॥গোয়ালন্দ প্রতিনিধি॥ ঘন কুয়াশার কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে রাজধানীর যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ৯ঘন্টা ফেরী, লঞ্চসহ সকল নৌযান বন্ধ ছিল। এ সময় মাঝ নদীতে আটকা পড়ে দুটি বড় ফেরী। উভয় ঘাটে আটকা পড়ে সহস্রাধিক যানবাহন। চরম দুর্ভোগের কবলে পড়েন যাত্রীদের সাথে রোগীবাহি এ্যাম্বুলেন্স চালকরাও।
চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোষাধ্যক্ষ ও চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক নাসির আহাদ জোয়াদ্দার। মেয়ে নাফিজা সিদ্দিকা জোয়াদ্দার গুরুতর অসুস্থ্য হওয়ায় তাকে নিয়ে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য গতকাল রবিবার ভোররাতে এ্যাম্বুলেন্সে করে রওয়ানা করেন তিনি। ভোর ৬টার দিকে দৌলতদিয়া ঘাটে পৌছে দেখেন কুয়াশায় ফেরী চলাচল বন্ধ। উপায় না পেয়ে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ঘাটেই ফেরী ছাড়ার অপেক্ষা করতে থাকেন। তাকে দৌলতদিয়ার ৫নম্বর ফেরী ঘাটে এ্যাম্বুলেন্সের চারপাশ দুশ্চিন্তাগ্রস্থ অবস্থায় থাকতে দেখা যায়।
নাসির আহাদ জোয়াদ্দার বলেন, মেয়ে নাফিসা সিদ্দিকা জোয়াদ্দার ঢাকার এশিয়া প্যাসিফিক বিশ^বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে। বাড়িতে আসার পর গত এক সপ্তাহ ধরে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করানো হয়। কিছুতেই উন্নতি না হওয়ায় চিকিৎসকরা দ্রুত ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু ঘাটে এসে দেখি ফেরী বন্ধ। এখন তো আর সইতে পারছি না।
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ থেকে আসা সোহাগ পরিবহনের চালক বলেন, ৩৮জন যাত্রী নিয়ে গত শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে দৌলতদিয়ায় এসে পৌছি। ১১ ঘন্টা ধরে বসে থাকার পরও ফেরীতে ওঠতে পারিনি। দীর্ঘক্ষণ ঘাটে আটকে থাকায় বাসের নারী ও শিশু যাত্রীদের চরম কষ্ট করতে হচ্ছে। অনেকের প্রকৃতির কাজ সারতে এদিক-সেদিক ছুটাছুটি করতে হচ্ছে। আমরা আর কতকাল এভাবে কষ্ট করবো? এই কষ্ট লাঘবের একটি মাত্র মাধ্যম তা হলো দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ।
বাংলাদেশ অভ্যন্তীরন নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয় জানায়, ফাল্গুন মাসে ভারি কুয়াশা এই প্রথম। গত শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে কুয়াশা পড়তে থাকায় নৌযান চলাচলে সমস্যা দেখা দেয়। রাত বাড়ার সাথে কুয়াশার মাত্রা বাড়তে থাকায় রাত সোয়া ২টার পর থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ফেরীসহ নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে আসা দুটি বড় ফেরি মাঝ নদীতে আটকা পড়ে। ৯ ঘন্টা পর কুয়াশা কমে গেলে গতকাল রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফেরী চালু হয়। দীর্ঘ ৯ঘন্টার বেশি নৌযান বন্ধ থাকায় উভয় ঘাটে সহস্রাধিক গাড়ি আটকা পড়ে।
গতকাল রবিবার সকালে দৌলতদিয়া ঘাটে দেখা যায়, ঢাকা-খুলনা জাতীয় মহাসড়কে ঢাকাগামী গাড়ির দীর্ঘ লাইন। ফেরী ঘাটে যাত্রীবাহি বাসের সাথে ছোট ব্যক্তিগত গাড়ি ও অসংখ্য মোটর সাইকেলের বাহক ফেরী ছাড়ার অপেক্ষা করছে। এছাড়া ফেরী ঘাটের কাছে বেশ কয়েকটি রোগীবাহি এ্যাম্বুলেন্সও অপেক্ষা করতে দেখা যায়। এসব গাড়িতে থাকা রোগী ও তার স্বজনরা বেশি বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক মাহাবুব আলী সরদার বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কাছে কারো হাত নেই। গত শনিবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে কুয়াশার কারণে নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছিল। ৯ঘন্টার বেশি ফেরী বন্ধ থাকায় দুই ঘাটে কয়েক কিলোমিটার যানজট দেখা দিয়েছে। তবে বর্তমানে ১৫টি ফেরী সচল থাকায় যানজট দ্রুত নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।