রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২৩ অপরাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে রাজবাড়ীতে র‌্যালী-আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

  • আপডেট সময় শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৭

॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে ‘দুর্যোগ সহনীয় আবাস গড়ি, নিরাপদে বাস করি’ এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ১৩ই অক্টোবর সকালে বর্নাঢ্য র‌্যালী, আলোচনা সভা ও দুর্যোগকালীন মহড়া অনুষ্ঠিত হয়।
সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর নেতৃত্বে একটি বর্নাঢ্য র‌্যালী কালেক্টরেটের আম্রকানন চত্বর থেকে বের হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে রাজবাড়ী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে এসে শেষ হয়।
র‌্যালী শেষে সকাল সাড়ে ১০টায় রাজবাড়ী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবসের আলোচনা সভা।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য কামরুন নাহার চৌধুরী লাভলী ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ও সঞ্চালনা করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রেবেকা খান।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন রাজবাড়ী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বেলা রাণী সরকার ও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক মোঃ ফজলুল হক। এ সময় সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(ক্রাইম) মোঃ আছাদুজ্জামান, জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিক, জেলা তথ্য কর্মকর্তা মোঃ মোক্তার হোসেন মল্লি¬ক, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মহসীন উদ্দিন বতুসহ বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগণ, এনজিও প্রতিনিধিগণসহ সংশ্লি¬ষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভার প্রধান অতিথি রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী তার বক্তব্যে বলেন, সারা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমরা পূর্বের থেকে অনেক বেশী নতুন নতুন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছি। আমাদের দেশে অধিকাংশ অঞ্চলে প্রতিবছরই বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদী ভাঙ্গণ ও বজ্রপাতসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি জায়গায় তালগাছ রোপন করার কর্মসূচী হাতে নিয়েছেন, যাতে বজ্রপাত থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাওয়া যায়। আমাদের এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি নতুন একটি দুর্যোগ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে রোহিঙ্গা সমস্যা। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী মানবিক কারণে এই রোহিঙ্গাদের এ দেশে আশ্রয় দিয়েছেন, যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, আমরা যদি ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারি তবে এই ১০ লক্ষ রোহিঙ্গাকেও খাওয়াতে পারব যতদিন না তারা নিজেদের দেশে মর্যাদাসহ ফিরে যেতে পারে। আমরা আশা করি, আন্তর্জাতিকভাবে এই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হবে।
তিনি জেলাবাসীকে দেশের কল্যাণে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাতকে আরো শক্তিশালী করে তার নেতৃত্বে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহবান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য কামরুন নাহার চৌধুরী লাভলী বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার পাশাপাশি আমাদের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার সরকার ও তাদের সেনাবাহিনীর সৃষ্টি তাদের দেশের নির্যাতিত নাগরিক রোহিঙ্গা সমস্যার মোকাবেলা করছে। মানবিকতার কারণেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদেরকে আমাদের দেশে আশ্রয় দিয়ে বিশ্ব মানবতার এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। যাতে আজ সারা বিশ্ব তাকে মাদার অব হিউমেনিটি উপাধিতে ভূষিত করেছে। দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় রাজবাড়ী জেলা একটি বন্যা ও নদী ভাঙ্গণ কবলিত জেলা। এবারও আমরা এই জেলায় ভয়াবহ বন্যা মোকাবেলা করেছি। কিন্তু এত বড় বন্যা হওয়া সত্বেও জেলার একটি মানুষও না খেয়ে মরেনি বা অন্য কোন কারণে কষ্ট পায়নি। এটি সম্ভব হয়েছে জেলা প্রশাসকের এই জেলার মানুষের প্রতি আন্তরিকাতর কারণে। আমি যখনই তাকে ফোন করেছি তিনি আমাকে বলেছেন পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী মজুত আছে, সেগুলো বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। আমি আমার গ্রামের বাড়ীর বন্যা কবলিত সাধারণ মানুষের মুখে শুনেছি জেলা প্রশাসক তাদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণসহ সার্বিক বিষয়ে সব সময়ে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। আমরা সকলে মিলে যদি আন্তরিকতার সাথে কাজ করি তাহলে যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমরা সহজেই মোকাবেলা করতে পারব।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, মানব জাতি সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে সারা বিশ্বের মানুষই কম-বেশী প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলা করে আসছে। বাংলাদেশকেও বিভিন্ন সময়ে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, ভূমিকম্প, নদী ভাঙ্গণের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ অধিক জনসংখ্যার কারণে মানব সৃষ্ট বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। যখন আমরা পরাধীন ছিলাম তখন পাকিস্তান সরকারের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার পূর্ব প্রস্তুতি না থাকার পাশাপাশি এ দেশের সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাবে যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেক মানুষ মারা যেত। এ দেশের মানুষকে মাত্রাতিরিক্ত শোষণ ও তাদেরকে দুর্যোগকালীন সময়ে কোন সহায়তা না করার জন্য ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে পাকিস্তান সরকারে উপর তার বিরূপ প্রভাব পড়েছিল। বর্তমানে সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবে রুপান্তরিত করায় আজকে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম শক্তিশালী হওয়ার কারণে যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম সতর্কবার্তা প্রদানসহ প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ট যে কোন দুর্যোগে পূর্ব প্রস্তুতি ও করণীয় সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে বিভিন্ন সচেতনতা মূলক কার্যক্রম পরিচালনার ফলে আজকে যে কোন দুর্যোগ সহজেই মোকাবেলা করা সম্ভব হচ্ছে। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী বজ্রপাতকে দেশের নতুন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কারণ রাজবাড়ী জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বজ্রপাতে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। যার কারণে তিনি দেশের সকল বজ্রপাত প্রবণ এলাকায় অধিক সংখ্যক তালগাছ লাগানোর কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন। আমরা রাজবাড়ীবাসী কিছুদিন আগে একটি ভয়াবহ বন্যা ও নদী ভাঙ্গন মোকাবেলা করেছি। এই বন্যার কারণে কৃষকসহ সাধারণ মানুষের অনেক ক্ষতি হলেও জেলায় সর্বোচ্চ রিলিফের ব্যবস্থাসহ বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে সব সমস্যা মোবাবেলা করা সম্ভব হবে। নদী ভাঙ্গণের হাত থেকে রক্ষা পেতে সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে এবার নদী ভাঙ্গণ থেকেও রক্ষা পাওয়া সম্ভব হয়েছে। তিনি জেলার সকলকে সম্মিলিতভাবে যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের পাশে থেকে কাজ করার আহবান জানান।
আলোচনা সভা শেষে রাজবাড়ী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তত্ত্বাবধানে জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিট ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ভূমিকম্প, আগুন, সড়ক দুঘর্টনা, বজ্রপাতসহ বিভিন্ন দুর্যোগে করণীয় ও উদ্ধার কার্যক্রম সম্পর্কিত দুর্যোগকালীন মহড়া অনুষ্ঠিত হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!