॥শিহাবুর রহমান॥ আজ ১৮ই ডিসেম্বর রাজবাড়ী হানাদার মুক্ত দিবস। সারাদেশ যখন বিজয়ের আনন্দে ভাসছে তখনও রাজবাড়ীতে চলে বিহারী, পাকবাহিনী ও রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল যুদ্ধ। এ কারণেই সারাদেশ ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন হলেও রাজবাড়ী হানাদার মুক্ত হয় ১৮ই ডিসেম্বর দুপুরে। পরে মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় উল্লাস করেন। তবে যাদের অবদানে রাজবাড়ী শত্রু মুক্ত হয় সেই সব মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নেই কোন স্মৃতিস্তম্ভ বা কোন প্রতিষ্ঠান।
রাজবাড়ীর মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার ডাঃ কামরুল হাসান লালী জানান, ব্রিটিশ আমল থেকেই রাজবাড়ী রেলওয়ে শহর হিসেবে পরিচিত ছিল। রেলওয়ের শহরের সুবাদে এখানে ১৫ থেকে ২০ হাজারের মতো বিহারী বসবাস করতো। তাদের বসবাস ছিল শহরের নিউ কলোনী, আঠাশ কলোনী, স্টেশন কলোনী ও লোকোশেড এলাকায়। এমনিতে রাজবাড়ীতে বিহারীদের প্রচন্ড প্রভাব ছিল। এরপর আবার আশেপাশের এলাকা থেকেও বিহারী এসে এখানে ঘাঁটি করে। এতে তাদের শক্তি আরো বেড়ে যায়। তারা ঘোষণা দেয় সারাদেশ পাকিস্তানমুক্ত হলেও রাজবাড়ী থাকবে তাদের দখলে। তখন তারা বিভিন্ন স্থানে জ্বালাও পোড়াও এবং হত্যাযজ্ঞে লিপ্ত হয়। এ সময় ১৬ই ডিসেম্বর থেকে ১৮ই ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এ সম্মুখ যুদ্ধে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মাগুরা জেলা থেকেও মুক্তিযোদ্ধারা অংশ নিলে তারা পরাজয় বরণ করে। ফলে স্বাধীনতার দুইদিন পর রাজবাড়ী হানাদার মুক্ত হয়। এ যুদ্ধে রফিক, সফিক, সাদীসহ আরো অনেকে শহীদ হয়। আহত অনেক মুক্তিযোদ্ধা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার জানান, মুক্তিযুদ্ধে রাজবাড়ীতে কামরুল হাসান লালীর বড় বাহিনী ছিল এবং শক্তিশালী ছিল। তার নেতৃত্বে অনেক মুক্তিযোদ্ধা এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনিসহ যাদের অবদান সবচেয়ে বেশি ছিল তাদের নামে রাজবাড়ীতে কোন স্মৃতিস্তম্ভ বা কোন প্রতিষ্ঠান নেই। তাই এসব মুক্তিযোদ্ধাদের নামে স্মৃতিস্তম্ভ বা প্রতিষ্ঠান করার দাবী জানান এ মুক্তিযোদ্ধা।