॥গোয়ালন্দ প্রতিনিধি॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে গতকাল ২০শে নভেম্বর দুপুরে মাসিক আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবায়েত হায়াত শিপলু। সভায় গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মোঃ রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ওসির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পুলিশের ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয় তদন্ত করছে। তাকে প্রত্যাহার করে ঢাকা ডিআইজি রেঞ্জ কার্যালয়ে সংযুক্ত হতে গত ১৭ই নভেম্বর সন্ধ্যায় ডিআইজি রেঞ্জ কার্যালয় থেকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নির্দেশনা আসে। তিনি গত ৫ই আগস্ট গোয়ালন্দ ঘাট থানায় যোগদান করেছিলেন।
সভায় উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান চৌধুরী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নার্গিস পারভীন, জেলা পরিষদ সদস্য ও উপজেলা আ’লীগের সভাপতি মোঃ নুরুজ্জামান মিয়া, জেলা পরিষদের সংরক্ষিত সদস্য নুরজাহান চৌধুরী, সহকারী কমিশনার(ভূমি) আব্দুল্লাহ আল-মামুন, গোয়ালন্দ ঘাট থানার বিদায়ী ওসি মোঃ রবিউল ইসলাম, সরকারী কামরুল ইসলাম কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন, পৌরসভার প্যানেল মেয়র কোমল কুমার সাহা, উজানচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন ফকির, ছোট ভাকলা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আমজাদ হোসেন, দেবগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম, দৌলতদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল ও গোয়ালন্দ প্রেসক্লাবের সভাপতি আজু শিকদার প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
সভার শুরুতে ব্যস্ততা থাকায় ওসি মোঃ রবিউল ইসলাম বিদায় নেয়ার অনুমতি চাইলে সভাপতি ওসি সংশ্লিষ্ট কিছু জানার থাকলে দ্রুত উত্থাপনের আহবান জানান। এ সময় উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান চৌধুরী গত মঙ্গলবার রাতে ছোট ভাকলা ইউপির আন্ধারমানিক গ্রামে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার বাড়িতে ডাকাতির বিষয়টি উত্থাপন করেন। কয়েকদিন আগে দিনের বেলায় দুধর্ষ চুরির বিষয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
ওসি রবিউল ইসলাম তার বক্তব্যে বদলীর বিষয় প্রকাশ করে সবার কাছে দোয়া চান। গত মঙ্গলবার তাঁকে নিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় “বিভিন্ন অভিযোগে ওসিকে প্রত্যাহার, তদন্ত হচ্ছে” প্রকাশিত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগকারী ব্যবসায়ী সৈয়দ মোঃ শাহজাহান হোসেন সম্পর্কে বিস্তারিত উপস্থাপন করেন। এছাড়াও তিনি বলেন, আমার বদলীর বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ফেসবুকে প্রচার হওয়ায় কিছু দুষ্কৃতিকারী অঘটন ঘটানোর চেষ্টা করছে উল্লেখ করে তরিঘরি করে বক্তব্য শেষ করে চলে যান।
পৌরসভার প্যানেল মেয়র কোমল কুমার সাহা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ওসি যোগদানের কিছুদিন পর দশম শ্রেণীর পড়–য়া আমার ছেলে প্রাইভেট শেষে বাড়ি ফেরার পথে থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পড়ার অযুহাতে ওসি নিজে হকিষ্টিক দিয়ে মারপিট করেন। এমনকি আমার ছেলেসহ তার চার বন্ধুকে থানা হাজতে আটকে রাখেন। বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য, পৌরসভার মেয়রকে অবগত করি। কয়েকদিন পর দধি ব্যবসায়ী সুবল ঘোষের মোটর সাইকেল রাস্তায় রাখার অপরাধে মাটিতে ফেলে হকিষ্টিক দিয়ে পিটিয়ে ভাঙ্গে। আমরা কয়েকজন কাউন্সিলর ও ব্যবসায়ী থানায় জানতে গেলে দুর্বব্যহার করে থানা থেকে বের করে দেন। তার মতো এত খারাপ ওসি আগে দেখিনি।
ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আমজাদ হোসেন বলেন, আমার এলাকার এক নব দম্পতি বিয়ে করে বাড়ি ফেরার পথে ওসি তাদেরকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। তারা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া সত্বেও জোরপূর্বক আটকে রাখেন। আমি ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলেও তিনি কর্ণপাত করেননি। কয়েক দিন পর এলাকার এক যুবকের বিরুদ্ধে সামান্য অভিযোগে তার বৃদ্ধ বাবাকে আটক করে অত্যাচার করেন। এমন আরো অনেক ঘটনা আছে ওসির বিরুদ্ধে।
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আসাদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, জনগনের সেবক হয়ে তিনি যেভাবে মানুষের সাথে আচরণ করেছেন সবাই তা মনে রাখবেন। একজন পুলিশ কর্মকর্তা বা সরকারী আমলার কর্মকান্ড মানুষ তাকে স্মরণ করবে। যদি ভালো কিছু করে তাকে শ্রদ্ধা করবে। আর খারাপ কিছু করলে সেভাবেও মনে রাখবে। ওসি যেভাবে মানুষের ওপর অত্যাচার করেছেন তা কেউ ভুলতে পারবেন না।
সভায় দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল বলেন, দৌলতদিয়া ঘাটে ট্রাক পারাপারে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা দালাল চক্রের চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। স্থানীয় রাজনীতিতে পরিবর্তন ও জনপ্রতিনিধি’র পরিবর্তন হলেও একই কায়দায় চলমান আছে চাঁদাবাজি। ইতিপূর্বে যারা চাঁদা আদায় করত এখনো তারাই এই অবৈধ কাজের সাথে যুক্ত। এছাড়া এ অবৈধ চাঁদা আদায় নিয়ে দৌলতদিয়া ঘাটে দু’টি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। যে কোন সময় দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে।
সভার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবায়েত হায়াত শিপলু বলেন, এসব অভিযোগ আমরা সভার রেজুলেশনে উল্লেখ করবো। একই সাথে যথাযথ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করবো। এক্ষেত্রে যদি আমাদের কিছু করণীয় থাকে সেটাও ভেবে দেখা হবে।