॥ইতালি প্রতিনিধি॥ ইতালিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের আয়োজনে যথাযথ মর্যাদায় ‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালন করেছে।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত দুইদিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল শহীদ মিনারে পুস্প্যমাল্য অর্পণ, জাতীয় পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে অর্ধনমিতকরণ, বাণী পাঠ, ভাষা শহীদদের জন্য দোয়া ও মোনাজাত, আলোচনা সভা এবং বহুভাষা-ভিত্তিক একটি বর্ণিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানের প্রথম দিন গত ২০শে ফেব্রুয়ারী ইতালির স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ১মিনিটে বাংলাদেশ সরকারের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানের সাথে সঙ্গতি রেখে ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোঃ শামীম আহসান দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে নিয়ে অমর একুশের গানের সাথে সাথে দূতাবাসের প্রাঙ্গণে অবস্থিত শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপরে দূতাবাসের সভাকক্ষে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। বাণী পাঠ শেষে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফেরাত এবং দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
দ্বিতীয় দিনে গতকাল ২১শে ফেব্রুয়ারী কর্মসূচী শুরু হয় সকাল সাড়ে ৯টায় রাষ্ট্রদূত কর্তৃক জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণের মধ্য দিয়ে। এরপরে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ১মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ইউনেস্কো-এর মহাপরিচালক এবং ইতালিতে নিযুক্ত ইউনেস্কোর কান্ট্রি ডিরেক্টর কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়।
আলোচনা সভায় প্রবাসী বাংলাদেশী রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিদেশী নাগরিকগণের অংশগ্রহণে একটি প্রাণবন্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ইতালিয়ান প্রফেসর ড. ফ্রান্সেস্কো জানিনি বাংলায় প্রদত্ত তাঁর বক্তব্যে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরতে গিয়ে বাংলাভাষাকে প্রাণের খোরাক হিসেবে অভিহিত করেন।
আলোচনা সভায় ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের ৩জন অনারারি কনসাল জেনারেলও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। বিদেশী নাগরিকদের শুভেচ্ছা বক্তব্যের পরে ‘আমার মাতৃভাষা’ এবং ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস শীর্ষক দু’টি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রামাণ্যচিত্রের পরে প্রবাসী বাংলাদেশী নেতৃবৃন্দ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। বক্তাগণ বাংলাভাষা ও সংস্কৃতি বিদেশে তুলে ধরতে দূতাবাসের নেয়া পদক্ষেপের প্রশংসা করেন।
রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যের শুরুতে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির আন্দোলনে প্রাণ উৎসর্গকারী শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন এবং এই আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃস্থানীয় ভূমিকা তুলে ধরেন। ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, এই আন্দোলনের ধারাবাহিক অর্জনই বাংলাদেশের স্বাধীনতা। রাষ্ট্রদূত বলেন, ভাষার জন্য এই প্রাণদান বিশ্বে এক অনন্য উদাহরণ। ইউনেস্কো এই গুরুত্ব অনুধাবন করেই একুশে ফেব্রুয়ারীকে ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
বহু ভাষা ও সংস্কৃতি-ভিত্তিক বর্ণিল সাংস্কৃতিক আয়োজনে বিদেশী শিল্পীরা (ইতালি, থাইল্যান্ড, ভারত, নাইজেরিয়া, শ্রীলঙ্কা) এবং স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশীরা নৃত্য, সঙ্গীত ও আবৃত্তির মাধ্যমে সবাইকে মুগ্ধ করেন এবং একটি বহুভাষা-বহুজাতির সম্মিলনের বিরল আবহের সৃষ্টি হয়।
উল্লেখ্য, কোভিড-১৯ মহামারীর ভয়াবহতার প্রেক্ষিতে ইতালি সরকার কর্তৃক আরোপিত কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে শুধুমাত্র দূতাবাসের সদস্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী শিশু-কিশোরদের উপস্থিতিতে সীমিত পরিসরে দূতাবাসে এবং অনলাইন প্লাটফর্ম জুমে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়।