সোমবার, ২২ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১১ পূর্বাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

গোয়ালন্দে আ’লীগ সমর্থক আবু ডাক্তার নিহতের ঘটনায় যুবলীগ নেতা নজরুলসহ ৫জন গ্রেফতার

  • আপডেট সময় বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৯

॥এম.এইচ আক্কাছ/দেবাশীষ বিশ্বাস॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে গত ১৪ই অক্টোবর সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে রেজাউল মোল্লা ওরফে আবু ডাক্তার (৩৫) নামে এক আওয়ামী লীগ সমর্থক নিহত হওয়ায় ঘটনায় গোয়ালন্দ ঘাট থানায় হত্যা মামলা রুজু করা হয়েছে।
গতকাল ১৫ই অক্টোবর বিকালে নিহতের পিতা দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া গ্রামের মোবারক মোল্লা(৭০) বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন।
মামলায় গোয়ালন্দ উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম মন্ডল (৪২)কে ১নং আসামী এবং দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতর আলী সরদার (৬৫)কে ২নং আসামী করাসহ ৩৭জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ২০জনের অধিক আসামী করা হয়েছে।
ঘটনার এবং থানায় মামলা রুজুর পর র‌্যাব ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে মামলার এজাহারনামীয় ৫জন আসামীকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো ঃ এজাহারনামীয় আসামী উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম মন্ডল(৪২), দেবগ্রাম ইউনিয়নের কাউলজানি গ্রামের হানিফ মোল্লার ছেলে হাফিজুল ইসলাম(৩৮), একই গ্রামের মৃত মৈজদ্দিন শেখের ছেলে আঃ সামাদ শেখ(৫০), কালাম শেখের ছেলে মাসুদ রানা(২৪) এবং একই গ্রামের আয়নাল মন্ডলের ছেলে আরিফ মন্ডল(২৩)।
মামলার অপর আসামীরা হলো ঃ সাবেক চেয়ারম্যান আতর আলী সরদারের তিন ছেলে দেবগ্রাম ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি বাবলু সরদার(৪০), লাভলু সরদার(৩৫) ও টোকন সরদার(৩০), লাভলু সরদারের ছেলে রায়হান সরদার(২০), তেনাপঁচা গ্রামের মৃত কাদির সরদারের ছেলে হবিবর সরদার(৫৫), হবিবর সরদারের ছেলে গাজিয়া সরদার(৩০), কাউলজানি গ্রামের সামাদ শেখের ছেলে কামরুল শেখ(১৯) ও কবির শেখ(৩০), মৃত মৈজদ্দিন শেখের ছেলে কালাম শেখ(৪০), তেনাপঁচা গ্রামের লালন শেখের ছেলে আফতাব শেখ(৩৫), করিম শেখের ছেলে মতিয়ার শেখ(২৮), সূর্য মোল্লার ছেলে আইয়ুব মোল্লা(৪৫), কাউলজানি গ্রামের উম্বার খাঁর দুই ছেলে হেলাল খাঁ(২৮) ও কালাম খাঁ(৪৫), তেনাপঁচা গ্রামের মালেক খন্দকারের ছেলে রহিম খন্দকার(২৭), স্বরূপারচরের মৃত মজিবর শেখের ছেলে আমজাদ শেখ(৫৫), কাউলজানির কালাম শেখের ছেলে মাহবুব শেখ (১৯), দক্ষিণ চর পাঁচুরিয়ার মৃত মাইনদ্দিনের ছেলে আঃ সালাম(৫০), দেলুনদী গ্রামের মৃত হারান সরদারের ছেলে গনি সরদার(৫৫), আপান কাজীর ছেলে দুলাল কাজী(৪০), জয়দার খাঁর ছেলে আক্কাস খাঁ(৩৫), কাউলজানি গ্রামের আলিমুদ্দিন মন্ডলের ছেলে সালাম মন্ডল(৫২), তেনাপঁচা গ্রামের মোহন মন্ডলের ছেলে জিয়া মন্ডল(৩০), সামাদ মন্ডলের ছেলে জহুরুল মন্ডল(২৮), মৃত হোসেন শেখের ছেলে আজিজ শেখ(৬০), উত্তর চর পাঁচুরিয়ার সামাদ মুন্সি ওরফে আকাইলে মুন্সির ছেলে ইব্রাহীম মুন্সি(৪০), তেনাপঁচার নিজাম বেপারীর ছেলে রফিক বেপারী(৩৫), দৌলতদিয়া নূরু মন্ডলের পাড়ার আমেদ আলী সরদারের ছেলে পান্টু সরদার(৪০), তেনাপঁচার মৃত জামাল শেখের ছেলে লতিফ শেখ(৫৫), কাউলজানির গনি মোল্লার ছেলে শহিদ মোল্লা(৪০) এবং তেনাপঁচার মৃত আকবর শেখের ছেলে সাঈদ শেখ(৫০)।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গোয়ালন্দ উপজেলার ত্রাস হিসেবে পরিচিত নজরুল ইসলাম মন্ডল বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। সে এলাকার সন্ত্রাসী ও সর্বহারাদের প্রশ্রয়দাতা হিসেবেও পরিচিত। স্থানীয় রাজনীতিতে বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসী ও সর্বহারাদের ব্যবহার করে ব্যবসা-বাণিজ্য, টেন্ডারবাজী নিয়ন্ত্রণ, দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় পরিবহনে চাঁদাবাজীসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। সে বিগত দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী আতর আলী সরদারের সমর্থনে অবস্থান