॥স্টাফ রিপোর্টার॥ আজ ১লা আগস্ট শনিবার মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা।
যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে সারাদেশে মুসলিম সম্প্রদায় ঈদুল আযহা উদযাপন করবে। মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহ লাভের আশায় ঈদুল আযহার জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ অনুয়ায়ী পশু কোরবানী করবেন। নামাজ শেষে মুসল্লীদের অনেকেই যাবেন কবরস্থানে। তারা চির বিদায় নেওয়া তাদের স্বজনদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে অশ্রুসজল চোখে এই আনন্দের দিনে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহর দরবারে আকুতি জানাবেন।
তবে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কার মধ্যেই এসেছে এবারের ঈদ। মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঈদকে ঘিরে যে আনন্দ-উচ্ছাস থাকার কথা তা এবার ম্লান করে দিয়েছে বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) ও দেশব্যাপী ভয়াবহ বন্যা।
রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
এবার ঈদের ছুটি ৩দিন ঘোষণা করেছে সরকার। ঈদ উপলক্ষে গতকাল ৩১শে জুলাই থেকে শুরু হওয়া ছুটি আগামী ২রা আগস্ট থাকবে।
এবারের ঈদের ছুটির সময় সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাধ্যতামূলক কর্মস্থলে থাকতে হবে। তারা কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না।
করোনা মোকাবিলায় ও সংক্রমণ বিস্তার রোধে ঈদুল ফিতরের মতো এই ঈদেও সরকারের নির্দেশনায় খোলা মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। ঈদ জামাত হবে এলাকার মসজিদের ভেতরে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রয়োজনে একই মসজিদে একাধিক জামাত আদায় করা যাবে; কোলাকোলি এবং হাত মেলানো থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় জারিকৃত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এবার পবিত্র ঈদুল আযহার নামাজের জামায়াতের সময় মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না। নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবানুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে। মুসল্লীরা প্রত্যেকে নিজ-নিজ দায়িত্বে বাসা থেকে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন।
প্রত্যেককে নিজ-নিজ বাসা থেকে ওযু করে মসজিদে আসবেন এবং ওযু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধ নিশ্চিত করতে মসজিদে ওযুর স্থানে সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। মসজিদের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান-পানি রাখতে হবে।
জামায়াতে আসা মুসল্লীকে অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে আসতে হবে। মুসল্লীরা মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করতে পারবেন না।
ঈদের নামাজ আদায়ের সময় কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দাঁড়াতে হবে এবং এক কাতার অন্তর অন্তর কাতার করতে হবে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে আরো জানানো হয়েছে যে, শিশু, বৃদ্ধ, যে কোন ধরণের অসুস্থ ব্যক্তি এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি ঈদের নামাজের জামায়াতে অংশগ্রহণ করবেন না।
সারাদেশে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং সরকারি সংস্থাসমূহের প্রধানগণ জাতীয় কর্মসূচীর আলোকে নিজ নিজ কর্মসূচি প্রণয়ন করে ঈদ উদযাপন করবেন।
ঈদ উপলক্ষে দেশের সকল হাসপাতাল, কারাগার, সরকারী শিশু সদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনসমূহে যথাযথভাবে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপন করবে। এ উপলক্ষে সারাদেশে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রক্ষার্থে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রায় চার হাজার বছর আগে মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য হযরত ইব্রাহিম(আঃ) নিজ পুত্র হজরত ইসমাইল(আঃ)’কে কোরবানী করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরম করুণাময়ের অপার কুদরতে হযরত ইসমাইল(আঃ) -এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানী হয়ে যায়। হযরত ইব্রাহিম(আঃ) -এর ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে বিশ্বব্যাপি মুসলিম সম্প্রদায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ লাভের আশায় পশু কোরবানী করে থাকে। আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য আল্লাহ কোরবানী ফরজ করে দিয়েছেন। এজন্য ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কোরবানী করাই এ দিনের উত্তম ইবাদত। সেই ত্যাগ ও আনুগত্যের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সারাদেশের মুসলিম সম্প্রদায় আজ শনিবার দিনের শুরুতেই মসজিদে সমবেত হবেন এবং ঈদুল আযহার দু’রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন। নামাজের খুতবায় খতিব তুলে ধরবেন কোরবানির তাৎপর্য। তবে এবার করোনা ও বন্যার মতো দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে ভিন্ন পরিবেশে কোরবানীর ঈদ হওয়ায় অন্যান্য বারের চেয়ে পশু কোরবানী কিছুটা কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আযহা উদযাপিত হলেও পরের দুই দিনও পশু কোরবানী করার বিধান রয়েছে। সামর্থবান মুসলমানদের জন্য কোরবানী ফরজ হলেও ঈদের আনন্দ থেকে দরিদ্র-দুঃস্থরাও বঞ্চিত হবেন না। কোরবানীর পশুর চামড়া বিক্রির সমুদয় অর্থ এবং কোরবানী দেওয়া পশুর মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ তাদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া হবে।
মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় এই উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও দেশবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।