॥স্টাফ রিপোর্টার॥ পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা হোসেন তৌফিক ইমামের(এইচ টি ইমাম) দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
তার জন্মস্থান সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া ও ঢাকার গুলশানে দুই দফায় জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে গতকাল ৪ঠা মার্চ বাদ আসর তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
দুপুর ১২টায় উল্লাপাড়া সরকারী আকবর আলী কলেজ মাঠে এইচ টি ইমামের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য, উল্লাপাড়া আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সর্বস্তরের জনগণ তাকে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
জানাযার নামাজে উপস্থিত ছিলেন মরহুমের ছেলে স্থানীয় সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম, সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মন্ডল, সাবেক মন্ত্রী ও সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলহাজ্ব এডভোকেট কে.এম হোসেন আলী হাসান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার, সহ-সভাপতি আবু ইউসুফ সূর্য্য, হাজী ইসহাক আলী, উল্লাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফয়সাল কাদের রুমী, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিরুল ইসলাম আরজু, সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র এস. এম নজরুল ইসলাম, জেলা যুবলীগের সভাপতি রাশেদ ইউসুফ জুয়েল, সাধারণ সম্পাদক একরামুল হক ও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম উজ্জল।
উল্লাপাড়ায় নামাজ শেষে হেলিকপ্টারে মরদেহ ঢাকার নিয়ে আসা হয়। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় উল্লাপাড়ার সোনতলা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে হেলিকপ্টারযোগে তার মৃতদেহ নেয়া হয়।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় প্রথম জানাজা শেষে দুপুর দেড়টার দিকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার লাশ আনা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সর্বস্তরের মানুষ তার কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
প্রথমে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী কফিনে প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর পক্ষ থেকে সংসদের সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস কমোডর এমএম নাঈম রহমান শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
পরে আওয়ামী লীগের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য মুকুল বোস, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব উল আলম হানিফ, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শহীদ মিনারে এইচ টি ইমামের প্রতি শ্রদ্ধা জানান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে.এম খালিদ, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে(সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার দিবাগত রাত সোয়া ১টায় মৃত্যুবরণ করেন এইচ টি ইমাম। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। তিনি কিডনি জটিলতাসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এইচ টি ইমাম আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। ২০০৯ থেকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে জনপ্রশাসন-বিষয়ক উপদেষ্টা এবং ২০১৪ সাল থেকে আমৃত্যু প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এবং প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন হোসেন তৌফিক ইমাম। যিনি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এইচ টি ইমাম নামেই বেশি পরিচিত। ১৯৩৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম ক্যাবিনেট সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ এর পর তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে ক্যাবিনেট সচিবের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। ১৯৭৫-এর ২৬শে আগস্ট পর্যন্ত তিনি ক্যাবিনেট সচিবের পদে নিযুক্ত ছিলেন।
১৯৭৮ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত সাভারের লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত তিনি সড়ক এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত পালন করেন। ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত পরিকল্পনা সচিবের পদে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
এই গুনীজনের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে ও স্বাধীন বাংলাদেশ পরিচালনায় তার অবদান ছিলো স্মরণীয়। দেশের নির্বাচন পরিচালনাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এইচ টি ইমাম। তার মৃত্যুতে আওয়ামী লীগের অপূরণীয় ক্ষতি হলো।