॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ ৪৮তম জাতীয় সমবায় দিবস উপলক্ষে “বঙ্গবন্ধুর দর্শন সমবায়ে উন্নয়ন” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন, সমবায় বিভাগ ও সমবায়ীবৃন্দের আয়োজনে গতকাল ২রা নভেম্বর সকালে পতাকা উত্তেলন, বর্ণাঢ্য র্যালী, আলোচনা সভা ও সফল সমবায়ীদের মধ্যে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়।
সকাল ১০টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সামনে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের সাথে জাতীয় ও সমবায় পতাকা উত্তোলনের পর বের করা হয় বর্ণাঢ্য র্যালী। শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে র্যালীটি একই স্থানে এসে শেষ হয়। এরপর জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচন সভা।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী। জেলা প্রশসক দিলসাদ বেগমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা সমবায় অফিসার আভা রাণী সরকার।
বিশেষ অতিথি হিসেবে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ ইমদাদুল হক বিশ্বাস, রাজবাড়ী কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক লিমিটেডের সভাপতি এডঃ এম.এ খালেক, অন্যান্যের মধ্যে রাজবাড়ী কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক লিমিটেডের সহ-সভাপতি হাজী আব্দুল ওহাব, সমবায়ী নবকুমার দত্ত ও মনসুর আহম্মেদ চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সভা সঞ্চালনা করেন সদর উপজেলা সমবায় অফিসার সেলিনা পারভীন ও রাজবাড়ী কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের সদস্য হেলাল উদ্দিন সরদার।
এ সময় বিভিন্ন সরকারী দপ্তর ও সমবায় বিভাগের কর্মকর্তাগণ এবং কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যগণসহ বিভিন্ন সমবায় সমিতির নেতৃবৃন্দ ও সমবায়ীগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী বলেন, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে দেশের কৃষি খাতসহ বিভিন্ন সেক্টরকে সমবায়ের মাধ্যমে আত্মনির্ভর করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারীভাবে সমবায় কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশকে আরো এগিয়ে নিতে সমবায় বিভাগের কার্যক্রমকে আরো শক্তিশালী করাসহ আমার বাড়ী আমার খামার প্রকল্পের মতো বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে দেশকে আজ বিশ্বের বুকে আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। যার মাধ্যমে আজকে সারা দেশের ন্যায় রাজবাড়ী জেলার তৃণমূলের গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ নিজেদের জীবনের মান অনেক উন্নয়ন ঘটিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি নিজেদের মধ্যে আস্থা অর্জন করা সমবায়ীদের প্রথম কাজ। এ পর্যন্ত যে সমবায়ীরা নিজেদের মধ্যে আস্থা অর্জনের মাধ্যমে কাজ করেছেন তারাই নিজেদের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। অনেকে এখানে এনজিওর কার্যক্রমের সঙ্গে সমবায়ীদের তুলনা করেছেন। কিন্তু এনজিও আর সমবায় এক বিষয় নয়। এমন অনেক নামধারী এনজিও আছে যারা বিভিন্ন কাজ করার নামে সরকার ও দাতা সংস্থার কাছ থেকে আর্থিক অনুদান গ্রহণ করে কিন্তু বাস্তবে তারা কোন কাজ করে না। আবার বিভিন্ন নামে ভুয়া এনজিও খুলে ঋণ দেওয়ার নামে প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাজ থেকে অর্থ নিয়ে কিছুদিন পর সব টাকা মেরে দেয়ার পর তাদেরকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু সমবায়ের ক্ষেত্রে এই ধরনের কোন কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নাই। কারণ তারা আস্থার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যকার লোক দিয়ে সমবায় কার্যক্রম পরিচালনা করে। বর্তমানে রাজবাড়ী সদর উপজেলায় অনেক সমবায় ভিত্তিক দুগ্ধ খামার গড়ে উঠেছে। কিন্তু খামারীদের তাদের উৎপাদিত দুধ বিক্রি করতে সমস্যা হচ্ছে। যার কারণে আমি রাজবাড়ী সদরে সাব-সেন্টার করার জন্য মিল্ক ভিটাকে বলেছিলাম। তারা রাজবাড়ী সদর ও পাংশায় সাব-সেন্টার করবে বলে আমাকে জানিয়েছিল। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় মিল্ক ভিটার ম্যানেজারের বাড়ী পাংশায় হওয়ায় সে ২টি সাব-সেন্টারই পাংশায় নিয়ে যায়। যদি মিল্ক ভিটা কর্তৃপক্ষ রাজবাড়ীতে সাব-সেন্টার না করে তাহলে আমি বিষয়টি জাতীয় সংসদে তুলবো। সেই সাথে সমবায় কার্যক্রমকে আরো বেগবান করতে আমি সংসদে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানাবো।
এছাড়াও বিভিন্ন বক্তা তাদের বক্তব্যে রাজবাড়ী কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের মূল্যবান সম্পত্তি হাতছাড়া হওয়াসহ যে সমস্ত সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন সেগুলোর সমাধানের জন্য জেলা প্রশাসককে একটি টিম করে বর্তমানে রাজবাড়ী কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক কী অবস্থায় রয়েছে, এই ব্যাংক থেকে কী আয় হচ্ছে, এই আয়ের টাকা কোথায় যাচ্ছে, তার একটি সঠিক চিত্র আমাদের সকলের সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানাচ্ছি। যদি এটি করা সম্ভব হয় তবে রাজবাড়ী জেলার সমবায় কার্যক্রম আরো বেশী সফল হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, এই উপ-মহাদেশে আজ থেকে প্রায় ১০৫ বছর আগে সমবায় কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। যাত্রা শুরুর পর থেকে এর মাধ্যমে সমবায়ীরা নিজেদের ও সমাজের উন্নয়ন করাসহ অনেক ক্ষেত্রেই সফলতা পেয়েছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এই বিষয়টি উপলদ্ধি করতে পেরে দেশে সমবায় কার্যক্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং সফল হয়েছিলেন। আমি মনে করি রাজবাড়ী জেলার সমবায়ীরা তাদের সমবায় কার্যক্রমের মাধ্যমে আরো সফলতা পাবে। আমি রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক হিসেবে চার মাস কাজ করছি। কিন্তু আজকের আগে রাজবাড়ীর সমবায়ীদের যে সমস্যা রয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে আমার জানা ছিল না। এ পর্যন্ত কেউ আমাকে এই সমস্যাগুলোর কথা অবগত করেননি।
তিনি বলেন, রাজবাড়ী জেলায় প্রায় ৭০৫টি সমবায় সমিতি রয়েছে। যার সদস্য সংখ্যা রাজবাড়ীর মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি। অবশ্যই জেলা সমবায় কর্মকর্তার মাধ্যমে আপনাদের সমস্যাগুলো আমার কাছে উপস্থাপন করবেন, আমি চেষ্টা করবো সেগুলো যাতে সমাধান করা যায়।