॥কাজী তানভীর মাহমুদ॥ আবারও ভাঙ্গন হুমকীতে দৌলতদিয়া ফেরী ঘাট। পদ্মার ভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় যে কোন সময়ে দুইটি ঘাট বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অথচ ঘাট রক্ষায় কোন উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে ঈদের আগে ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশংকা সংশ্লিষ্টদের।
পদ্মায় পানি বেড়ে দৌলতদিয়া ৪নং ফেরী ঘাট এলাকায় ভয়াবহ ভাঙ্গন শুরু হয়েছে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে। ৩নং ফেরী ঘাট এলাকার অবস্থা একই রকম। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ ঘাট দিয়েই ফেরীতে উঠানামা করছে যানবাহন। কিন্তু ভয়াবহ এই ভাঙ্গনের হাত থেকে ঘাট রক্ষায় কোন ধরনের উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের।
গত বছরও ভাঙ্গনের মুখে পরেছিলো ঘাট দুটি। সে সময় তরিঘরি করে ভাঙ্গন ঠেকানোর কাজ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কয়েক কোটি টাকা খরচ করলেও খুব একটা কাজে আসেনি।এবারও তাদের দিকে তাকিয়ে আছে বিআইডব্লিউটিএ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন এখনই ঘাট রক্ষায় উদ্যোগ না নিলে বিপর্যয়ের আশংকা রয়েছে বর্ষা মৌসুমে।
ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গত বছর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ রুটে ফেরী চলাচল বন্ধ থাকে বেশ কয়েকদিন।তখন এরুটে চলাচলকারীরা পরেন চরম ভোগান্তিতে।
দৌলতদিয়া ৪নং ফেরী ঘাট সংলগ্ন বাহেরচর গ্রামের ষাটোর্দ্ধ বৃদ্ধ গফুর সেখ বলেন, ৪নং ফেরী ঘাট এলাকায় একের পর এক বড় বড় চাপ ভেঙ্গে নদীতে চলে যাচ্ছে। খুব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ঘাট এলাকায় বসবাসকারী মানুষ’।
বাড়ি ঘর হারিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে এই গ্রামেরই জালাল গাজী(৫৫)। অসহায় এই মানুষটি সাংবাদিকের ক্যামেরা দেখে এগিয়ে এসে বলে ‘আপনারা তো আসেন আর শুধু ছবি তোলেন। আমাগো কি লাভ? আমরা তো নদীর পেটে চলে যাইতেছি। বাড়ি ঘড় সব নদীতে চলে গেছে। এখন বড় অসহায় হয়ে পড়ছি। যদি শুষ্ক মৌসুমে নদীটারে শাষন করতো তাহলে এই বর্ষার সময়ে নদী ভাঙ্গতো না।’
ঘাট এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোঃ রানা খান জানান, ৪নং ফেরী ঘাট এলাকায় বসবাসকারী মানুষ ও ব্যবসায়ীরা আতঙ্গের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। ৪নং ফেরী ঘাট এলাকায় ভাঙ্গনের ভয়াবহতা বেশী। কোন উদ্যোগতো এখনও দেখি নাই। ঈদের সময়ে কয়েক লক্ষ গাড়ী ঘাট পারাপার হয়।তখন ও সমস্যার মধ্যে পরবে যাত্রীরা। যখন ভাঙ্গণ শুরু হয় তখন বস্তা ফেলে।ভাঙ্গণের সময়ে বস্তা ফেলে লাভ কি? ভাঙ্গনের সময়ে বস্তা ফেলে নদী ঠেকানো যায় না।
দৌলতদিয়া ঘাট পার হতে আসা ট্রাক চালক আঃ লতিফ বলেন, একটু বৃষ্টি হলেও ফেরী চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গত বছর ঘাট যে ভাবে ভেঙ্গেছে তাতে চালকদের খুব কষ্ট হয়েছে। ট্রাক নিয়ে দিনের পর দিন ঘাটে বসে অপেক্ষা করতে হয়েছে। এ বছরও যদি ঘাট ভেঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় তাহলে ত কষ্টের শেষ নাই।
ফরিদপুর থেকে ঢাকাগামী একটি যাত্রীবাহি বাসের চালক ফিরোজ হাওলাদার বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে পারাপার হয়। ঈদের সময়েতো এই চাপ বেড়ে কযেক গুন হয়। লক্ষ লক্ষ মানুষ ঈদের আগে ও পরে ঘাট পারাপার হয়। গত বছর ঈদের সময়ে ৩টি ঘাট বন্ধ ছিলো। সে সময়ে সবার খুব কষ্ট হয়েছে। এবারও যদি ঘাট বন্ধ থাকে তাহলে মানুষ বড় অসহায় হয়ে পরবে।
বিআইডব্লিউটিএ-এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ শাহ আলম জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বার বার পত্র দ্বারা অবহিত করেছি। কাজ করার জন্য অনুরোধ করেছি। কি সিদ্ধান্ত হয়েছে তা পরবর্তি মিটিং এ জানতে পারবো।
গত বছরে বর্ষার সময়ে দৌলতদিয়ায় ৪টি ফেরী ঘাট নদী গর্ভে বিলীন হয়। বিআইডব্লিউটিএ দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে ঘাটগুলো চালু করে। বর্তমানেও ঘাটগুলোর সংস্কার চলছে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে ১নং ফেরী ঘাট ও লঞ্চ ঘাটের মাঝখানে ২টি নতুন ফেরীঘাট তৈরী হবে। নতুন ফেরী ঘাটের সংযোগ সড়ক দুটি নির্মাণ করবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে ২নং ফেরী ঘাট থেকে ১নং ফেরী ঘাট পর্যন্ত বল্লি পাইলিং ও জিও ব্যাগ ফেলে ফেরী ঘাটের তীর রক্ষার কাজ চলছে। যা চারটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সম্পন্ন করছে। ২নং ফেরী ঘাট থেকে ৪নং ফেরী ঘাট পর্যন্ত গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড তীর রক্ষার কাজ করেছিলো। বর্তমানে ৩ ও ৪নং ফেরী ঘাটের বিভিন্নস্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসি’র(আরিচা সেক্টর) এজিএম মোঃ জিল্লুর রহমান জানান,এই মুহূর্তে যদি নতুন দুটি ঘাট তৈরী করা না হয় তাহলে আগামী বর্ষা মৌসুমে ফেরী চলাচল অপারেশনে মারাত্মক বিঘœ ঘটবে।