বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫৯ পূর্বাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

কর্তৃপক্ষ উদাসীন॥দীর্ঘ প্রায় দুই বছরেও চালু হয়নি কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আন্তঃ বিভাগ

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৯

॥মাহফুজুর রহমান॥ রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার ৫০ শষ্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স উদ্বোধনের দীর্ঘ প্রায় ২বছর অতিবাহিত হলেও জনবল ও যন্ত্রাংশ সংকটে বন্ধ রয়েছে আন্তঃ বিভাগের চিকিৎসা সেবা।
এতে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের দেড় লক্ষাধিক মানুষ স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। জনবল সংকট, পরীক্ষা-নিরীক্ষার অতি প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ না থাকায় এর সুযোগ নিচ্ছে উপজেলার গড়ে ওঠা ক্লিনিকগুলো।
কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩জন মেডিকেল অফিসারের মধ্যে ১জন পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেষণে রয়েছেন। ১জন গাইনী চিকিৎসক রয়েছেন। তিনিও সপ্তাহের প্রতি সোমবার ব্যতিত রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে সংযুক্ত রয়েছেন। একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার, ২জন মেডিকেল অফিসার ও ৯জন সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়ে বহিঃবিভাগটি কোন রকমে চালু রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৭টি ডাক্তারের পদের মধ্যে ১০টি পদই শূন্য রয়েছে।
এছাড়াও কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স উদ্ধোধনের দিন থেকেই সরকারী অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও নেই ড্রাইভার। নেই আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন, এক্স-রে মেশিন, ডেন্টাল ইউনিট, ল্যাবরেটরী সেটআপ, অপারেশন থিয়েটার সেটআপ। রোগী থাকলেও নেই ডাক্তার, নেই পরীক্ষার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি।
এ ব্যাপারে রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন বরাবর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করেছেন হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ নূরুল ইসলাম।
অপরদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কর্মী না থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন নার্সরা। তারা বলছেন, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির ৯ জন স্টাফ নার্স কমপ্লেক্সের ভিতরে থাকেন। তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩০শে জানুয়ারী তৎকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ৫০ শয্যা বিশিষ্ট কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করেন। শুরু থেকেই অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও ড্রাইভার না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে অ্যাম্বুলেন্সটি অলস পড়ে থেকে মূল্যবান যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। জরুরী রোগীদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে স্থানান্তরের জন্য নির্ভর করতে হয় প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সের উপর। অ্যাম্বুলেন্স মালিকরাও প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোর মতোই রোগীদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি উদ্বোধনের পর পরই আন্তঃ বিভাগের রোগীদের জন্য বেড পাতা হলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আধুনিকৃত এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই কোন এক্স-রে, প্যাথলজী, আল্ট্রাসনোগ্রাফী, স্ট্যানোগ্রাফী, ইসিজি, রেডিওলজী টেকনোলজীর যন্ত্রাংশ। অপারেশন থিয়েটারটি রয়েছে ফাঁকা। এছাড়া ডেন্টাল, মেডিকেল অফিসার, গাইনী কনসালটেন্ট, মেডিসিন কনসালটেন্টসহ বিভিন্ন বিভাগের দরজায় তালা ঝোলানো রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।
সরেজমিনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি পরিদর্শনকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা অভিযোগ করেন, ডাক্তাররা রোগী দেখে শুধুমাত্র ব্যবস্থাপত্র ও কিছু সরকারী ওষুধ প্রদান করে রোগীদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষাই বাইরের ক্লিনিক ও প্যাথলজীগুলোতে উচ্চ মূল্যে করাতে হচ্ছে।
মহেন্দ্রপুর গ্রামের লুৎফর রহমান বলেন, গত ২বছর যাবৎ হাসপাতালটি চালু হয়েছে। কিন্তু আমরা শুধু ব্যবস্থাপত্র আর কিছু ওষুধ ছাড়া কোন সেবাই পাই না। এখানে রোগী ভর্তির ব্যবস্থা নাই, এক্স-রে মেশিন নাই, কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জিনিস নাই। নিরূপায় হয়ে আমাদেরকে প্রাইভেট ক্লিনিক ও প্যাথলজীতে যেতে হচ্ছে।
মাঝবাড়ী থেকে আসা হাসিনা বেগম ও মদাপুর থেকে আসা মরিয়ম বেগম নামের দুই অন্তঃস্বত্ত্বা নারী বলেন, আমরা হাসপাতালে এসেছি ডাক্তার দেখানোর জন্য। কিন্তু এসে গাইনী ডাক্তার পাই না। পুরুষ ডাক্তার দেখানো লাগে। আমাদের যে কোন সময় জরুরী ভিত্তিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু এই হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অপারেশনের কোন ব্যবস্থা নেই। এই কারণে বিভিন্ন ক্লিনিকে গিয়ে অনেক টাকা খরচ করে ডাক্তার দেখানো লাগে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ খোন্দকার মোঃ আবু জালাল বলেন, ২০১৮ সালের উদ্বোধনের পর থেকেই বহিঃবিভাগে প্রতিদিন প্রায় ২৫০/৩০০ রোগী দেখা হচ্ছে। আন্তঃবিভাগের সেবা চালু করার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। ৫০ শয্যা হাসপাতালের রোগীদের বেড ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র চলে এসেছে। কিন্তু আন্তঃবিভাগ চালু করতে গেলে হাসপাতালটিতে যে লোকবল ও টেকনিক্যাল পার্সন এবং ল্যাবরেটরীর বিভিন্ন রক্ত পরীক্ষা, আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন, এক্স-রে মেশিন, ডেন্টাল ইউনিট, ল্যাবরেটরী সেটআপ, অপারেশন থিয়েটার সেটআপ লাগে সেসব নেই।
এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখেছি। এছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল ২০/২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আমাদের সরকারী অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও ড্রাইভার না থাকায় সেটি চালানো যাচ্ছে না।
রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, কালুখালী উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি প্রশাসনিক অনুমোদন পেলেও এখন পর্যন্ত আন্তঃ বিভাগ চালু করা সম্ভব হয়নি। আন্তঃ বিভাগ চালু করার লক্ষ্যে হাসপাতালের জন্য এক্স-রে মেশিন, আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি ও জনবলের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখেছি। সবসময় যোগাযোগ করেছি। হাসপাতালে রোগী ভর্তি রাখতে তাদের খাবারের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আশা করি, শিগগিরই আন্তঃ বিভাগ চালু করা যাবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!