নিয়ে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। উক্ত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী(আওয়ামী লীগের মনোনীত) হাফিজুল ইসলাম বিজয়ী হয়। নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকেই সে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য পরাজিত প্রার্থী আতর আলী সরদারের সাথে মিলিত হয়ে গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে। বিজয়ী প্রার্থী হাফিজুল ইসলামকে শায়েস্তা করার জন্য নজরুল ইসলাম মন্ডল ও পরাজিত প্রার্থী আতর আলী সরদার বিভিন্ন কৌশল ও ছক তৈরী করে। বিজয়ী চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম আমাদের আত্মীয় হওয়ায় এবং আমরা তার সমর্থক হওয়ায় তারা আমাদের প্রতিও ক্ষিপ্ত থাকে। ১৪/১০/২০১৯ইং তারিখ বেলা ৩টায় গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে দেবগ্রাম ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন দেবগ্রাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। উক্ত সম্মেলনে দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতর আলী সরদার এবং বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাফিজুল ইসলামসহ দেবগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও কর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন। সন্ত্রাসী নজরুল ইসলাম মন্ডলের কুপ্ররোচনায় সম্মেলন বানচাল করার উদ্দেশ্যে পরাজিত চেয়ারম্যান আতর আলী সরদারের বড় ছেলে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি বাবলু সরদার তার লোকজন নিয়ে সম্মেলন স্থলে আসে এবং সম্মেলনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দেবগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব খলিলুর রহমানের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়ে। সম্মেলন স্থলে চিৎকার চেঁচামেচি ও হৈচৈ শুরু হলে নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং নেতৃত্ব নির্বাচন প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু হয়। ওই সময় বাবলু সরদার তার লোকজন নিয়ে সম্মেলন স্থল থেকে চলে যায়। বাবলু সরদার সেখান থেকে চলে যাওয়ার পর সে তার পিতা আতর আলী সরদারও নজরুল ইসলামের সাথে শলাপরামর্শ করে। এরপর নজরুল ইসলাম মন্ডলের কুপ্ররোচনায় আসামীরা আতর আলী চেয়ারম্যানের বাজার থেকে আনুমানিক ২০০ গজ উত্তরে তিন রাস্তার মোড়ের উপর সংঘবদ্ধ হয়ে ধারালো দা, চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল ও লাঠিসোটাসহ অবস্থান নেয়। চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলামের কর্মী নিজাম উক্ত স্থান দিয়ে যাওয়ার পথে আসামীরা তাকে এলোপাতারীভাবে মারধর করে। রেজাউল করিম ওরফে আবু ডাক্তার উক্ত মারধরের খবর পেয়ে বিকাল সোয়া ৫টার দিকে ঘটনার বিষয়ে জানার জন্য উল্লেখিত স্থানে পৌঁছালে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী নজরুল ইসলাম মন্ডলের কুপ্ররোচনায় আতর আলী সরদারের হুকুমে বাবলু সরদার তার হাতে থাকা চাপাতি দিয়ে আবু ডাক্তারকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার মাথায় কোপ দেয়। এ সময় সে দৌড়ে পালানোর সময় মাটিতে পড়ে যায়। টোকন সরদার তার হাতে থাকা ধারালো দা দিয়ে আবু ডাক্তারের মাথায় এলোপাতারী কোপ মারে। অন্যান্য আসামীরা তাদের হাতে থাকা লাঠিসোটা দিয়ে তাকে এলোপাতারী মারপিট করে মারাত্মক জখম করে। আশপাশের লোকজনের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। এরপর তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
রেজাউল মোল্লা ওরফে আবু ডাক্তারের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তার পক্ষের লোকজন কাউলজানি গ্রামে প্রতিপক্ষের ৪জনের (সামাদ শেখ, সাইফুল ইসলাম, আব্দুল ছালাম ও আবুল কালাম) বসতবাড়ীতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করে।
এদিকে গতকাল ১৫ই অক্টোবর দুপুরে গোয়ালন্দের জামতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নিহত রেজাউল মোল্লা ওরফে আবু ডাক্তারের জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। দলীয় নেতাকর্মীসহ স্থানীয় লোকজন বহু মানুষ জানাযার নামাজে অংশগ্রহণ করেন। জানাযা শেষে আবু ডাক্তারের মরদেহ পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!