॥স্টাফ রিপোর্টার॥ ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পালিয়ে আসা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সোনিয়া আক্তার(২৫) ও তার স্বামী পুলিশ কনস্টেবল আব্দুল মালেক সরদার (৩০)কে গতকাল বুধবার সকালে রাজবাড়ী সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের বক্তারপুর থেকে উদ্ধার করে আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় প্রশাসন দাদশী ইউনিয়নের বক্তারপুর ও সমেশপুর গ্রাম লকডাউন করাসহ ৪টি বাড়ীতে হোম কোয়ারেন্টাইন স্টিকার লাগিয়ে দিয়েছে।
দাদশী ইউপির চেয়ারম্যান মোঃ লোকমান হোসেন জানান, তার ইউপির বক্তারপুর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ সালাম সরদারের পুত্র পুলিশ কনস্টেবল মোঃ আব্দুল মালেক সরদারের অন্তসত্বা স্ত্রী সোনিয়া আক্তারকে গত ৩রা এপ্রিল ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে তাকে এম.আর করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে পরদিন ৪ঠা এপ্রিল তাকে ঢাকায় ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পাঠানো হয়। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় ঠান্ডা, জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত হলে সেখানে তার করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় সোনিয়া শরীরে করোনা ভাইরাস পজেটিভ পাওয়া যায়। পরে সেখানে সোনিয়াকে চিকিৎসা না করিয়ে তার স্বামী পুলিশ সদস্য আব্দুল মালেক সরদার হাসপাতাল ত্যাগ করে মাইক্রোবাস যোগে গত ৭ই এপ্রিল রাত ১১টার দিকে নিজ বাড়ী বক্তারপুরে চলে আসে। তাদের সাথে ওই মাইক্রোতে মালেক সরদারের শ্বাশুড়ী, চাচাতো ভাই কালাম পুলিশের ছেলে গার্মেন্টস কর্মী মকিম সরদারসহ ৭জন আসে। তার শ্বশুড় বাড়ী পাশ্ববর্তী সমেশপুর গ্রামে।
ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ লোকমান হোসেন আরো বলেন, সন্তান সম্ভবা সোনিয়া আক্তার তার শ্বশুড় বাড়ী বক্তারপুরেই থাকতো। তার স্বামী মালেক সরদার ঢাকায় চাকুরী করতো। মাতৃত্বজনিত সমস্যার কারণে সোনিয়া আক্তার প্রথমে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। পরে সেখান থেকে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল।
রাজবাড়ী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) স্বপন কুমার মজুমদার বলেন, ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে গত মঙ্গলবার দুপুরে করোনা ভাইরাস সনাক্ত হওয়া রাজবাড়ীর রোগী সোনিয়া পালিয়ে যায়। বিষয়টি পুলিশ সুপার অবহিত হওয়ার পর আমাকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করলে মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করে সোনিয়া ও তার স্বামী পুলিশ সদস্য মালেক সরদারের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে সঙ্গীয় ফোর্সসহ রাত সাড়ে ৩টার দিকে দাদশী ইউনিয়নের বক্তারপুর গ্রামের ৪টি বাড়ী ঘেরাও করে রাখি। পরে স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগিতায় নিজ বাড়ী থেকে সোনিয়া ও তার স্বামী মালেককে উদ্ধার করে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তি করা হয়। সকালে ম্যাজিস্ট্রেট, চিকিৎসক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বক্তারপুর ও সমেশপুর গ্রাম লকডাউন করাসহ ৪টি বাড়ীতে হোম কোয়ারেন্টাইন স্টিকার লাগিয়ে দিয়েছে।
থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার আরো বলেন, পুলিশ কনস্টেবল মোঃ আব্দুল মালেক সরদার পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট এসপিবিএন-এ ঢাকায় কর্মরত ছিল। সম্প্রতি তাকে পিবিআইতে বদলী করা হয়েছে। তবে তিনি সেখানে যোগদান করেননি।
রাজবাড়ী সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, সোনিয়ার শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। সে ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি ছিল। গত মঙ্গলবার সেখান পালিয়ে দাদশীর নিজ বাড়ীতে চলে আসে। পুলিশ গত মঙ্গলবার দিনগত রাত সাড়ে ৩টা থেকে সোনিয়া ও তার স্বামীর বাড়ী ঘিরে রাখে। পরে পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা সোনিয়া ও তার স্বামীকে উদ্ধার করে রাজবাড়ী আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তি করি। আমি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাদের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার(ভূমি) ও নির্বাহী মোঃ আরিফুর রহমান বলেন, বুধবার সকালে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ও পুলিশের সহযোগিতায় দাদশী ইউপির দুটি গ্রামের কয়েকটি বাড়ী লকডাউন করা হয়। লকডাউনের সময় উপস্থিত থাকা দাদশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ লোকমান হোসেন স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করে লকডাউন করা বাড়ীগুলিতে প্রয়োজনীয় দ্রবাদির সরবরাহ নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। লকডাউন করার সময় রাজবাড়ী সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোঃ সাইদুজ্জামান খান, সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) শেখ শরীফ-উজ-জামান ও ওসি স্বপন কুমার মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিট সূত্রে জানা যায়, গতকাল বুধবার সাড়ে ১২টার দিকে সোনিয়া আক্তার ও তার স্বামী মালেক সরদারকে আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি রাখা হয়েছে। ৪টি কক্ষ ও ১০ শয্যা বিশিষ্ট আইসোলেশন ইউনিটে বর্তমানে ৩জন ভর্তি রয়েছে। ভর্তিকৃত আরেকজন একটি মামলার আসামী। তাকে আদালত জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেয়। কিন্তু ওই আসামীর শরীরে জ্বরসহ করোনার উপসর্গ থাকায় জেলা কারাগার তাকে গ্রহণ না করায় পরবর্তীতে আদালতের আদেশে আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। ভর্তিকৃত পুরুষ ২জনের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।