॥গোয়ালন্দ প্রতিনিধি॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় পদ্মা নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা ২টি ফেরী ঘাট বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। পানি উন্নয়ন বোর্ড সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে। ভাঙনের পাশাপাশি নদীতে প্রচন্ড স্রোত থাকায় ফেরী চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এতে ঘাটে যানবাহন আটকে লম্বা লাইন তৈরী হচ্ছে।
গতকাল ২রা অক্টোবর দুপুরে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, দৌলতদিয়ার ৬টি ফেরী ঘাটের মধ্যে ১ ও ২ নম্বর ঘাট বন্ধ রয়েছে। বাকী ৪ট ঘাট চালু থাকলেও প্রচন্ড স্রোতের কারণে পন্টুনে ফেরী ভিড়তে সময় লাগছে। মাঝে-মধ্যে ফেরীগুলো স্রোতের তোড়ে ভাটির দিকে সরে যাচ্ছে। ১ ও ২ নম্বর ফেরী ঘাটের সামনে রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে। ১ নম্বর ফেরী ঘাট বরাবর হাতেম ম-লের পাড়া ও নতুনপাড়া চোখের সামনে সব ভেঙে তলিয়ে যাচ্ছে। মানুষজন ঘর-বাড়ী ও জিনিসপত্র দ্রুত সরিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া ফেরি ঘাট থেকে মহাসড়কের প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নদী পারাপারের অপেক্ষায় থাকা যানবাহনের দীর্ঘ লাইন হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আবু আব্দুল্লাহ রনি জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটের ৪ কিলোমিটার নৌপথ পাড়ি দিতে সময় লাগে ১৫-২০ মিনিট। বর্তমানে সেখানে লাগছে প্রায় এক ঘন্টা। স্রোতের বিপরীতে চলতে না পারায় এক সপ্তাহ ধরে ৩টি ফেরী বসে রয়েছে। বাকী ১৩টি ফেরী দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। ভাঙনের ঝুঁকির কারণে ১ নম্বর ফেরী ঘাট গত সোমবার থেকে বন্ধ রয়েছে। তীব্র স্রোতের কারণে ২ নম্বর ঘাটের ফেরী ভিড়তে পারছে না। বাকী ৪টি ঘাট চালু থাকলেও তীব্র স্রোতের কারণে ৩ নম্বর ঘাটেও ফেরী ভিড়তে অনেক কষ্ট হচ্ছে। শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী রুটে ফেরী চলাচল ব্যাহত হওয়ায় অনেক যানবাহন দৌলতদিয়ায় আসছে। বাড়তি যানবাহনের চাপে ঘাটে যানজট দেখা দিয়েছে।
ঘাট সংলগ্ন সিদ্দিক কাজীর পাড়ার বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ঘর-বাড়ী সরিয়ে ফেলছে। কে কোথায় যাবে তার নির্দিষ্ট কোন ঠিকানা অনেকেরই অজানা। গ্রামের সিদ্দিক আলী ম-ল, আলী প্রামানিকসহ কয়েকজন বলেন, স্থানীয়দের থেকে শতাংশ প্রতি ৬০০ টাকা করে লিজ নিয়ে তারা বসতি গড়েছিলেন। এখন ঘর-বাড়ী ভেঙে ফেরী ঘাটের বিকল্প সড়কের পাশে রাখছেন। ৩-৪ দিনে প্রায় ৩০টি পরিবার চলে গেছে। যারা আছেন তারাও যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
রাজবাড়ী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, রাজবাড়ীর পদ্মা নদীর তীরবর্তী ৮৬ কিলোমিটারের মধ্যে ২৮ কিলোমিটার ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে ২১ কিলোমিটার ভাঙনের কবলে পড়েছে। এই ২১ কিলোমিটার রক্ষায় ১৮০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। ফেরী ঘাট রক্ষায় জরুরী ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।