॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ ২৮তম আন্তর্জাতিক ও ২১তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে ‘অভিগম্য আগামীর পথে’-প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন ও জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের যৌথ আয়োজনে গতকাল ৫ই ডিসেম্বর সকালে র্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সকাল ১০টায় কালেক্টরেটের আ¤্রকানন চত্বর থেকে র্যালীটি বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। এরপর কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রুবাইয়াত মোঃ ফেরদৌসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান, সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাঃ আছমা আক্তার, এনজিও রাসের নির্বাহী পরিচালক লুৎফর রহমান লাবু, এসবিইউএমএসের নির্বাহী পরিচালক ও ডাঃ আবুল হোসেন কলেজের সহকারী অধ্যাপক শামীমা আক্তার মুনমুন, বধির উন্নয়ন ও কল্যাণমূলক সংস্থার সভাপতি আলমগীর হোসেন, রাজবাড়ী প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থার সভাপতি সান্টু দে ও মিজানপুর প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থার সদস্য মোঃ রুবেল শেখ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবুল হোসেন।
প্রতিপাদ্য বিষয়ের উপর পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা মনির হোসেন এবং সভা সঞ্চালনা করেন সদর উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন অফিসার মাজহারুল ইসলাম।
এ সময় জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ, বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তা, এনজিও প্রতিনিধি এবং প্রতিবন্ধী সংগঠনের সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, আমরা যারা সমাজে সুন্দরভাবে বেঁচে আছি তাদের যেমন অধিকার আছে তেমনি প্রতিবন্ধীদেরও সবকিছুতে সমান অধিকার আছে। আমরা কখনোই প্রতিবন্ধীদের অবজ্ঞার চোখে দেখবো না। বরং তাদেরকে সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য সর্বক্ষেত্রে আরো অধিক সুবিধা প্রদান করবো। কারণ আমরা স্বাভাবিক মানুষেরা যেভাবে জীবনধারণ করি তার থেকে তাদেরকে অনেক বেশী সংগ্রাম করে বাঁচতে হয়। সকলের মনে রাখা দরকার একটি শিশু পৃথিবীতে আসার সময় কখনোই জানে না সে প্রতিবন্ধী কিনা। সে যখন বড় হতে থাকে তখন সে ধীরে ধীরে প্রতিবন্ধী হওয়ার বিভিন্ন দিকগুলো সম্পর্কে বুঝতে পারে। এক্ষেত্রে যে প্রতিবন্ধী হয় তাকে যদি ছোট থাকা অবস্থায় ঠিকমতো চিকিৎসা প্রদান করা যায় তবে সে অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। একটি শিশুর জন্মের আগে কি কারণে প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম হয় সে ব্যাপারে জন্মদাত্রী মায়েদের জানতে হবে, সচেতন হতে হবে। আবার অনেকে সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ববরণসহ প্রতিবন্ধী হচ্ছে। তাই সড়ক দুর্ঘটনা যাতে কমিয়ে আনা যায় সে ব্যাপারে আমাদেরকে আরো সচেতন হতে হবে। বর্তমানে অফিস-আদালতে, যানবাহনে, মার্কেটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধীদের চলাচলের কোন সুবিধা নেই।
জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম আরো বলেন, প্রতিটি জায়গায় প্রতিবন্ধীদের চলাচলের জন্য ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। সেই অনুভবতা থেকেই আমি আমার অফিসে প্রতিবন্ধীদের সহজে চলাচলের জন্য প্রশস্ত সমান সিঁড়ি তৈরী করেছি। ভবিষ্যতে যাতে প্রতিবন্ধীরা সব ফ্লোরে সহজে যেতে পারে সেজন্য লিফট বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া রাজবাড়ীতে প্রতিবন্ধীদের জন্য মানসম্পন্ন কোন স্কুল নেই। যাতে রাজবাড়ীতে প্রতিবন্ধীদের জন্য ভালো একটি স্কুল করা যায় সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। আমাদের যে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী আছে তাদেরকে পিছনে রেখে আমরা কখনোই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা এসডিজি অর্জন করতে পারবো না। আমাদেরকে উন্নতি করতে হলে তাদেরকে সাথে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। ভবিষ্যতে সরকার তাদের সুযোগ-সুবিধা আরো বাড়ানোর মাধ্যমে দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ একটি দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট রয়েছে।
আলোচনা সভা শেষে প্রধান অতিথি ৫জন প্রতিবন্ধীর মধ্যে ৫টি হুইল চেয়ার এবং ২জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর মধ্যে ২টি ডিজিটাল ডিভাইস বিতরণ করেন।