॥স্টাফ রিপোর্টার॥ বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে মহান বিজয় দিবস পালিত হয়েছে।
এ উপলক্ষে গত ১৬ই ডিসেম্বর সকাল ৬টায় পুলিশ লাইন্সে ৩১বার তোপধ্বনীর মধ্য দিয়ে কর্মসূচী শুরু হয়। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারী-বেসরকারী ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় প্রথমে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আম্রকানন চত্বরে স্থাপিত মহান স্বাধীনতার স্থপতি মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে, এরপর পর্যায়ক্রমে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলকে, লোকোসেড বদ্ধভূমি স্মৃতিসৌধে, রাজবাড়ী ১নং রেলগেট সংলগ্ন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলকে, লক্ষীকোলস্থ বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ রফিক, সফিক, সাদি’র কবরে এবং সর্বশেষ নিউ কলোনীর বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুল আজিজ খুশি’র কবরে জেলা প্রশাসক জিনাত আরা, পুলিশ সুপার সালমা বেগম পিপিএম-সেবা, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বকস্সহ বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
সকাল ৯টায় শহরের বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ খুশি রেলওয়ে ময়দানে জেলা প্রশাসক কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক জিনাত আরা সমাবেশ পরিদর্শন ও কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহণ করেন। এ সময় পুলিশ সুপার সালমা বেগম তার সঙ্গে ছিলেন। কুচকাওয়াজ শেষ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শারীরিক কসরত ও ডিসপ্লে প্রদর্শন করে। এ ছাড়াও স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচী ও বাঁধনের উদ্যোগে বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করা হয়। এরপর কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লেতে বিজয়ী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পুরস্কার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগণসহ বিপুল সংখ্যক দর্শক উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ শেষে দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসন কর্তৃক জেলা প্রশাসকের বাসভবনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধণা প্রদান করা হয়। বাদ জুম্মা জেলার সকল মসজিদে এবং সুবিধাজনক সময়ে মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গী বিরোধী জনমত সৃষ্টির জন্য আলোচনাসহ জাতির শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হয়। দুপুরে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জেলখানা, এতিমখানা, সরকারী শিশু পরিবার ও হাসপাতালে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। বিকেল ৩টায় জেলা মহিলা ও অফিসার্স ক্লাব প্রাঙ্গনে মহিলাদের অংশগ্রহণে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং সাড়ে ৩টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ খুশি রেলওয়ে ময়দানে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী বনাম বেসরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে দাঁড়িয়াবাধা, জেলা প্রশাসন একাদশ বনাম রাজবাড়ী পৌরসভা একাদশ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বনাম জেলা বার এসোসিয়েশন এবং রাজবাড়ী প্রেসক্লাব বনাম বাজার ব্যবসায়ী সমিতির মধ্যে প্রীতি ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
খেলা শেষে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে জেলা প্রশাসক জিনাত আরা পুরস্কার প্রদান করা হয়। বিকেল সাড়ে ৪টায় বিসিক চাঁদমারীতে শ্যুটিং প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে প্রধান অতিথি হিসেবে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী পুরস্কার বিতরণ করেন। এ সময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মানোয়ার হোসেন মোল্লাসহ জেলা শ্যুটিং ক্লাবের সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যা ৬টায় রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ খুশি রেলওয়ে ময়দানের বিজয় মেলার মঞ্চে “সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে ডিজিটাল প্রযুক্তির সার্বজনীন ব্যবহার ও মুক্তিযুদ্ধ” শীর্ষক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য কামরুন নাহার চৌধুরী লাভলী বক্তব্য রাখেন। জেলা প্রশাসক জিনাত আরা’র সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার সালমা বেগম,পিপিএম-সেবা। এছাড়াও আলোচনা সভায় মূল আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মহসীন উদ্দিন বতু। আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় বিজয় দিবসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়।