॥এম.এইচ আক্কাস॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার সরকারী কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপিদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চলমান থাকলেও তারা ঠিকমত ক্লিনিকে আসে না। আগত রোগীদের সাথে খারাপ আচরণ করা, করোনা ভাইরাসের বিষয়ে স্থানীয়দের সচেতন না করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এ সব বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে স্থানীয়রা রাজবাড়ী সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, গোয়ালন্দ উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ১৬টি সরকারী কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। গ্রাম্য এলাকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্টির স্বাস্থ্য সেবার জন্য এ ক্লিনিকগুলো স্থাপিত হলেও গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা কর্তৃক নিয়মিত তদারকি না করায় সেখানে চলছে স্বেচ্ছাচারিতা। সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় কিছু ক্লিনিক অনিয়মিত চললেও অধিকাংশ ক্লিনিকে কর্মরতরা নিয়মিত ক্লিনিকে আসেন না। তারা অধিকাংশ সময় ফিল্ডে থাকার অজুহাত দেখিয়ে অনুপস্থিত থাকেন। ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সাথে তারা খারাপ আচরণ করেন।
উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের কাটাখালী পিয়ার আলীর মোড় নামক স্থানে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। ওই ক্লিনিকে কর্তব্যরত সিএইচসিপি(কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক প্রোভাইডার) খাদিজা নাজনীন পুনমের বিরুদ্ধে স্থানীয়রা রাজবাড়ী সির্ভিল সার্জন ও গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগকারীরা গত ২২শে মার্চ থেকে ১লা এপ্রিল পর্যন্ত ক্লিনিকটি পুরাপুরি বন্ধ থাকার কথা উল্লেখ করেন। ওই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে গেলে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়।
সরেজমিন গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ১১টায় পিয়ার আলীর মোড় কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে একমাত্র খাদিজা নাজনীন পুনমকে উপস্থিত পাওয়া যায়। এ সময় খাদিজা জানান ওই ক্লিনিকে তিনিসহ ৩জন স্টাফ দায়িত্বরত আছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে খাদিজা বলেন অপর ২জনের মধ্যে এইচএ আঃ রহিম ছুটিতে আছেন এবং এফ ডব্লিউ এ ফিরোজা বেগম ফিল্ডে আছেন। অথচ ওই দুই জনের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে ফিরোজা জানান তিনি করোনা ভাইরাসে কোয়ারেন্টাইনের কারণে বাড়ী থেকে আসতে পারেননি। তা ছাড়া তার শরীর খারাপ তিনি শনিবারে ক্লিনিকে আসবেন বলে জানান। পুনমের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে আঃ রহিম উপস্থিত হয়ে জানান তিনি ফিল্ডে ছিলেন।
ওই ক্লিনিকে সাংবাদিকের উপস্থিতি জানতে পেরে স্থানীয়রা এগিয়ে আসেন। এ সময় নুর ইসলাম শেখ, মোঃ সোহেল রানা, মোঃ হাবিবুর রহমান, শাকিল শেখ, মোঃ মিজান শেখসহ অনেই অভিযোগ করে বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর প্রায় ১০/১৫ দিন ওই ক্লিনিক কখনও খোলা হয় নাই। গত কয়েক দিন ২/১ জন এসে ১/২ ঘন্টা খোলা রেখে বন্ধ করে চলে যান। কোন রোগী আসলে ভিতরে ঢুকতে না দিয়ে জানালা দিয়ে কথা বলে তাড়িয়ে দেন। করোনার বিষয়ে পরামর্শ চাইলে তাও দেন না।
খাদিজা নাজনীন পুনম তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের ধরে কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তারা চায় না আমি এখানে চাকুরী করি।
এ ছাড়া ছোট ভাকলা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রে দায়িত্বরত এসএইচসিএম ও আঃ মান্নান ও নিরাপত্তা পোহরী তাপস কুমার দাসকে উপস্থিত পাওয়া যায়।
এরপর সোয়া ১২টার দিকে ছোট ভাকলার স্বরুপারচক কমিউনিটি ক্লিনিকে কাউকে খুজে পাওয়া যায়নি। এ সময় ওই এলাকার রোকেয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম, আঃ লতিফ ফকির, রাসেল সরদার এমদাদুল হক মিলনসহ অনেকেই আক্ষেপ করে বলেন ক্লিনিকে মিলা আক্তার উপস্থিত হওয়ার কিছুক্ষণ পরই চলে যায়। তাছাড়া তিনি সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করেন।
এ বিষয়ে রাজবাড়ী সিভিল সার্জন মোঃ নুরুল ইসলাম জানান, গোয়ালন্দের একটি ক্লিনিকের দায়িত্বে থাকা খাদিজা নাজনীন পুনমের বিরুদ্ধে অভিযোগে পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়াও অন্যান্য ক্লিনিকেও খতিয়ে দেখা হবে।