॥সুশীল কুমার দাস॥ আগামী ২৯শে মার্চ অনুষ্ঠিতব্য রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয়সহ মোট ৭জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
তাদের মধ্যে ইতিপূর্বে আওয়ামী লীগের দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী ২জনসহ ৪জন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করায় দলের তৃণমূলে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হওয়াসহ তাদের বিরুদ্ধে জরুরী ভিত্তিতে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার দাবী উঠেছে।
জনশ্রুতি আছে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীরা জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক প্রভাবশালী সহ-সভাপতির সেল্টারে তারা উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে নেমেছেন।
গত ২৫শে ফেব্রুয়ারী গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মোস্তফা মেটাল লিঃ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিল্পপতি মোস্তফা মুন্সিকে দলীয় প্রার্থী মনোনীত করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড। জনপ্রিয় নেতা মোস্তফা মুন্সিকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে একাট্টা হয়ে মাঠে নামে সেই সকল বিতর্কিত নেতারা।
গত ২৭শে ফেব্রুয়ারী আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোস্তফা মুন্সিকে সাথে নিয়ে উপজেলা ও জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। দলীয় প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল উপলক্ষে তৃণমূলে দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা শোডাউন দেয়।
একই দিন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আরও ৪জন প্রার্থী। তারা হলেন ঃ গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের অব্যাহতি প্রাপ্ত বিতর্কিত সাধারণ সম্পাদক ও দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম মন্ডল, গোয়ালন্দ পৌর আওয়ামী লীগের অব্যাহতি প্রাপ্ত সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মাহবুবুর রব্বানী, কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগে যোগদানকারী ছোট ভাকলা ইউনিয়ন পরিষদের বিএনপির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী মিয়া, প্রয়াত চেয়ারম্যান এবিএম নূরুল ইসলামের ছেলে মোঃ আরিফুজ্জামান।
জেলা আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের গত ২রা নভেম্বর রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সভায় সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপসহ বিভিন্ন অভিযোগে গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ নূরুল ইসলাম মন্ডল ওরফে নূরু মন্ডলকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয় এবং ইতিপূর্বে গোয়ালন্দ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ থেকে বহিষ্কৃত উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মাহবুব রব্বানীকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
সূত্র আরো জানায়, জেলা কমিটির ওই সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ্ত চক্রবর্তী কান্তর উপর বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের তদন্ত কমিটির প্রদত্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম মন্ডলের শোকজ নোটিশ ও দাখিলীয় জবাব পর্যালোচনাপূর্বক সর্বসম্মতিক্রমে সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপ, দলীয় ভাবমূর্তি বিনষ্ট, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে সংবাদ প্রকাশসহ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের উপর হামলায় ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় তাকে গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
একই সভায় সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপ ও অনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ততার কারণে ইতিপূর্বে গোয়ালন্দ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কৃত গোলাম মাহবুব রব্বানীকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ পূর্বক কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়। এ বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে তাদেরকে এখন চূড়ান্তভাবে(আজীবনের জন্য) দল থেকে বহিষ্কারের দাবী উঠেছে।
অপরদিকে মোহাম্মদ আলী মিয়া মাত্র কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। বর্তমানে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। তিনি দুই টার্মে ছোট ভাকলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং বিএনপির দায়িত্বশীল পদে ছিলেন। যোগদান করেই দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে দাঁড়ানোয় তাকে বহিষ্কারের দাবী উঠেছে।
অপরদিকে প্রয়াত চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম নূরুল ইসলামের ছেলে মোঃ আরিফুজ্জামানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়টিও ভালোভাবে নেয়নি তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তাকেও দল থেকে বহিষ্কারের দাবী উঠেছে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৭ই অক্টোবর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নুরুল ইসলাম মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদটি শূন্য হয়।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আজ ১লা মার্চ মনোনয়নপত্র বাছাই, ৮ই মার্চ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ এবং ২৯শে মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ৩৫টি কেন্দ্রের ১৯২টি ভোট কক্ষের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। এ নির্বাচনের মোট ভোটার ৯১ হাজার ৬৩১ জন। তার মধ্যে ৪৬ হাজার ২৬০ জন পুরুষ এবং ৪৫ হাজার ৩৭১ জন মহিলা ভোটার রয়েছে।