॥কাজী তানভীর মাহমুদ॥ রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার মাঝবাড়ী ইউনিয়নে মীর্জা গোলাম কিবরিয়া ওরফে বিস্কুট(৪৫) নামে এক শারীরিক প্রতিবন্ধী রাখালকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
নিহত গোলাম কিবরিয়া বিস্কুট মাঝবাড়ী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মৃত মান্নান মীর্জার ছেলে। সে গত কয়েক বছর ধরে প্রতিবেশী তরকারী ব্যবসায়ী মঞ্জু শরীফ(৫০) এর বাড়ীতে মাসিক ১৫শত টাকা বেতনে গরুর রাখালের কাজ করতো। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ৬ই নভেম্বর সকালে মঞ্জু শরীফ লাঠি দিয়ে পিটিয়ে তাকে মারাত্মকভাবে জখম করে। পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৭ই নভেম্বর দিবাগত রাত দেড়টার দিকে তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত মঞ্জু শরীফ পলাতক রয়েছে। তবে তার পরিবারের সদস্যরা প্রতিবন্ধী বিস্কুটকে লাঠি দিয়ে পেটানোর কথা স্বীকার করেছে।
নিহত প্রতিবন্ধী বিস্কুটের স্ত্রী শাবানা বেগম বলেন, গত ৬ই নভেম্বর বুধবার বেলা ১১টার দিকে মঞ্জু শরীফ ফোন করে তাদের বাড়ীতে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি মঞ্জু শরীফ কাঁচি ধার করা নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে তার স্বামীকে লাঠি দিয়ে অনেক মেরেছে। তারা বলেছে যে তারা লাঠি দিয়ে মাত্র ২টি বারি দিয়েছে, কিন্তু আমার স্বামী বলেছে ২টি নয়-তারা তাকে অনেক পিটিয়েছে। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ডাক্তাররা তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে। সেখানে ৭ই নভেম্বর রাত দেড়টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
নিহতের মেয়ে মির্জা নিশী বলেন, আমার প্রতিবন্ধী বাবাকে যে নির্মমভাবে হত্যা করেছে আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
নিহতের ভাতিজা জগলুল করিম বলেন, আমার চাচা অসহায় প্রতিবন্ধী মানুষ ছিলেন। তুচ্ছ ঘটনায় কথা কাটাকাটি জেরে মঞ্জু শরীফ তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। তার শরীরের বিভিন্ন অংশে জখমের চিহ্ন রয়েছে। ঘটনার পর থেকে মঞ্জু শরীফ এলাকা থেকে পালিয়েছে। আমরা তার শাস্তির দাবী জানাই।
মাঝবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী শরিফুল ইসলাম বলেন, ঘটনা শুনে নিহতের বাড়ীতে এসে দেখি লাশের গোসল করানো হয়েছে। পরে ঘটনাটি জানাজানি হলে পুলিশ এসেছে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবী জানাই।
অভিযুক্ত মঞ্জু শরীফের বাড়ীতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে বাড়ীতে থাকা তার ছোট বোন নাসিমা বেগম, ভাবী হাচিনা বেগম ও কাজের লোক জাহানারা বেগম বলেন, ঘটনার দিন কাঁচি ধার করা নিয়ে বিস্কুট কথাকাটি করে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে। পরে মঞ্জু তাকে লাঠি দিয়ে ২টি বারি মারে এবং ফোনে স্ত্রীকে ডেকে তার হাতে তাকে তুলে দেয়া হয়।
কালুখালী থানার ওসি মোঃ কামরুল হাসান জানান, লাশের সুরতহাল রিপোর্ট শেষে ময়না তদন্তের জন্য রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এ বিষযে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।