যমে দেশকে উন্নত করার লক্ষ্যে মিলেনিয়াম ডেভলপমেন্ট গোল (এমডিজি) বাস্তবায়ন করে এখন সাসটেইনেবল ডেভলপমেন্ট গোল (এসডিজি) বাস্তবায়ন করছি। আমরা যে বঙ্গবন্ধু ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধারন করে অনেক দূর এগিয়ে গেছি, এটাই এখন বাস্তবতা। আমাদের সকলকে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নিতে একযোগে কাজ করে যেতে হবে।
তিনি প্রতি বছরের ন্যায় এবারও মহান বিজয় দিবসে রাজবাড়ীতে যে সকল কর্মসূচী পালন করা হবে সে সম্পর্কে বলেন, এবারও যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হবে। এ উপলক্ষে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন কর্তৃক ১৪ই ডিসেম্বর থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হবে। এই উপলক্ষে ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের দিনটিতে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারী ও বেসরকারী ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও ৩১বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হবে। এরপর সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিসহ স্বাধীনতা স্তম্ভ, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলক, বদ্ধভূমি স্মৃতি সৌধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থানসহ শহরের মোট ৬টি স্থানে পুস্পমাল্য অর্পণ করা হবে। সকাল ৯টায় কাজী হেদায়েত হোসেন স্টেডিয়ামে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষন, শিশু কিশোর সমাবেশ, কুচকাওয়াজ ও শারীরিক কসরত অনুষ্ঠিত হবে। বেলা ১২টায় জেলা প্রশাসক কর্তৃক তার বাসভবনে দেশের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা প্রদান করা হবে। সম্মননা প্রদান শেষে বিকাল থেকে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ খুশী রেলওয়ে ময়দানে বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচী পালন করা হবে। এছাড়াও ১৪ ও ১৫ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ খুশী রেলওয়ে ময়দানে বিজয় মেলাসহ প্রতিদিনই বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে রাজবাড়ী জেলার সকল সরকারী-বেসরকারী অফিসে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা করা হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সকলের উদ্দেশ্যে সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনা করা হবে। হাসপাতাল, কারাগার ও শিশু সদনে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। এছাড়াও বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় দেশ থেকে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূল করার লক্ষ্যে জনসচেতনা বৃদ্ধির জন্য সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ বিরোধী বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে। এছাড়াও মহান বিজয় দিবসে সকল সরকারী, বেসরকারী বিভাগ, স্কুল কলেজসহ যে কোন জায়গায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে জাতীয় পতাকার রং, সাইজ ও কোথায় কিভাবে উত্তোলন করতে হবে সে বিষয়ে সরকারী নিয়ম মোতাবেক জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার জন্য সভার পক্ষ থেকে সকলকে অনুরোধ জানানো হয়। কোন অবস্থাতেই ছেঁড়া, রং নষ্ট হয়ে যাওয়া জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা যাবে না। এক্ষেত্রে নিয়ম অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জেলা প্রশাসক উল্লেখ করেন।
সভায় পুলিশ সুপার সালমা বেগম পিপিএম-সেবা বলেন, আমরা রাজবাড়ীবাসী এবারও সারা দেশের ন্যায় যথাযথ মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপন করবো। দিবসটি উপলক্ষে জেলায় যে সব জায়গায় কর্মসূচী পালিত হবে সে সব জায়গায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারীর ব্যবস্থাসহ সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। যাতে যে কোন পরিস্থিতি তাৎক্ষণিকভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব হয়। যেহেতু দেশ থেকে এখনও পুরোপুরি জঙ্গীবাদ নির্মূল করা সম্ভব হয়নি সেহেতু জঙ্গীরা যে অধিক লোক সমাগম হয় এমন স্থানে হামলা করবে না সেটা বলা যাবে না। সুতরাং ১৬ই ডিসেম্বর জেলার যে সকল কর্মসূচীতে অধিক লোক সমাগম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেখানে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে চেক করে একটি ইনট্রেন্স দিয়ে প্রবেশ করানো ও অপর একটি দিয়ে জনসাধারণের বের হওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। আমি আশা করি, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতার মাধ্যমে আমরা রাজবাড়ী জেলাতে মহান বিজয় দিবসের সকল কর্মসূচী সুন্দর ও সু-শৃঙ্খলভাবে পালন করে সক্ষম হবো।