॥স্টাফ রিপোর্টার॥ মানব পাচার ও প্রতারণার অভিযোগে উইনার ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলস নামক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক রাজবাড়ী সদর উপজেলার ধাওয়াপাড়া ওলিপুর গ্রামের সেই মোঃ কিসমত আলী মন্ডল ওরফে আব্দুল্লাহ আল মামুন (৪৫)কে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
গত ২৪শে ফেব্রুয়ারী রাতে ঢাকার বারিধারা ডিওএইচএস এলাকা থেকে র্যাব তাকে মানব পাচার ও প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার করে। এ সময় তার কাছ থেকে শতাধিক পাসপোর্ট, অনুমোদনহীন ওয়াকিটকিসহ প্রতারণায় ব্যবহৃত নানা সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।
র্যাব-২ জানায়, রাজবাড়ী সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের ধাওয়াপাড়া ওলিপুর গ্রামের মোঃ আফছার আলী মন্ডলের ছেলে প্রতারক কিসমত আলী মন্ডল ওরফে আব্দুল্লাহ আল মামুন পত্রিকায় চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে নানা প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতো। কখনো কখনো ভয় দেখিয়ে আদায় করতো অর্থ। টাকা ফেরত চাইতে এসে অনেকে মারধরের শিকারও হয়েছে। নিজেকে ক্ষমতাধর জাহির করতে সে ওয়াকিটকির অনৈতিক ব্যবহার করতো। প্রতারণার টাকায় গ্রামে যেত হেলিকপ্টারে চরে। অফিস কর্মচারীদের কাউকেই সে দুই মাসের বেশী চাকরীতে রাখতো না।
এদিকে র্যাবের হাতে গ্রেফতারকৃত আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে কেসমতের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার হাটখোলাভিটা গ্রামের হাজী মোঃ আলাউদ্দিন ভুঁইয়া(৪৪) নামে এক ভুক্তভোগী বাদী হয়ে ডিএমপির ক্যান্টনমেন্ট থানায় ২০১২ সালের মানব পাচার আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। ক্যান্টনমেন্ট থানার মামলা নং-১৫, তাং-২৫/২/২০২০ইং, ধারাঃ ২০১২ সালের মানব পাচার আইনের ৬/৮/৭ ।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে কেসমত বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৫০ জনকে বিদেশে পাঠানোর নামে দালাল চক্রের সহায়তায় মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। তাদের মধ্যে হাজী মোঃ আলাউদ্দিনের কাছ থেকে ৮০ লক্ষ টাকা, আলী আকবরের কাছ থেকে ২৩ লক্ষ টাকা, আব্দুল আলিমের কাছ থেকে ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা, ইসমাইল হোসেনের কাছ থেকে ৪ লক্ষ ও ফয়সালের কাছ থেকে ৩২ লক্ষ টাকা নিয়ে তাদেরকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আটকে রাখে। সেখানে আটকে রেখে বিদেশে পাঠানোর জন্য আরও টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যে নির্যাতন করতে থাকে। বন্দীদশা থেকে কৌশলে পালিয়ে হাজী মোঃ আলাউদ্দিন ভুঁইয়া র্যাব-২ ঢাকার কোম্পানী অধিনায়ককে অবহিত করেন। পরে র্যাবের একটি দল রাত সাড়ে ৯টার দিকে বারিধারা ডিওএইসএসের একটি ভবনের ৭ম তলায় উইনার ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলস নামক প্রতিষ্ঠানের অফিস থেকে আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে কেসমতকে আটক এবং সেখানকার একটি কক্ষে আটকে রাখা আলী আকবর, আব্দুল আলিম, ইসমাইল হোসেন ও ফয়সালকে উদ্ধার করা হয়।
উল্লেখ্য, নিজেকে শিল্পপতি পরিচয়ে বেশ কয়েকবার হেলিকপ্টারে রাজবাড়ীর গ্রামের বাড়ীতে আসা, সবসময় হাতে ওয়াকিটকি ও একাধিক সশস্ত্র দেহরক্ষী নিয়ে চলাফেরা করা উইনার গ্রুপের চেয়ারম্যান পরিচয় দেয়া কিসমত আলী মন্ডল ওরফে আব্দুল্লাহ আল মামুন। বিগত দিনে রাজবাড়ীতে নতুন এসপি-ওসি যোগদান করলে তিনি শুভেচ্ছা সাক্ষাৎ করে দিতেন দামী উপহার, ক্রেস্ট ও বড় ফুলের তোড়া। জনশ্রুতি আছে কারো কারো দামী স্বর্ণালংকার, ল্যাপটপ ও দামী মোবাইল ফোন উপহার দেয়াসহ তাদেরকে দাওয়াত করে নিজ বাড়ী ওলিপুরে নিয়ে ভূরিভোজ করাতেন। এ ভাবেই তিনি বিগত দিনে স্থানীয় পুলিশকে ম্যানেজ করতেন। এ ছাড়াও ওয়াজ মাহফিল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে চাঁদা ও নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নে ডোনেশন দিয়ে উপদেষ্টা ও অতিথি হতেন। নিজেকে পরিচয় দিতেন বিশিষ্ট শিল্পপতি, সিকিউরিটি কোম্পানীর মালিক, উইনার গ্রুপ অব কোম্পানীর চেয়ারম্যান হিসেবে।
এরআগে শ্রমিক হিসেবে সৌদি আরবে কিছুদিন থাকার পর দেশে ফিরে প্রতারণার ঘটনায় গত ২৪/০৫/২০১৪ তারিখে প্রতিপক্ষ তাকে বাগমারা এলাকায় আটক করেছিল। ওই ঘটনায় ১/০৬/২০১৪ তারিখে তার স্ত্রী রাবেয়া খাতুন বাদী হয়ে রাজবাড়ীর ১নং আমলী আদালতে মিসপি-১৫৮/২০১৪ নম্বর মামলা করেন। ওই ঘটনার মামলার আরজিতে নাম ছিল কিছমত আলী মন্ডল। এ ঘটনার পর কিসমত এফিডেভিটের মাধ্যমে নাম পরিবর্তন করে নিজেকে আব্দুল্লাহ আল মামুন পরিচয় দিলেও এলাকাবাসী তাকে কিসমত ওরফে কোঁচো বলে ডাকতো।
সম্প্রতি মানব পাচার ও প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে দেশ থেকে পালানোর জন্য সে এফিডেভিট অনুয়ায়ী ভোটার তালিকায় নাম পরিবর্তন এবং নতুন নামে পাসপোর্ট তৈরীর জন্য দীর্ঘদিন ধরে জোর তদবীর করে আসছিল। কিন্তু জেলা পুলিশের বিশেষ শাখায় তার পাসপোর্টের আবেদনের ভেরিফিকেশনে বেরিয়ে আসে তার থলের বিড়াল।