॥কাজী তানভীর মাহমুদ॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার রাখালগাছী বেতকার চর নামক এলাকায় গত ১২ই মে দিনগত রাত ৩টার দিকে র্যাবের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিষিদ্ধ ঘোষিত পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির(এমএল-লাল পতাকা) আঞ্চলিক প্রধান রাকিবুল হাসান বাপ্পি(৩০) ও তার সহযোগী লালন মোল্ল¬া(৩৩) নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় র্যাবের ২সদস্য আহত হয়েছে। পরে র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে ৪টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৬০ রাউন্ড গুলিসহ ধারালো অস্ত্রসস্ত্র উদ্ধার করেছে।
গতকাল ১৩ই মে র্যাব-৮ ফরিদপুর ক্যাম্পের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, র্যাবের একটি দল ১২ই মে রাতে গোয়ালন্দ ঘাট থানা এলাকায় টহল ডিউটি করাকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে রাখালগাছী বেতকা চর এলাকায় আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিবাদমান লাল পতাকা ও পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির চরমপন্থী সর্বহারা দলের সদস্যরা দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ দুই গ্র“পের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার জন্য অবস্থানগ্রহণ করেছে। প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে র্যাবের দলটি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে রাত ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে। টর্চের আলোতে ১২/১৫জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে অন্ধকারাছন্ন কাঁশবনের মধ্যে সন্দেহজনকভাবে অবস্থানরত অবস্থায় দেখে র্যাবের দলটি তাদের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় চরমপন্থী দলের সদস্যরা তাদের উপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। র্যাব সদস্যগণও তাৎক্ষণিকভাবে নিজেদের জানমাল রক্ষার্থে কৌশলগত অবস্থান নিয়ে পাল্টা গুলিবর্ষণ শুরু করে। প্রায় ২০/২৫ মিনিট উভয় পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে গুলি বিনিময় হয়। এক পর্যায়ে চরমপন্থীদের পক্ষ থেকে গুলিবর্ষণ বন্ধ হলে র্যাব সদস্যগণ ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় অবহিত করে।
খবর পেয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং স্থানীয় লোকজনও জড়ো হতে থাকে। উপস্থিত থানা পুলিশ ও স্থানীয়দেরসহ ঘটনাস্থল তল্লাশী করে সন্দেহভাজন ২জন চরমপন্থী সন্ত্রাসীকে রক্তাক্তভাবে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের মৃতদেহগুলো উদ্ধার করে দেহ তল্ল¬াশীর মাধ্যমে প্রাপ্ত আলামত ও ছড়িয়ে থাকা আলামত জব্দ করতঃ গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
নিহতরা হলো ঃ নিষিদ্ধ ঘোষিত পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির(এমএল লাল পতাকা) বাহিনীর আঞ্চলিক প্রধান পাবনা জেলার জালালপুর গ্রামের সফি মুন্সির ছেলে রাকিবুল হাসান বাপ্পি(৩০) ও তার সহযোগী রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের গোপালবাড়ী গ্রামের কুদ্দুস মোল্ল¬ার ছেলে লালন মোল্ল¬া(৩৩)। আহত র্যাব সদস্যরা হলেন ঃ ল্যান্স কর্পোরাল হারুন-অর-রশীদ এবং পিসি সিরাজুল ইসলাম। আহতরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ক্যাম্পে ফিরে গেছেন বলে জানিয়েছে র্যাব।
ঘটনাস্থল থেকে ১টি বিদেশী পিস্তল, ২টি বিদেশী ওয়ান শুটার গান ও ১টি বিদেশী .২২ বোর রাইফেলসহ ৪টি আগ্নেয়াস্ত্র, বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রের ৬০রাউন্ড গুলি, ১টি ধারালো তলোয়ার ও ১টি রামদা উদ্ধার করা হয়।
র্যাব আরো জানায়, নিহতরা এলাকায় ডাকাতি, চাঁদাবাজী, মাদক ব্যবসায়ী, খুনী, সন্ত্রাসী, ধর্ষক ও অবৈধ দখলদার হিসেবে পরিচিত। তারা রাজবাড়ী ও পাবনা জেলার তালিকাভূক্ত চরমপন্থী দলের শীর্ষ সন্ত্রাসী। তাদের নামে আতাইকুলা, পাবনা সদর, গোয়ালন্দ ও রাজবাড়ী সদর থানাসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে এবং তারা একাধিক চাঞ্চল্যকর মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী।
এ সময় র্যাব-৮ ফরিদপুর ক্যাম্প কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রইছ উদ্দিন, রাজবাড়ীর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(ক্রাইম) মোঃ আসাদুজ্জামান ও গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মির্জা আবুল কালাম আজাদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মির্জা আবুল কালাম আজাদ জানান, গতকাল শনিবার সকালে ঘটনাস্থল থেকে নিহতদের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে র্যাব বাদী হয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় মামলা দায়ের করেছে।
এদিকে তাদের নিহত হওয়ার ঘটনায় এ অঞ্চলের মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে।